ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় চতুর্থ দফার বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। কমতে শুরু করেছে প্রধান দুটি নদী আত্রাই ও ছোট যমুনা পানির। কিন্তু নদীর পানি কমলেও বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি খুব ধীরগতিতে নামায় চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

প্রতিদিনই নিমজ্জিত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের নিমাঞ্চলগুলো। এখনো প্রায় শতাধিক গ্রামের রাস্তা-ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে। এতে করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লাখো মানুষকে। এছাড়া প্রতিদিনই নতুন নতুন নিমাঞ্চলগুলো পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: নওগাঁয় বন্যায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত

সম্প্রতি প্রবল বৃষ্টিপাত ও উজানের নেমে আসা ঢলের কারণে নওগাঁ প্রধান দুটি নদীসহ ৭টি নদীতে আশঙ্কাজনক হারে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। চতুর্থ বারের মতো বন্যার কবলে পড়ে জেলার রাণীনগর, আত্রাই ও মান্দা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।

পূর্বের বন্যায় দীর্ঘদিন যাবত বন্যাকবলিত এলাকার রাস্তা-ঘাট পানির নিচে থাকায় তা ব্যবহারের অনুপযোগি হয়ে পড়ে এরপর চতুর্থ দফা বন্যার পানিতে আবার সেই এলাকাগুলো নতুন করে পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। যার কারণে চলাচলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষদের।

বর্তমানে চতুর্থ দফা বন্যার পানিতে রাণীনগর উপজেলার শলিয়া, শফিকপুর, কৃষ্ণপুরসহ কয়েকটি গ্রাম, আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ, সমসপাড়া, কাশিয়াবাড়ি, চকশিমলা, বুড়িগঞ্জহাট, হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের চকশিমলা, বড়শিমলা, সন্যাসবাড়ি, কালিকাপুর ইউনিয়নের ২৫গ্রামের লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের দমদমা, ঘোষপাড়া, আমপুর, দাঁড়িয়াগাথী, সিংসাড়া, পাঁচুপুর ইউনিয়নের বাঁকিওলমা, কাঁন্দওলমা, গোপালবাটি, মধ্যবোয়ালিয়া, জয়নাথপুর, মধুগুড়নই, পাঁচুপুরসহ ৮ইউনিয়নের ২শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এছাড়া মান্দা উপজেলার কালিকাপুর, তেতুলিয়া ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম বর্তমানে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।

হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুস শুকুর সরদার জানান, এবারের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের বন্যায় উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে আমার ইউনিয়নটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। তারা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং ত্রাণ তৎপরতা সচল রাখতে সকলের প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: নওগাঁয় বন্যায় ভেসে গেছে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার মাছ

রাণীনগর উপজেলার শলিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুজ্জামান বলেন, এক বন্যার পানি শুকাতে না শুকাতেই আরেক বন্যার পানিতে ডুবে গেছে গ্রামের রাস্তাঘাটসহ সব কিছু। প্রতিদিনই নিত্য প্রয়োজনীয় কাজকর্ম সম্পন্ন করতে শত শত মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এমনিতে তো গ্রামীণ রাস্তাগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ তার উপর বন্যা। তাই পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা-ঘাটগুলো দ্রুত সংস্কার করার অনুরোধ রইলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি।

নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাকসুদুল আলম এগ্রিকেয়ার.কমকে বলেন, এক বন্যার পর আরেক বন্যা এসে হাজির। আমরা ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা-ঘাটের কোন কাজই করতে পারিনি। আশা রাখি চতুর্থ দফা বন্যার পানি নেমে গেলে দ্রুত গ্রামীন রাস্তা মেরামত কিংবা সংস্কার করার কাজ শুরু করবো বলে জানান তিনি।

এগ্রিকেয়ার / এমবি