পরিবহন সমস্যা: আর্থিক ক্ষতিতে সবজি রপ্তানীকারকেরা

আবু খালিদ, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: পরিবহন সমস্যায় দেশের সবজি রপ্তানীকারকেরা বেশ বিপাকে রয়েছেন। এ কারণে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন দেশে সবজি রপ্তানী করতে পারছেন না তারা। সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় সবজি নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতিতে পরছেন রপ্তানীকারকেরা।

এর ফলে একদিকে যেমন সবজি রপ্তানী স্থিমিত হচ্ছে অপর দিকে বৈদিশিক মুদ্রা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। দীর্ঘ সময়ের এই সমস্যার সমাধান না পাওয়ায় অনেকেই সবজি রপ্তানীর ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

সবজি রপ্তানীকারকদের অভিযোগ, ঠিক সময়ে পরিবহন না পাওয়া, ভাড়া বেশি, পরিবহন কৃর্তৃপক্ষের অসহযোগিতাসহ নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে তাদের রপ্তানীর কার্যক্রম সম্পাদন করতে হচ্ছে। অন্যান্যে সবজি রপ্তানীকারক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে সবজি পরিবহন খরচও বেশি।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বারবার লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ জানানোর পরও এর সমাধান পাচ্ছেন না।

তাদের দাবি, চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সবজি রপ্তানী করা যাচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন রেমিটেন্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্যদিকে সবজির প্রসার কম হচ্ছে। রপ্তানীর এই সমস্যার কাটিয়ে ওঠলে অনেক বেশি রেমিটেন্স আয় সম্ভব হবে।

সবজি রপ্তানী কারক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফভিএপিইএ) সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, পরিবহনের সমস্যার কারণে অনেক দেশ থেকে সবজির অর্ডার পাওয়ার পরও সরবরাহ করতে পারছি না।

তিনি জানান, ঠিক সময়ে সবজি গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। গত মাসেও তার নিজেরসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর সবজি নষ্ট হয়েছে। দেখা যায়, বিমানের পক্ষ থেকে জানানো একটা নির্দিষ্ট সময় দেয়া হলো। কিন্তু ওই নির্দিষ্ট সময়ে সবজিগুলো নেয়া হলো না। এরকম ঘটনাও ঘটছে।

অন্যান্যে দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সবজি রপ্তানীকারকদের অতিরিক্ত প্লেনের ভাড়া গুণতে হয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

উদাহরণ একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কলকাতা থেকে লন্ডনে প্রতিকেজি সবজি রপ্তানী করতে বাংলাদেশি টাকা দরকার হয় ১০০ টাকা। কিন্তু ঢাকা থেকে একই জায়গায় একই পরিমাণ সবজি পাঠাতে খরচ করতে হয় ১৪০ টাকা। যার ফলে সবজির রপ্তানীর বাজার দিনদিন বাংলাদেশ হারাচ্ছে।

সবজি রপ্তানীর এরকম নানা সমস্যার কারণে গত কয়েক বছর ধরে সবজি রপ্তানী বন্ধ করে দিয়েছেন মেসার্স এসএফএস ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকার আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, পরিবহন সমস্যা ও বেশি খরচ, এই দুই কারণে সবজি রপ্তানী থেকে সরে এসেছি।

তিনি জানান, রেমিটেন্সের ওপর যে ২০ ভাগ ভূর্তিকি পাওয়া যায় তাও নিতে গেলে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়। সবমিলিয়ে রপ্তানীর পথটা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রপ্তানীকারকেরা জানান, বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সে সবজি পাঠাতে গেলে সবচেয়ে বেশি ঝামেলা পোহাতে হয়। সবজির বড় বাজার ইংল্যান্ডে পাঠাতে গেলে অনেক সময়ে দুবাই ফ্লাইট পরিবর্তন করার সময় নিয়ে ঝামেলা হয়। এতে সবজি নষ্ট হয়ে যায়।

বিএফভিএপিইএ’র একাধিক সদস্য এই প্রতিবেদককে জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের উদ্যোগ এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে বলে আশ্বাষ দিয়েছে। কিন্ত যত দ্রুত করা হবে ততই তাদের জন্য মঙ্গলজনক।

সার্বিক বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্ল্যান্ট কোয়ারেনটাইন উইং উপপরিচালক (রপ্তানী) আনোয়ার হোসেন খান বলেন, সবজি রপ্তানী বৃদ্ধিতে কৃষি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। সবজিগুলো বিমানে পাঠানোর কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীদেরও আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।

কৃষি অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাংলাদেশ এখন সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবছরই বাড়ছে সবজি উৎপাদন ও চাষ। তাই সবজির রপ্তানীর বাজারের প্রসারতা বৃদ্ধি খুবই জরুরি। এতে রেমিটেন্স আয়ের পাশাপাশি সবজির দামও ভালো পাবেন কৃষকরা।