নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নওগাঁর আত্রাই নদীর পানিতে তিন উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে । পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি জায়গায় ভেঙে জেলার রানীনগর, আত্রাই ও মান্দা উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সেইসাথে এসব এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে তিন উপজেলার ২৭২ টি পুকুরের ৭২ হেক্টর জমিতে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর।

জানা গেছে, আত্রাই উপজেলার কয়েকটি স্থানে সড়ক ভেঙ্গে গিয়ে মান্দা-আত্রাই আঞ্চলিক সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে যায়। মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর উভয় তীরের নুরুল্লাবাদ উত্তরপাড়া, জোকাহাট, চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে। এতে উপজেলার কমপক্ষে ৯টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় জেলায় ৪ হাজার ৪৭ হেক্টর জমির ধান ও শাকসবজি নিমজ্জিত হয়েছে। এদিকে ডুবে যাওয়া পুকুরের সংখ্যা বাড়ছে। বাঁধের ৭টি স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে তিন উপজেলার ২৪২ টি পুকুরের ৬৮ হেক্টর জমিতে চাষ হওয়া মাছ ভেসে যায়। সেই সংখ্যা বেড়ে এখন ২৭২ টি‘তে দাঁড়িয়েছে।

নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, ‘উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে আত্রাই নদী, ফকির্নি ও ছোট যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৯টি স্থানে ও বেড়িবাঁধের ৭টি স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে তিন উপজেলার ২৭২ টি পুকুরের ৭২ হেক্টর জমিতে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।’

ক্ষতিগ্রস্থ মাছ চাষিদের সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারি কোন প্রণোদনা বা আর্থিক বরাদ্দ নেই। মৎস্য অধিদপ্তর থেকে কোনদিনই ক্ষতিগ্রস্থ মাছচাষিদের সহায়তার রেকর্ড নেই। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে কোন প্রণোদনা বা সহায়তা আসে তাহলে আমরা তাদের কাছে বন্টন করে দিব।’

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, গত দুই দিনে জেলায় ৪ হাজার ৪৭ হেক্টর জমির ধান ও শাকসবজি নিমজ্জিত হয়েছে। এপর্যন্ত ৩৩২৯ হেক্টর আউশ, ৩৭৬ হেক্টর রোপা আমণের বীজতলা, ২০০ হেক্টর বপণ আমণ, ৫০ হেক্টর রোপনকৃত আমণ, ১১ হেক্টর মরিচ, ১৪৭ হেক্টর সবজি এবং ৮১ হেক্টর পাটসহ সর্বমোট ৪০৪৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যেহেতু নদীর পানি কমতে শুরু করেছে এতে পানি নেমে গেলে ক্ষতির পরিমান অনেকাংশে কমে আসবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা

এদিকে মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবদুল হালিম এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, মাছচাষিদের সহযোগিতার জন্য আলাদা কোন তালিকা নেই। আমরা ইতোমধ্যে ৪ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি

তিনি আরো বলেন, বিষ্্নুপুর ইউনিয়নের মানুষ বেশি ভোগান্তিতে আছে। সেখানে বিশুদ্ধ নিরাপদ পানির জন্য ২ টি নলকূপসহ বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে । বন্যাকবলিত এলাকার মানুষদের তালিকা করে ত্রাণের আওয়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে। জেলায় আরো ত্রাণের চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আমাদের ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।