ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: গোপালগঞ্জের সদর উপজেলায় পড়ে থাকা বা পরিত্যাক্ত আনাবাদি ৬০ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে আবাদ শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, রীতিমতো ৪ ফসলী জমিতে পরিণত হয়েছে ৩০ হেক্টর জমি । এতে লাভবান হচ্ছেন এখানকার চাষিরা।

কৃষকরা এসব জমিতে রবি মৌসুমের শুরুতে লালশাক, ডাটাশাক,পালংশাক, লাউ, কুমড়াসহ বিভিণœ প্রকার শাক সবজি আবাদ করেন। কৃষক মাঠ থেকে এসব শাক সবজি তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। শাক সবজি ১৫ দিনে মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

এরপর কৃষক এসব জমিতে তেল জাতীয় ফসল আবাদ করবেন। ৩০ হেক্টর জমিকে ৪ ফসলী জমিতে পরিণত করা হয়েছে। এছাড়া ভাসমান বেডে সবজি, মসলা ও ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

রঘুনাথপুর ইউনিয়নের নকড়িরচর গ্রামের কৃষক মোঃ সবুজ মোল্লা (৩৫) বলেন, আগে আমাদের জমিতে শুধু আমন ধান হত। বছরে আমরা মাত্র একটি ফসল পেতাম। তারপর সারাবছর জমি পতিত থাকত। কৃষি অফিসের পরাামর্শে আমরা এইসব জমিতে সারা বছর শাক,সবজি,তরমুজসহ বিভিন্ন ফসল ফলাচ্ছি।

কৃষি বিভাগ আমাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ, বীজ,সারসহ কৃষি প্রণোদনা প্রদান করছে। আমাদের ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার সার্বক্ষণিক আমাদের সহায়তা করছেন। এ কারণে আমরা সারাবছর শাক, সবজিসহ অন্যন্য ফসল আবাদ করে লাভের মুখ দেখছি। কৃষি বিভাগের এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে আমরা ফসল উৎপাদন ২ থেকে ৩ গুন বৃদ্ধি করতে পারব। এছাড়া বর্ষাকালে আমরা ভাসমান বেডে সবজি,মসলা ও ফল উৎপাদন করছি।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

আলু ছেড়ে বিদেশী সবজি স্কোয়াশ চাষে লাভবান কৃষক

লালমনিরহাটে ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ

কুয়েতের মাটিতে সবজি চাষে সফল বাংলাদেশী প্রবাসীরা

চালে বাড়তি, স্বস্তি নেই সবজিতে

একই গ্রামের কৃষক মোঃ শাহাবুদ্দিন মল্লিক (৬০) বলেন, সফল ও আদর্শ কৃষক হানিফ মল্লিক আমার ভাতিজা। সে আমাদের এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রচলন করেছে। তার চাষাবাদ দেখে আমরা কৃষির নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করেছি। এখন আধুনিক কলা-কৌশলের মাধ্যমে আমরা অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করে আয় বাড়িয়েছি। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভালো আছি।

একই গ্রামের কৃষক হানিফ মল্লিক (৫০) বলেন, কৃষি বিভাগ আমাকে ভাসমান বেডে চাষাবাদ থেকে শুরু করে নতুন নতুন প্রযুক্তির চাষাবাদ আমাকে দিয়ে করাচ্ছে। আমি এটি গ্রহণ করেছি। এ চাষাবাদে লাভবান হচ্ছি। আমার দেখাদেখি আমার এলাকার কৃষক এসব প্রযুক্তি গ্রহণ করছেন। তারাও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে টাকা কামাচ্ছেন। তারও আধুনিক চাষাবাদে ঝুঁকে পড়ছেন।

রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক সরোজ কান্তি বালা (৪৮) বলেন,আমরা আনাবাদি ১ একর জমিতে এই বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে সবজি করেছি। এতে খরচ হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা। ইতমধ্যে ১ লাখ টাকার শাক-সবজি বিক্রি করেছি। আশা করছি আগামী ১৫ দিনে আরো ৫০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করতে পারব। এরপর তেল জাতীয় ফসল আবাদ করব। কৃষি বিভাগ প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও প্রণোদনা দিয়ে আমাদের কৃষিকে লাভজনক করেছে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা না রেখে চাষাবাদ বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছেন। আমরা এ আহবানে সাড়া দিয়ে রবি মৌসুমে আনাবাদি ৬০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় এনেছি। আমাদের কাছ থেকে বীজ, সারসহ কৃষি প্রণোদনা পেয়ে কৃষক ইতমধ্যে এসব জমিতে শাক,সবজি ফলিয়েছে। এগুলো বাজারে বিক্রি করে তারা ভালো দাম পেয়েছেন। তাদের শাক-সবজি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এইসব জমিতে তারা এখন তেল জাতীয় ফসলের আবাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এভাবে আমরা ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি।

এছাড়া আমরা ৩০ হেক্টর জমিকে ৩ ফসল থেকে ৪ ফসলী জমিতে পরিণত করেছি। এসব জমিতে ধান,পাট, সবজি, ডাল, তেলসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করা হচ্ছে। আমরা কৃষকের আয় দ্বিগুন করে দিতে চাই। সেই সাথে খোরপোষের কৃষিকে আমরা বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিণত করব। সেইভাবে আমরা কৃষককে চাষাবাদের আধুনিক কলাকৌশল শিখিয়ে দিচ্ছি। তারা এটি গ্রহণ করে অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন।

৬০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। সেই সাথে ৩০ হেক্টর জমিকে আমরা ৪ ফসলী জমিতে পরিণত করেছি। ভাসমান বেডে সবজি, মসলা ও ফল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে গোপালগঞ্জে ফসলের মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, আমার ইউনিয়নে সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর আনাবাদি জমি রয়েছে। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তারের দিক নির্দেশনায় আমি আনবাদি ২ হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় এনেছি।

এসব জমিতে আগাম শাক,সবজি হয়েছে। এখন তারা এখানে তেল জাতীয় ফসল আবাদ করছেন। চলতি অর্থবছরে এ ইউনিয়নে ফসল উৎপাদন আন্তত ২৫ % বৃদ্ধি পাবে। এ ইউনিয়নে ভাসমান বেডে সবজি, মসলা ও ফল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। পড়ে থাকা জমি ৪ ফসলীতে পরিণত, লাভবান চাষিরা সংবাদের তথ্য বাসস থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ