ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁয় চলতি বন্যায় মান্দা, আত্রাই, রানীনগর ও সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় ১৪ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

ইতিমধ্যে বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ১১০ মেট্রিক টন চাল ও ৩ হাজার ৯৪৫ ব্যাগ শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ সহায়তার জন্য আরও ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কামরুল আহসান।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই পানি কমতে শুরু করলেও আজ শুক্রবারেও পানি কমা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোতবাজার পয়েন্টে পানির উচ্চতা ৬৩ সেন্টিমিটার কমেছে এবং নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজ পয়েন্টে ৪ সেন্টিমিটার কমেছে।

আত্রাই নদের পানির উচ্চতা কমে আজ দুপুর ১২টায় মান্দার জোতবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজ পয়েন্টে ছোট যমুনার পানি এখনো বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আরোও পড়ুন: নওগাঁয় বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বাড়ছে পানি

নদীর পানির উচ্চতা কমতে শুরু করলেও বাঁধভাঙা পানিতে জেলার নিম্নাঞ্চলের যেসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে, সেখানে এখনো ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে মানুষ। এখনো পানিবন্দী হয়ে রয়েছে মান্দা ও আত্রাই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। বাঁধ, সড়ক, উঁচু স্থানসহ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। সেখানে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির সংকট ও স্যানিটেশনের সমস্যা প্রকট। এর পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে বন্যাদুর্গত মানুষ।

এদিকে শহরের সুপারিপট্টি, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) কার্যালয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নওগাঁ ব্যাটালিয়নের আবাসিক এলাকা ও পার-নওগাঁ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। ছোট যমুনা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে নওগাঁ শহর রক্ষা বাঁধের আউটলেট (শহরের পানি বের করে দেওয়ার নালা) দিয়ে পানি ঢুকে এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছে।

আত্রাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবাদুল বলেন, নদীর পানি কমে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে উপজেলার যাত্রামূল ও আহসানগঞ্জ এলাকায় আত্রাই নদীর বাঁধের ভাঙন দিয়ে পানি ঢোকার প্রবাহ কিছুটা কমেছে। নিম্নাঞ্চলে চলনবিলের দিকে পানি নেমে যাওয়ায় আজ সকাল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও হাটবাজার পানির নিচে রয়েছে।

আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আক্কাস আলী প্রামাণিক বলেন, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মানুষ পানিবন্দী হয়ে থাকলেও দুর্গত মানুষ পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে না। সরকারি বরাদ্দ থেকে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে কিছু ত্রাণ পেলেও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ত্রাণ সহায়তা দিতে পারছে না। কারণ, নওগাঁ-৬ (রানীনগর ও আত্রাই) আসনের উপনির্বাচনের কারণে প্রশাসন থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কিংবা ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ সহায়তা বিতরণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে ত্রাণের যে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, সেটা পর্যাপ্ত নয়।

আরোও পড়ুন: নওগাঁয় বন্যায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত

নওগাঁয় মোটা চালের সংকট, বেড়েছে চিকন চালের দাম

নওগাঁ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান জানান, আত্রাই নদের পানি কমে জেলার সব পয়েন্টেই এখন বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ছোট যমুনার পানিও কমেছে। তবে এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানের পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় আবার বৃষ্টিপাত না হলে আগামী চার-পাঁচ দিনে নিম্নাঞ্চলের অনেক এলাকা থেকে পানি নেমে যাবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা কামরুল আহসান বলেন, চলতি বন্যায় জেলার মান্দা, আত্রাই, রানীনগর ও সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় ১৪ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে ১১০ মেট্রিক টন চাল ও ৩ হাজার ৯৪৫ ব্যাগ শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ সহায়তার জন্য আরও ২০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, বন্যায় ৫ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে রোপা আমন ৫ হাজার ৪১১ হেক্টর ও ৯৬ হেক্টর জমির সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।#

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ