ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: ধান-চালের রাজ্যে খাটো খাটো গাছে এখন আমের রাজত্ব। অধিক লাভজনক হওয়ায় ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বাগান। উত্তর জনপদের খাদ্যভান্ডার খ্যাত বরেন্দ্র অঞ্চলের নওগাঁ জেলা আম উৎপাদনে দেশজুড়ে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছে।

চলতি মৌসুুমে অতীতের সব রেকর্ড ভাঙবে বলে ধারণা করছেন কৃষি বিভাগ। কৃষকরা বলছেন, বিশ্ববাজারে রপ্তানী বৃদ্ধি করতে পারলে আরও লাভবান হবেন। আম গবেষণা কেন্দ্র ও সংরক্ষাণাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তারা

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২১-২০২২ মৌসুমে নওগাঁয় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এরমধ্যে পোরশা উপজেলায় ১০ হাজার ৫২০, সাপাহারে ১০ হাজার, পত্মীতলায় ৮ হাজার ৮৬৫, নিয়ামতপুরে ১ হাজার ১৩৫, মহাদেবপুরে ৬৮০, ধামইরহাটে ৬৭৫ হেক্টর। এছাড়া বদলগাছীতে ৫২৫, নওগাঁ সদরে ৪৪৫, মান্দায় ৪০০, আত্রাইয়ে ১২০ ও রানীনগরে ১১০ হেক্টর। এ পরিমাণ জমি থেকে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এবার প্রায় ১ হাজার ৮৪২ কোটি ১৭ লাখ টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা

পড়তে পারেন: এবার বিদেশে দ্বিগুণ আম রপ্তানির পরিকল্পনা বাংলাদেশের

সরেজমিনে বিভিন্ন বাগান ঘুরে দেখা গেছে, মৌ মৌ ঘ্রাণে মুখরিত বিস্তীর্ণ এলাকা, মুকুলের ভারে গাছ নুয়ে পড়ছে। আবার কোথাও কোথাও মুকুল থেকে আমের গুটি আসতে শুরু করেছে। পরিচর্যার পাশাপাশি বাম্পার ফলনের আশায় বুক বাঁধছেন চাষিরা। আর বাগানের দরদাম হাকছেন ব্যবসায়ীরা। ভরা মৌসুমে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন চাষিরা। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। কৃষকদের সঠিক পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।

জেলার উপরশিশা গ্রামের আবদুল লতিফ, আইহাই গ্রামের মাহফুজুর রহমান, বাবুল হোসেন, বাহাদুরপুর গ্রামের মারফত রহমানসহ ৪০-৫০ জন আমচাষি জানান, আম্রপালি, বারি-৪, গৌড়মতি, নাগফজলি, ফজলি, আর্শ্বিনা, হিমসাগর, গোপলভোগ, লেংড়া ও খিরশাপাত জাতের আম চাষ করেছেন। পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই এর আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কীটনাশক স্প্রে ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। অধিক লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছরই আম চাষ বাড়ছে বলেও জানান তারা।

পড়তে পারেন: চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে আম উৎপাদনে শীর্ষে নওগাঁ

মহাদেবপুুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুন চন্দ্র রায় জানান, জমি ভাড়া বাদে প্রতি হেক্টর চাষে খরচ ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকা; ফলন পাওয়া যায় ১২ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। বড় কোনো প্রাকৃকিত দুর্যোগ না ঘটলে উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের প্রত্যাশা করছেন তিনি।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের জানান, গত বারের চেয়ে জেলায় এবার ৩ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে বেশি আম চাষ হয়েছে। এ মৌসুমে বড় পরিসরে রপ্তানীর চিন্তা করা হচ্ছে।

তিনি জানান, অত্যান্ত সুস্বাদু হওয়ায় পাশ্ববর্তী রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ব্যবসায়ীরা নওগাঁ এসে বাগান কিনে তাদের জেলার আম বলে প্রচারের অভিযোগ করেন তিনি। আম গবেষণা কেন্দ্র, সংরক্ষাণাগার স্থাপন ও বিশ্ববাজারে রপ্তানী বৃদ্ধি করতে কৃষি বান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কমানা করেছেন নওগাঁর লাখো কৃষক।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ