মৎস্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: স্থানীয় ইজারাদার ও প্রভাবশালীরা খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। ফলে জলাবদ্ধতা বাড়ার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।

তিন-চার হাজার বিঘা আবাদি জমি ডুবে রয়েছে। আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষকরা। প্রশাসনকে দ্রুত বাঁধ অপসারণে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা।

চাঁদখালী ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে প্রায় চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদী। চাঁদখালী, গজালিয়া, কাঁটাবুনিয়া, কলমিবুনিয়াসহ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের পানি নিষ্কাশন হয় এ নদীর মাধ্যমে। চাঁদখালীর আজিজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বদ্ধ জলমহাল উল্লেখ করে নদীটি কালিদাসপুর মৎস্য সমবায় সমিতির নামে ইজারা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

পরে তিনি নদীতে বাঁধ দিয়ে পাঁচ ভাগে লাল চাঁদ, দেবুসহ অনেকের কাছে বিক্রি করেছেন। বাঁধ দেয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে পানিপ্রবাহ। দুর্ভোগে পড়েছে হাজারো মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।

কাঁটাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা সূর্যকান্ত তরফদার বলেন, এ এলাকায় তিন-চার হাজার বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়। কিন্তু নদীতে বাঁধ দেয়ায় আবাদে ব্যাঘাত ঘটেছে। পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই জমিতে পানি জমে যায়। ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে ইজারাদার আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি নদী ইজারা নিয়ে বাঁধ নয়, নেট দিয়ে মাছ চাষ করছি। লাল চাঁদ, দেবুও বাঁধ দিয়ে চাষ করে না। এতে তো কারো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। লাল চাঁদ ও দেবু বলেন, নদীর এক খণ্ড আমরা টাকা দিয়ে নিয়েছি। আমরা পানিপ্রবাহে কোনো বাধা দিচ্ছি না। অন্য খণ্ড যিনি নিয়েছেন তিনি নদীতে বাঁধ দিয়েছেন।

চাঁদখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাজাদা আবু ইলিয়াস বলেন, মাত্র কয়েকদিন হলো এ ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব নিয়েছি। আমি আমার নির্বাচনী ইশতিহারে বলেছি, নদী ও হাটবাজার দখলমুক্ত করব। আমার ইউনিয়নে কোনো খাস জমি দখল, ধান চাষের ক্ষতি ও পানিপ্রবাহ বন্ধ করে মাছ চাষ চলবে না। উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দীন ফিরোজ বুলু বলেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নেট-পাটা অপসরণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছিলাম। আর বাঁধগুলো এলাকাবাসী নিজ খরচে অপসরণ করবে বলে আমাকে আশ্বাস দিয়েছিল। এলাকাবাসী যদি তা না করে তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম বলেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এ ব্যাপারে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে চাঁদখালী উপজেলার পৌরসভার কোলঘেঁষে বয়ে গেছে শিবসা নদী। একসময়ের খরস্রোতা নদীটি এখন পলি জমে সরু খালে পরিণত হয়েছে। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় সামান্য জোয়ারের পানি বাড়লে পৌর সদরসহ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। নদীর পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এতে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও জমির ফসল নষ্ট হচ্ছে। কেউ কেউ নদী ভরাট জায়গা দখল করছেন।

পৌর সদরের ব্যবসায়ী পীযূষ সাধু বলেন, কয়েক বছর আগেও শিবসা নদী দিয়ে লঞ্চ ও স্টিমার চলত। শহরের মানুষের যাতায়াতের মাধ্যমই ছিল নদীপথ। ব্যবসায়ীরা কম খরচে নৌকায় মালপত্র আনতেন জেলা শহর থেকে। কিন্তু নদীপথ বন্ধ হওয়ায় এখন ট্রাকে করে সড়কপথে মালপত্র আনতে খরচ বেশি হচ্ছে।

পৌরমেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ভবিষ্যতে পৌরসভাসহ শিবসার পাশের ইউনিয়নকে বাঁচাতে হলে নদীখনন জরুরি হয়ে পড়েছে। খুলনা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ৩১ নম্বর পোল্ডার খনন করা হবে। পাইকগাছা উপজেলার শিববাটি ব্রিজ থেকে সোলাদানা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার নদী এ পোল্ডারের আওতায় রয়েছে। আমরা এ ব্যাপারে কাগজপত্র তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি।

সূত্র: বণিক বার্তা

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ