পোল্ট্রি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবেএবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারি রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে শিল্পটির উন্নয়ন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বি.এস.এম.এম.ইউ) সাবেক উপাচার্য্য ডাঃ কামরুল হাসান খান।

তিনি বলেছেন, ডিম ও মুরগির মাংস উৎপাদনে একটা বিপ্লব ঘটিয়েছে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প। প্রায়৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং৬০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

বর্তমান এবং আগামীতে দেশের আপামর মানুষের খাদ্য ওপুষ্টি চাহিদাপূরণে পোল্ট্রি শিল্প অগ্রণী ভূমিকা রাখবে অথচ কৃষিভিত্তিক এ খাতটি নানামুখী অবহেলার শিকার।

শনিবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত “প্রোটিন ফর অল” শীর্ষক সেমিনারে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি এ আহ্বান জানান।

বাংলাদেশ পোল্ট্রিইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ইউনাইটেড স্টেট সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউ.এস.এস.ই.সি) যৌথভাবেএ সেমিনারের আয়োজন করে। এতে সঞ্চালনায় ছিলেন  বিপিআইসিসি’র উপদেষ্টা শ্যামল কান্তিঘোষ।

ডাঃ কামরুলহাসান বলেন, প্রতিটি মানুষের জন্য, বিশেষ করে শিশুদের জন্য ডিম একটি আদর্শ খাদ্য। ভ্রুণ থেকে শুরু করে জন্মগ্রহণের পর ২১ বছর বয়স পর্যন্ত সময় পেশী ও হাড়ের গঠন, ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধি সাধন ও মেধার বিকাশ ঘটতে থাকে।

এ সময়ে প্রাণিজ আমিষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জনের জন্যও প্রোটিনের প্রয়োজন অপরিহার্য।

বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগেরপ্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ (মহুয়া) বলেন, মানের বিচারে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের চেয়ে প্রাণিজ প্রোটিন ভাল। কারন প্রাণিজ প্রোটিনে অধিক পরিমানে অ্যামিনো এসিড থাকে।

ডিম কে “প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন” হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,সব বয়সের মানুষের জন্য ডিম দরকারি,এমনকি কার্ডিয়াকরোগির জন্যও স্বাস্থ্যগত অবস্থা বুঝে ডিম দেয়া হয়ে থাকে।

শিশুর সঠিক ওদ্রুত বৃদ্ধির জন্য এবং প্রি-স্কুলের বাচ্চাদের জন্য উন্নত মানের প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। বলেন, মুরগিরবুকের মাংসেচর্বি কমথাকে।চামড়া ফেলেদিয়ে চিকেনউইংস খাওয়ারপরামর্শ দেনমহুয়া। শর্করা জাতীয়খাদ্য বেশিখেলে তাশরীরে জমেথাকে কিন্তুপ্রোটিন থাকেনা। তাইপ্রোটিন খেলেওজন বাড়ারসম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশ পোল্ট্রিইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, প্রোটিন ছাড়া মানুষের শরীর স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করতে পারে না। তাই আমাদের প্রোটিন গ্রহণ করতেই হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার তথ্য অনুযায়ী মানবদেহের শক্তির ১০থেকে ১৫ শতাংশ আসা উচিত আমিষ জাতীয় খাদ্য থেকে। আর এইআমিষের ২০শতাংশ আসতে হবে প্রাণিজ আমিষ থেকে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই এই আমিষের ৫০শতাংশ আসে প্রাণিজ আমিষ থেকে।

মসিউর বলেন,আমাদের দেশে প্রোটিন ইনটেকের পরিমান অনেক কম এবং প্রাণিজ প্রোটিনের ইনটেক আরও কম। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে অত্যন্ত উন্নত মানের পোল্ট্রিও ফিস ফিড উৎপাদিতহচ্ছে।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ফেসবুকে নকল ডিম নিয়ে যে প্রচারনা তা ভিত্তিহীন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কোন নকল ডিমের সন্ধান পাওয়া যায় নি। যিনি নকল ডিমের সন্ধান দিতে পারবেন তাঁকে পুরস্কৃত করা হবে।

ইউএস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের (ইউ.এস.এস.ই.সি) কনসালট্যান্ট মি. পাওয়ান কুমার বলেন, পশ্চিম ইউরোপের দেশ মোনাকোর মানুষের গড় আয়ু সবচেয়ে বেশি। নেদারল্যান্ডসের মানুষেরা যথেষ্ঠ লম্বা হয়।

চীনের এক জন মানুষ ৭৫ বছর বয়সেও অনেক বেশি কাজ করতে পারেন, কারন তাঁরা পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করেন। অন্যদিকে ভারতের প্রায় ৮০শতাংশ মানুষ প্রোটিন ঘাটতিতে ভুগছেন বলে জানান মি.পাওয়ান।

এক পরিসংখ্যান মতে, সে দেশের ৭৩ শতাংশ শহুরে ধনী মানুষ এবং ৬২ শতাংশ গর্ভবতী নারী প্রোটিন ঘাটতিতে ভুগছেন।

তিনি বলেন, প্রোটিনের অভাব হলে মানুষ অকালেই বার্ধক্যে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এখনও প্রোটিন ঘাটতি অনেক বেশি। শুধুমাত্র চালের উৎপাদন বাড়িয়ে এ ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়। এমনকি পাশ্ববর্তী দেশ থেকে প্রোটিন আমদানি করেও এ ঘাটতি পূরণ প্রায় অসম্ভব কারণ বাংলাদেশের পাশ্ববর্তী পাঁচটি দেশেও প্রোটিনের যথেষ্ঠ ঘাটতি রয়েছে।

টেলিভিশনে প্রচারিত রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় রন্ধন শিল্পী নাহিদ ওসমান বলেন, সকালের নাস্তায় প্রতিদিন একটি ডিম থাকা উচিত। যে সকল শিশু সকালে নাস্তা না খেয়ে স্কুলে যায় তাদের পারফরম্যান্স, যারা নিয়মিত নাস্তা করে যায় তাদের চেয়ে খারাপ।

সেমিনারে অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রিসায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখারস ভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ (অঞ্জন), এসিআই লিমিটেড -এর এগ্রি বিজনেস বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসিইও ড.এফ.এইচ আনসারি এবং বিপিআইসিসি’র সদস্যভুক্ত সংগঠন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড পোল্ট্রি সায়েন্সঅ্যাসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখা, এনিমেল হেলথ কোম্পানীজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আহকাব) এবং বাংলাদেশ এগ্রো ফিড ইনগ্রিডিয়েন্টস ইম্পোর্টার্স এন্ড  ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফিটা) -এর প্রতিনিধিরা।

এছাড়াও ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, তিতুমীর কলেজও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী এবং মহাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক; পোল্ট্রি ও কৃষিবিষয়ক ম্যাগাজিন ও অনলাইনের সংবাদকর্মীসহ প্রায় ১২০ জন অংশগ্রহণকারি এ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।