নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম হু-হু করে বেড়েই চলেছে। সেইসাথে বেড়েছে পশুখাদ্যের দাম। গবাদিপশুর খাদ্যের দাম ঠাকুরগাঁওয়ে বেড়ে যাওয়ায় সেখান কৃষকরা বাড়ন্ত গম গাছ কেটে পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন। এতে গমের চারা কেটে বিক্রি করে প্রতি বিঘায় ১৮ হাজার টাকা পাচ্ছেন। যেখানে গম বিক্রি করে পেতেন ৮-১০ হাজার টাকা।

বাড়তি ৮-১০ হাজার টাকার সুযোগে অনেক কৃষক খেত থেকে গমের চারা কেটে পশুখাদ্য হিসেবে তা বাজারে বিক্রি করতে শুরু করছেন। কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, এবার জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। এখন খেত থেকে বাড়ন্ত গমের চারা কেটে বিক্রি করা হলে গমের উৎপাদন আরও কমে যাবে।

পড়তে পারেন: মন্দার মুখে ফ্রান্সের গম রফতানি

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ও নেকমরদ এলাকায় গত বুধবার দেখা যায়, গমখেত এখন গমের শিষ বের হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু কৃষক কাস্তের টানে টানে কেটে চলেছেন মুঠি মুঠি বাড়ন্ত গমের গোছা। নেকমরদ এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, হালচাষ, বীজ রোপণ থেকে এ পর্যন্ত প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে প্রায় আট হাজার টাকা।

প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১০ মণ গম পাওয়া যাবে। সেই গম বিক্রি করে ১০–১১ হাজার টাকা হাতে আসতে পারে। কিন্তু এখন বাজারে গবাদিপশুর খাবারের সংকট রয়েছে। এ সময় এই চারা পশুখাদ্য হিসেবে বিক্রি করে প্রতি বিঘা জমি থেকে পাওয়া যাচ্ছে ১৭–১৮ হাজার টাকা। তাই তাঁর মতো অনেক গমচাষি এখন খেতের গম গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

পড়তে পারেন: গমের পাতা পোড়া রোগের সমাধান

গমচাষিরা বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে গম চাষে হালচাষ, বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ খরচ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ আট হাজার টাকার মতো খরচ হয়। কাঁচা গম বিক্রিতে লাভ হচ্ছে ছয়–সাত হাজার টাকা।

গতকাল বালিয়াডাঙ্গী বাজারে নছিমনবোঝাই কাঁচা গমগাছ বিক্রি করতে আসেন কুশলডাঙ্গী গ্রামের নওশাদ আলী। তিনি বলেন, রানীশংকৈল উপজেলার কুমোড়গঞ্জ এলাকার এক গমচাষির দুই বিঘা জমির গম তিনি কিনে নিয়েছেন। দুই বিঘা জমিতে কমপক্ষে তিন হাজার আঁটি গমগাছ পাওয়া যাবে। বাজারে এখন প্রতি আঁটি গমগাছ বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা। ৩০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে।

পড়তে পারেন: মজুদ থেকে গম বিক্রি করবে চীন

কাঁচা গমের আঁটি কিনতে এসেছিলেন গোয়ালগাড়ি গ্রামের রাইসূল আলম। তিনি বলেন, বাড়িতে তিনি ছয়টি ছাগল পালন করেন। আগে এলাকায় সেগুলো নিজেরা চড়ে খেত। এখন সব খেতেই ফসল থাকায় ছাগলগুলো চড়ে খেতে পারে না। তাই গমগাছ কিনতে এসেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে জেলায় গমের আবাদ হয় ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে ৪৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, কিন্তু চাষ হয়েছে ৪৫ হাজার ১৯২ হেক্টরে।

অধিদপ্তরের ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, জেলায় প্রতিবছর কমে যাচ্ছে গমের চাষ। এ মৌসুমে এমনিতেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। তার ওপর চারা কেটে বিক্রি করা হলে গমের উৎপাদন আরও কমে যাবে।

পড়তে পারেন: গম নিয়ে বিশ্ববাজারে নতুন সংকেত

এদিকে মস্কো ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান বিরোধের প্রভাবে গমের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠেছিল। তবে, সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে গমের দাম কমছে বলে খবর প্রকাশ করেছে বিজনেস রেকর্ডার।

ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রার (রুবল) বিনিময় মূল্য কমায় গত সপ্তাহে বাজারদরে নিম্নমুখী প্রবণতা তৈরি হয়। কৃষিপণ্যের বাজার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইকার জানায়, কৃষ্ণ সাগরীয় বন্দরগুলোয় ফেব্রুয়ারিতে সরবরাহের জন্য বোঝাইকৃত ১২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রোটিনসমৃদ্ধ রাশিয়ান গমের দাম ফ্রি অন বোর্ডে (এফওবি) টনপ্রতি ৩২৬ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম কমেছে ২ ডলার। বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বাড়ায় প্রভাব পড়তে পারে দেশেও।

পড়তে পারেন: ভারত থেকে গম আমদানি বেড়েছে, কমতে পারে দাম

পশ্চিমা দেশগুলোর আশঙ্কা, রাশিয়া তার প্রতিবেশী দেশটিতে হামলা ও দখলদারিত্ব চালাতে পারে। কিন্তু মস্কো বলছে, ইউক্রেনে হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে নির্দিষ্ট দাবি না মেনে নিলে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অঘোষিত সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে রাশিয়া। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখনই শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে রাশিয়ান গমের দাম বেড়ে যায়। তবে সর্বশেষ সপ্তাহে দাম কমেছে।

গত বছরের জুলাইয়ে রাশিয়ায় ২০২১-২২ বিপণন মৌসুম শুরু হয়েছে। মৌসুমের এখন পর্যন্ত দেশটির গম রফতানি ৪০ শতাংশ কমেছে। মূলত আবাদ কমে যাওয়ায় এবং উচ্চ শুল্কহারের কারণে রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি বছর রাশিয়ায় গম রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/ এমএইচ