নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভুট্টা চাষ। কৃষকরা বলছেন, ধান চাষে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন এবং এতে ধানের চেয়ে দ্বিগুণ লাভ হচ্ছে বলে বলছেন তারা।

উপজেলার পানবাড়ি গ্রামের কৃষক রুহুল আমীন বলেন, বাজারে বর্তমান এক মণ (৪০ কেজি) ধান ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভুট্টার বাজারদর ১ হাজার ১০০ টাকার বেশি। সব মিলিয়ে বোরো ধানের উৎপাদন খরচ পড়ে মণপ্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। কেননা ২৫ শতাংশ (এক দন) জমিতে ধান হয় ১০ থেকে ১২ মণ। এতে ধান চাষে লাভ তো দূরের কথা, আবাদের খরচও ওঠে না। আর একই জমিতে ভুট্টা চাষ করলে ফলন হয় ২৮ থেকে ৩৫ মণ। সব মিলিয়ে খরচ হয় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা। এতে লাভ হয় দ্বিগুণ টাকা।

পড়তে পারেন: ভুট্টার অধিক ফলনশীল কয়েকটি জাত সম্পর্কে জানুন

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২১ হাজার ২৬০ হেক্টর চাষযোগ্য আবাদি জমি রয়েছে। এর মধ্যে এবার ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান ও ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম পরিমাণে বোরো ধান চাষ হয়েছে। ধান চাষের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বছর বছর কমে যাচ্ছে। অন্যদিক ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে বলছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।

এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোরো ধান চাষে সেচ খরচ বেশি। অপরদিকে ভুট্টার বাজারদর ভালো। তাই কৃষকেরা বোরো বীজতলা তৈরি করার পরও ভুট্টা চাষ করছেন।

পড়তে পারেন: ভুট্টার চারা গাছের কাটুই পোকা দমনে যা করবেন

বুড়িমারী ও জোংড়া ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় তিন ভাগ খেতে কৃষকেরা ভুট্টার বীজ বপন করেছেন। আর এক ভাগ খেত ফাঁকা রেখেছেন। এ জমি তামাক ও ফাঁকা জমিতে বোরোসহ অন্য ফসল চাষের জন্য রাখা হয়েছে। তবে কুচলিবাড়ী ইউনিয়নের পানবাড়ি গ্রামসহ ছয়টি গ্রামে কোথাও বোরো বীজতলা লাগানোই হয়নি।

আব্বাস মিয়া বলেন, দুই ফসলি জমি হিসেবে আগাম তামাক লাগানো হয়েছে। এরপর ভুট্টা লাগাবেন। আগে ভেবেছিলেন বোরো চাষ করবেন। কিন্তু খরচ বেশি হবে ভেবে সে চিন্তা বাদ দিয়েছেন।

পড়তে পারেন: গমের চারা কেটে বিক্রি করে বিঘায় পাচ্ছেন ১৮ হাজার

বাউরা গ্রামের কৃষক মামুন হোসেন (৩৫) বলেন, তাঁর যে জমি ছিল, সবগুলোতে গতবার বোরো চাষ করেছিলেন। তাতে খরচ বেশি। ফলনও বেশি একটা ভালো হয় না। আবাদের খরচও ওঠে না। এবার আর বোরো ধান চাষ করবেন না। সব জমিতে ভুট্টা লাগাবেন।

পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুর গফ্ফার বলেন, এই উপজেলার মাটি দোঁয়াশ মাটি। পানিধারণ ক্ষমতা কম। যেহেতু বোরো ধানে পানি বেশি লাগে তাই সেঁচ ঝামেলা রয়েছে। তাই কৃষকরা ভুট্টা চাষ করছেন। ধানের চেয়ে ভুট্টার দাম বেশি হওয়ায় সেদিকেই ঝুঁকছেন তারা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ