নির্ধারিত সময়ে হাওরে বাঁধ

মেহেদী হাসান, সুনামগঞ্জ হাওর থেকে ফিরে, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: নির্ধারিত সময়ে হাওরে বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ফসলের বড় ক্ষতির শঙ্কা নিয়ে সময় পার করছেন ওই এলাকার কৃষকেরা।

সরেজমিনে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প এলাকা ঘুরে এমন তথ্য উঠে এসেছে। দেখা যায়, প্রকল্পের মেয়াদ ২৮ ফেব্রুয়ারী শেষ হলেও বাঁধ নির্মাণের কাজ এখনো চলমান রয়েছে। উপজেলাটির জয়শ্রী ইউনিয়নের চন্দ্র সোনারথাল হাওরের বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে পিআইসি ১৭০ এর  মাধ্যমে ১৬ লাখ ৩১ হাজার ২৬৪ টাকা বরাদ্দ দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।

মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাঁধ নির্মাণ এলাকায় দেখা যায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর সাথে কথা হয় কালাপানি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন এর।

তিনি এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, অপ্রয়োজনীয় ও নামমাত্র বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি হচ্ছে। এতদিন এ বাঁধগুলোর কাজ শেষ করা উচিত ছিল। কাজের ফিনিশিং নাই, পরিমান মতো মাটি দেয় নি। মূলত রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কিন্তু হাওর রক্ষা বাঁধ হিসেবে একেবারেই অনুপযুক্ত। এসব টাকা লোপাট করার উপায়। প্রতিবছরই বাজেট আসে কিন্তু বাজেট অনুযায়ী কাজ হয় না।

তিনি বলেন, ‍এছাড়াও গত বছরের চেয়ে তিনগুণ বেশি প্রকল্প নেয়া হয়েছে এই উপজেলায়, যার বেশিরভাগই অপ্রয়োজনীয় বলে অভিযোগ রয়েছে। বিপুল পরিমাণ ব্যায় স্বত্বেও বাঁধ ভেঙে ফসল হারানোর শঙ্কায় আছেন কৃষকরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, চলতি বছরে জেলার ১১ উপজেলায় ৬৩৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য ৭৪৪ পিআইসি গঠন করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় গত বছর বাঁধ নির্মাণে ৯টি পিআইসি ছিল, এ বছর ৩ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭টি প্রকল্প।

শাল্লা উপজেলায় এ বছর প্রকল্প ১৩৭টি যা আগের বছর ছিল ২২টি করা হয়েছে। একইভাবে জামালগঞ্জ উপজেলায় ৬৯টি প্রকল্প, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ২৬টি প্রকল্প, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ৫০টি প্রকল্প, তাহিরপুর উপজেলায় ৭০টি প্রকল্প এবং ছাতক উপজেলায় ১১টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এ বছর জেলায় প্রকল্প বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ানো হয়েছে বরাদ্দের পরিমাণ। বোরো ধানের সঙ্গে সম্পর্কহীন স্থানে প্রকল্প নির্মাণ, বাঁধের টাকায় গ্রামের রাস্তা নির্মাণসহ গত বছরের ভালো বেড়িবাঁধে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এভাবে বিভিন্ন হাওরে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয়ের পাশাপাশি অনেকেই বরাদ্দের টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট চলছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। এসময়ে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছেন হাওর বাসী।

এদিকে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা, সুশীল সমাজ এবং স্থানীয় জনগণের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ধর্মপাশা উপজেলার কালাপানি নদীর পাড় এলাকা পরিদর্শন শেষে নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক ও কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরিফুজ্জামান শরিফ এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, এই এলাকার কৃষকদের রক্ষা করতে হলে বাঁধ নির্মাণে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে হবে। যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হচ্ছে তার পেছনে কতটুকু যৌক্তিকতা রয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। সেইসাথে প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দেখতে হবে সঠিকভাবে কাজ হয়েছে কিনা এবং কঠোর নজরদারিতে রাখতে হবে।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুষ পুরকায়স্থ টিটু বলেন, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের অর্থ লোপাট করা হচ্ছে। অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, বাঁধে ভালো মানের  কাজ হচ্ছে না। বেশ কয়েকটি অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারি টাকা বাঁধ দেওয়ার নামে পকেট ভরছে একশ্রেণির টিকাদাররা।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে বলেন, আমাদের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের মাত্র ৮ টি কাজ বাঁকি আছে। ড্রেসিং, ট্রাফিং করা হচ্ছে। এবার পানি নামতে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে সময় লেগেছে। প্রকৃতি স্বাভাবিক রুপ নিয়ে  আসলে কোন আশঙ্কার কারণ নেই।

অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোন অপ্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যেখানে প্রয়োজন ঠিক সেখানেই  বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে।

প্রসঙ্গগত, নির্ধারিত সময়ে হাওরে বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় ফসলের বড় ক্ষতির শঙ্কা যেন সত্যি না হয় সেদিক বিবেচনায় এনে কাজ করতে হবে।