নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। উদ্ভাবিত এ নতুন ধানের একটি শীষের শাখা-প্রশাখায় একটি ধানের জায়গায় প্রায় ৯টি পর্যন্ত ধান পাওয়া যাচ্ছে। ফলে দ্বিগুণ ফলনের আশা করছেন গবেষকরা।

ধানের নতুন জাত উদ্ভাবনে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এর কৃষি অনুষদের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।  চলতি আমন মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মাঠে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের যৌথ গবেষণায় এই নতুন জাতের ধান উদ্ভাবনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। খরা ও বন্যাসহিষ্ণু ধানের জাতটি দ্বিগুণের বেশি ফলনশীল হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।

পড়তে পারেন: ধানের মাজরা পোকা দমনে ব্রি’র গুরুত্বপূর্ণ ৪ পরামর্শ

এই উচ্চফলনশীল ধানগাছটির আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এর কাণ্ড শক্ত ও মজবুত হওয়ার কারণে রোপণ থেকে শুরু করে ধান উত্তোলন পর্যন্ত পুরো মৌসুমজুড়ে গাছ হেলে না পড়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। গবেষকদের দাবি, ধানগাছের পাতা শেষ পর্যন্ত সবুজ থাকার ফলে ফলন ভালো হবে এবং গবাদি পশুর গুণগত খাদ্য চাহিদাও পূরণ হবে।

এই ধান গবেষণার সাথে যুক্ত ছিলেন উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশীদ, কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোমিনুর রহমান এবং উদ্ভিদ প্রজনন ও কৌলিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আরিফুজ্জামান। এই গবেষণায় আরো যুক্ত ছিলেন কৃষিতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনুর রশীদ, নূরী মারজান এবং উদ্ভিদ প্রজনন ও কৌলিতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সুমি সাহা।

পড়তে পারেন: সুগন্ধি ধানের দামে রেকর্ড, খুশি চাষিরা

উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশীদ জানান,  গবেষণাধীন এ উচ্চফলনশীল ধানের জাতটি আর কয়েক বছর রোপণ ও পর্যবেক্ষণ এর পরেই কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবেন। এতে করে কৃষকরা অধিক ফলন পাবেন এবং ধান উৎপাদন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরো জানান, কৃষিবান্ধব সরকার, কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সহযোগিতা পেলে এ রকম উচ্চফলনশীল ধানের জাত নিয়ে আরো গবেষণা চালিয়ে যেতে চান এবং দেশের কৃষি খাতে বিশেষ অবদান রাখতে চান।

দীঘা’সহ বিলুপ্ত ১০০ প্রজাতির ধান নিয়ে আসছে ব্রি

ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ‘দীঘা’ ধানসহ বিলুপ্ত ১০০ প্রজাতির ধান নিয়ে আসছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি)। বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের বিলুপ্ত ১০০ প্রজাতির স্থানীয় জাতের ধান মাঠে ফেরাতে সংরক্ষণ ও গবেষণা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ধানের জাত নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সরাসরি কৃষকের মাঠ থেকে সংগ্রহ করেছে। কৃষি সম্প্রসারণের সহযোগিতায় এসব ধান সংগ্রহ করে ব্রি’র গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ে এনেছে।

পড়তে পারেন: কচি ধানের কুশি রক্ষায় আগাম সতর্কবার্তা ব্রি’র

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামের কৃষক মো. দবির উদ্দিন শেখ বলেন, বোরো ধান কাটার পর আমরা জমিতে দীঘাধান ছিটিয়ে দেই। কোনো পরিচর্যা ছাড়াই বিঘাপ্রতি ৮/১০ মণ ধান পাই। ব্রি, গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় আমাদের কাছ থেকে দীঘা ধানের অন্তত ১৫টি জাত সংগ্রহ করে গবেষণা করছে। এ ধানের উচ্চফলনশীল জাত পেলে আমাদের ধানের উৎপাদন বহু গুণে বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে এ ধান আবাদ করে লাভবান হতে পারব।

এ কার্যালয়ে জাতগুলোর বীজ বর্ধন ও বৈশিষ্ট্যায়নের কাজ চলছে। এখান থেকে এগুলো পিওর লাইন সিলেকশনের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় বিশুদ্ধ জাত শনাক্তকরণ করা হচ্ছে। গবেষণার মাধ্যমে জাতগুলো উচ্চফলনশীল জাতে রূপান্তরিত করে ভবিষ্যতে অবমুক্ত করা হবে।

এছাড়া কৃষকের মাঠে জনপ্রিয় বিলুপ্ত প্রজাতির স্থানীয় ধানের জাতের মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে। কৃষক এখান থেকে তার পছন্দের স্থানীয় জাত বেছে নিয়ে চাষাবাদ করে অধিক ধান উৎপাদন করবেন| এভাবেই স্থানীয় বিলুপ্ত জাতের ধানের চাষাবাদ ফিরে আসবে।

পড়তে পারেন: পেয়ারার পাতা হলুদ ও গাছ মরে যাওয়া রোগের সমাধান

ব্রি, গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও সিনিয়র সাইন্টিফিক ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে আগে সাড়ে ১২ হাজার প্রজাতির স্থানীয় ও দেশীয় ধান আবাদ হতো। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থানীয় ও দেশীয় ৮ হাজার ধানের জাত সংগ্রহ করে জিন ব্যাংক গড়ে তুলেছে।

তিনি আরোও বলেন, কৃষকের মাঠে বিদ্যমান একটি জাতকে বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি বড় কাজ। এ লক্ষ্যে আমরা স্থানীয় ও দেশি ধানের জাত সংগ্রহ করে মূল্যায়ন ও বৈশিষ্ট্যায়নের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এটি ধান গবেষণার জিন ব্যাংক সমৃদ্ধকরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এছাড়া স্থানীয় ও দেশি জাতের ধানের উন্নয়ন ঘটিয়ে নতুন করে বিলুপ্ত জাত কৃষকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এতে কৃষক স্থানীয় ও দেশি উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ করে আমন মৌসুমে অধিক ধান ঘরে তুলবেন। এতে কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।

ব্রি, গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সায়িন্টিফিক অফিসার ফারুক হোসেন খান বলেন, স্থানীয় জাতের ধানের মধ্যে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। এই পুষ্টিগুণের বৈশিষ্ট্যগুলো উচ্চফলনশীল জাতের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে স্থানীয় জাতকে উচ্চফলনশীল জাতে পরিণত করা হবে। এতে বিলুপ্ত জাতের বৈশিষ্ট্য ফিরে আসবে। ভাতের মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ