ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: সবজি এলাকা হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁ। চলতি বছরে জেলায় ১৫ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

জেলার সদর উপজেলা, বদলগাছী, মহাদেবপুর ও মান্দার কিছু অংশে সবজির আবাদ হয়ে থাকে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এবার কৃষকরা সবজি উৎপাদন করলেও পাচ্ছেনা ন্যায্যমূল্য। লাভের একটি অংশ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বভোগীদের পকেটে।সূত্রমতে এ বছর প্রায় ১৫ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে।

সবজি একটি পচনশীল দ্রব্য। জেলায় সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নাই। প্রতিদিন জমি থেকে সবজি তুলে প্রতিদিন বিক্রি করেন চাষীরা। তাই দাম যেটাই হোক না কেন সে দামেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে হয় তাদের। এছাড়া কৃষকরা জমি থেকে সবজি উঠানোর পর ভাল দাম পাওয়ার জন্য সরাসরি ঢাকা বা অন্য কোন জেলায় বাজারজাতের কোন ব্যবস্থাও নাই। বাজার ঘুরে দেখা গেছে- ফুলকপি ৪-৫ টাকা, বাঁধাকপি ১০-১৫ টাকা, সিম ৮-৩০ টাকা, গাজর ১০-২০ টাকা, বেগুন ১৫-২০ টাকা, আলু ১০-২০ টাকা কেজি এবং টমেটো ২০-২৫ টাকা কেজি।

নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক ময়নুল হক বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে লাউ ও ১০ কাঠা জমিতে সিমের আবাদ করেছেন। জমিতে হালচাষ, সার ও ঔষধ এবং মাচা করতে লাউয়ে ৭ হাজার টাকা এবং সিমে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। শনিবার নওগাঁ কাঁচা বাজারে ৩০ পিস লাউ ও এক মণ সিম যান। প্রতিপিস লাউ ১০ এবং সিম ১০ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন। অথচ ওই সবজি পাইকাররা বিক্রি করছেন লাউ ২০/২৫ টাকা এবং সিম ২৫/৩০ টাকা। বাজারে নিয়ে যাওয়ার পর দাম যেটাই হোক না সে দামেই আমাদের বিক্রি করতে হয়। কারণ সবজি পচনশীল দ্রব্য। সেটা তো বাড়ি ফেরত নিয়ে আসা যায় না।’

অনন্তপুর গ্রামের কৃষক মখলেছুর রহমান বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে কাতিশাল সিম চাষে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৫ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। তবে লাভ না হলেও লোকসান হবেনা। কারণ হচ্ছে প্রথম দিকে সিমের আমদানি কম ছিল, প্রতিকেজি প্রায় ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন ৮-১২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এখন আমদানি বেশি হওয়ার কারণে দামও কম হচ্ছে।’

ধোপাইপুর গ্রামে কৃষক জয়নাল হোসেন বলেন, ‘বাজারে সব ধরনের সবজির আমাদিন বেশি হওয়ার কারণে সবজির দাম কমে গেছে। প্রথম দিকে যে বেগুন ৭০-৮০ টাকা কেজি ছিল; সে বেগুন এখন ১৫-২০ টাকা কেজি। এক সময় পাটের আবাদ করতাম। পাটে যখন লোকসান হতে শুরু করল গত ৮ বছর থেকে সবজির আবাদ শুরু করেছি। কিন্তু এখন সবজিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে।’

নওগাঁ সদর উপজেলার চকআতিতা বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘তারা তিনজন মিলে ব্যবসা করেন। চকআতিতা বাজার থেকে সবজি সংগ্রহ করে রাজশাহী ও কুমিল্লাসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করেন। দেড়মাস আগে যেখানে প্রতিদিন ট্রাকে করে সবজি সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হয়। এখন সেখানে ১৫/২০ বস্তা করে সিম সহ অন্য সবজি সংগ্রহ হচ্ছে। কৃষকদের কাছ থেকে কাতিশাল সিম প্রতিকেজি ১৫-২০ টাকায় সংগ্রহ করে ৩০-৩৫ টাকা, লাল সিম ১২-১৫ টাকায় সংগ্রহ করে ২০-২৫ টাকা এবং খাটো সিম ৮-১০ টাকা সংগ্রহ ১৫-২০ টাকা বিক্রি হয়। যেহেতু এগুলো কাঁচা দ্রব্য কখনো বেশি দামে বিক্রি করলে বেশি লাভ হয়। আবার কখনো কম লাভ হয়।’

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ হাসান আলী বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেড়ে গেলে পণ্যের দাম কমে যায়। সবজির ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। বর্তমানে বাজারে সবধরনের সবজির আমদানি হয়েছে। এ কারণে দাম তুলনামুলক কম। তবে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেলেও মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা (ফড়িয়া) দাম পাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘সমবায়ের মাধ্যমে কৃষকরা যদি সরাসরি ঢাকায় সবজি বিক্রি করেন তাহলে তারা ন্যায্যমূল্য পাবেন। এক্ষেত্রে আমরা ‘কৃষক গ্রুপ’ করার চেষ্টা করছি। যারা সরাসরি ঢাকায় সবজি সরবরাহ করবেন।’

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ