ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় ড্রাগন ফল চাষের শুরু হয় প্রায় আট বছর আগে। সময়ের পরিক্রমায় অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন এ বিদেশি ফলের চাহিদাও বেড়েছে বহুগুণ।আবহাওয়া ও মাটি অনুকূলে থাকায় নওগাঁয় ড্রাগন চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। ফলে বাড়ছে বাগান।

জেলার রানীনগর উপজেলার বিভিন্ন বাগানে উৎপাদিত ড্রাগন ফল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হচ্ছে। আর ফল বিক্রি করে বেশি লাভ হওয়ায় উৎসাহিত হচ্ছেন অন্যরাও। ফলে দিন দিন এ ফলের আবাদ বাড়ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে বাগানের পরিসর। উপজেলার প্রায় অর্ধশত চাষি ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন।

মুখরোচক, রসালো, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে উপকারী ফল ড্রাগন।ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় এই ফল ব্যাপক জনপ্রিয়। দেশে এই বিদেশি ফল চাষে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

ড্রাগন ফলের গাছ ২৫ থেকে ৩০ বছর বেঁচে থাকে। বছরে ৬ মাস ফল দেয়। সাধারণত মে মাসে গাছে ফল ধরতে শুরু করে এবং ৩৫ দিনের মধ্যে ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে এই ফল বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব।

আরোও পড়ুন: ড্রাগন ফলের ৭টি উপকারিতা

নওগাঁয় কমলা চাষে আগ্রহী করতে কৃষকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রানীনগর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় প্রায় ৫ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফল চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ড্রাগনের চারা সরবরাহ থেকে শুরু করে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। জমিতে বার বার একই ফসল চাষ করার অভ্যাস থেকে কৃষকদের ফিরিয়ে এনে অধিক লাভজনক ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি অফিস কাজ করে আসছে।

এ ফসলগুলো চাষ করলে একদিকে কৃষকরা যেমন অল্প খরচে স্বল্প পরিশ্রমে অধিক লাভ করতে পারেন, অপরদিকে জমির উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পায়। উপজেলার অনেক তরুণ পড়ালেখার পাশাপাশি লাভজনক এ ফল চাষের দিকে ঝুঁকছেন।

রানীনগর উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের রঞ্জনিয়া গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা মো. নাইস বলেন, পড়ালেখা শেষ করে চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না দৌড়ে নিজেই কিছু করার প্রত্যয় থেকে ৯ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান করেছি। ড্রাগন চাষ করে বর্তমানে অনেক লাভবান হয়েছি। স্থানীয় কৃষি শ্রমিকরা বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে দেশে ড্রাগন ফলের বাজার এখনোও সেভাবে গড়ে ওঠেনি।

তিনি বলেন, সরকার যদি এই ফল বিদেশে রপ্তানি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তাহলে আগামীতে ড্রাগন ফল চাষিরা অনেক লাভবান হবেন। প্রতি কেজি ড্রাগন বাজারে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

রানীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ২০১২ সাল থেকে উপজেলাতে ড্রাগন ফল চাষের নীরব বিপ্লব শুরু হয়। এখন ড্রাগন উপজেলার কৃষকদের কাছে একটি লাভজনক ফলের নাম। প্রতিদিনই কৃষকরা কৃষি অফিসে এসে ড্রাগন ফল সম্পর্কে জেনে যাচ্ছেন।

এছাড়া বাগান তৈরিতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চারা সরবরাহ থেকে শুরু করে সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ড্রাগন বাগান মালিকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ প্রদান ও খোঁজখবর রাখছি।

নওগাঁয় ড্রাগন চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা, বাড়ছে বাগানের পরিসর। নওগাঁ জেলা ছাড়াও সারাদেশেই শুরু হয়েছে এ ফলের চাষ। রাজশাহীর তানোর, নাটোর, বাগমারাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের উপায় হিসেবে শুরু হয়েছে ড্রাগন চাষ।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ