মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সপ্তাহখনেক আগে থেকে শুরু হওয়া ঘন কুয়াশায় আলুর ছত্রাক জনিত রোগ ‘লেট ব্লাইট’ ও বোরো ধানের বীজতলায় ‘কোল্ড ইনজুরি’র শঙ্কায় রাজশাহীর কৃষকরা। চাষিরা বলছেন, এভাবে মাসখানেক চলতে থাকলে ফসলে বড় ধরণের ক্ষতি হতে পারে।

কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ধানের চারা কুয়াশার হাত থেকে রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে ঢেঁকে রাখা হচ্ছে। আবার আলুখেতে ছত্রাকনাশক ছিটাচ্ছেন চাষিরা। নতুনভাবে রোপনকৃত আলুর জমিতে কেউবা আবার আগাছানাশক ছিটাচ্ছেন।

কৃষকেরা জানান, রাজশাহীতে তেমন শীত পড়েনি। সারারাত ঘন কুয়াশা পড়ছে। সকাল ১০ টা পর্যন্ত কুয়াশা থাকলেও দুপুরের দিকে রোদ বের হচ্ছে। একারণে এখোনো ক্ষেতে ক্ষতি লক্ষ করা যায়নি। অপরদিকে পেঁয়াজের আগামরা রোগ দেখো দিয়েছে। পেঁয়াজে ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষকরা।

রাজশাহীর পবা উপজেলার সিলিন্দার নতুন ফুদকি পাড়া এলাকায় ৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন মামুন হোসেন। আজ বুধবার (০৯ ডিসেম্বর ২০২০) জমিতে আগাছানাশক ছিটাচ্ছিলেন তিনি।

মামুন হোসেন এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘৬ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। কিছু জমিতে গাছ ভালোভাবে বের হয়ে গেছে। কিছু জমিতে গাছ বের হবে।গাছ বের হওয়ার আগে ১ বিঘা জমিতে আগাছানশক দিচ্ছি। সকালে কুয়াশা পড়ছে ব্যপক। দিনে রোদ বন্ধ হয়ে গেলেই বিপদ। এখন হয়ত কিছু হচ্ছে না। সারাদিন রোদ বের না হয়ে কুয়াশা পড়তে থাকলে আলুর গাছে পচন-ধ্বসা রোগ হবে। সেই ভয়ে আছি। নিয়মিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করছি।’

একই এলাকার শহিদুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘দীর্ঘ ২০ বছর ধরে আলু চাষ করছি। বর্তমানে ৫ বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি। আলুর মড়ক রোগ হয় কুয়াশার কারণে। যদি কুয়াশার মাত্রা ও সারাদিন স্থায়ী থাকে তাহলে আলুতে পচন রোগ ধরে। এজন্য বাজারে বিভিন্ন ছত্রাকনাশক পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করি। আর আল্লাহ যদি গজব দেয় তাহলে তো আর ছত্রাকনাশক কাজ হবে না। তারপরেও একটা চিন্তা কাজ করে। ’

তিনি আরোও বলেন,‘ দিনদিন আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। কৃষিতে তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। আমি কৃষি কর্মকর্তার সাথে কথা বলে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে থাকি। তাছাড়া দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আবাদ করি। ফসলে ক্ষতি হলে কৃষকদের দেখার কেউ নাই। বরং আগে থেকেই সতর্ক হওয়া দরকার।’

আরেক চাষি খাদেমুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার ২৪.কমকে বলেন, ‘ধানের বীজতলা ঢেঁকে দিয়েছি। আর অন্য বীজতলায় নিয়মিত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করছি। পেঁয়াজের আগামরা শুরু হয়েছে। ডিলারের কাছে গিয়ে ছত্রাকনাশক আর সার নিয়ে এসে দিতে হবে। খুব চিন্তায় আছি।’

সিলিন্দা বাজার এলাকায় শফিক আহম্মেদ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, ‘৫ বিঘা জমিতে কপি চাষ করেছিলাম। দাম পাইনি। আবার কুয়াশা শুরু হয়েছে। ৪ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। আলুর বয়স ৩০ দিন পার হলো। এখন এই কুয়াশা যদি মাসব্যাপী থাকে তাহলে আলুর ক্ষতি হবে। ছত্রাকনাশক দিচ্ছি। বাঁকিটা আল্লাহ ভরসা।’

পবা উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন,‘ পবা উপজেলায় আলুর গাছ তেমন বড় হয়নি। কুয়াশা পড়ছে, এসময় জমির অবস্থা বুঝে ৭ দিন অথবা ১৫ দিন পরপর ম্যানকোজেব, ইন্ডোফিল এমসহ ছাত্রাকনাশাক ব্যবহার করছে ভয়ের কারণ থাকবে না। মাসব্যপী যদি কুয়াশা থাকে আর গুড়ি গুড়ি বৃষি হয় তাহলে সমস্যা হতে পারে। তবে, ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে।’

রাজশাহীর পবা, তানোর, বাগমারাসহ প্রায় প্রতিটি উপজেলার কৃষকেরা শঙ্কায় আছেন। বোরো ধানের নতুন নতুন বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেঁকে দেওয়া ছাড়াও ছত্রাকনাশক ব্যবহার করছেন।

ধানের বীজতলা ও আলুর ক্ষতি নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা জানতে চাইলে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, এখন কুয়াশা পড়ছে তবে সারাদিন থাকছে না। দুপুরে কুয়াশা কেটে গিয়ে সূর্যের আলো পাওয়া যাচ্ছে। যদি সারাদিন কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে তহলে বড় ধরণের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আর শীত আরো বেশি আকারে পড়তে শুরু করছে বোরো ধানের বীজতলার ক্ষতি হতে পারে। এখনো সেভাবে শীত পড়েনি।

বাজারে অনেক ভালো মানে ছত্রাকনাশক রয়েছে। ম্যানকোজেব, ইন্ডোফিল জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করছে সমস্যা হওয়ার কথা না। রাজশাহীতে বাণিজ্যিকভাবে প্রচুর আলু চাষ হয়ে থাকে। আর চাষিরাই জানে কীভাবে কখন আলুতে কী দিতে হবে। তারা অনেক অভিজ্ঞ। কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা কৃষকদের সব সময় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ