অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পশুখাদ্য উৎপাদনে সয়ামিলের ব্যবহার বাড়িয়েছে চীন। তাই আমদানি করছে বিপুল পরিমান। গত সেপ্টেম্বরে দেশটি ৭৭ লাখ ২০ হাজার টন সয়াবিন আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।

দেশটির জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে- পশুখাদ্য উৎপাদনে সয়ামিলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতে এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তৈরি হয়েছে।

সেপ্টেম্বরে আমদানি হওয়া সয়াবিনের বড় অংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। গত মাসে দেশটি থেকে এসেছে ১১ লাখ ৫ হাজার টন। ২০২১ সালের একই মাসে দেশটি থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৩৯ টন। অন্যদিকে ব্রাজিল থেকে সয়াবিন আমদানির পরিমাণ কমেছে, যা গত বছর ছিল ৫৯ লাখ ৩৬ হাজার টন, তা এবার কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ লাখ ৮০ হাজারে।

খারাপ আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন কমে যাওয়া ও ব্রাজিল থেকে রফতানি হ্রাসের কারণে বিশ্ববাজারে এবার সয়াবিনের দাম বেড়েছে। গত জুনে শস্যটির দাম এক দশকে সর্বোচ্চে পৌঁছে। উচ্চমূল্য ও পশুখাদ্য তৈরিতে সয়াবীজ ভাঙানোর কাজে কম মুনাফার কারণে বছরের শুরুতে প্রাণিসম্পদ খাতে সয়াবিনের চাহিদা কম ছিল, যা চীনের সয়াবিন কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিল।

সেপ্টেম্বরে আমদানিকারকদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে। তবে বছরের প্রথম নয় মাসে গত বছরের তুলনায় আমদানি কমেছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

সয়াবিন উৎপাদন বাড়ার পূর্বাভাস আর্জেন্টিনার

২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে আর্জেন্টিনায় সয়াবিন উৎপাদন বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় তেলবীজটির আবাদ বাড়িয়েছেন দেশটির কৃষকরা। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বুয়েন্স আয়ার্স এক্সচেঞ্জ।

এ কারণেই উৎপাদন বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০২২-২৩ বিপণন মৌসুমে আর্জেন্টিনায় ৪ কোটি ৮০ লাখ টন সয়াবিন উৎপাদন হতে পারে। গত মৌসুমের তুলনায় উৎপাদন ১৫ শতাংশ বাড়বে।

আজেন্টিনা বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন তেল রফতানিকারক। পাশাপাশি সয়াবিন উৎপাদনেও দেশটি অন্যতম নেতৃস্থানীয়। ২০২১-২২ বিপণন মৌসুমে দেশটিতে ৪ কোটি ৩৩ লাখ সয়াবিন উৎপাদন হয়েছিল। সে হিসাবে উৎপাদন ৪৭ লাখ টন বাড়বে।

এক্সচেঞ্জের দেয়া তথ্য বলছে, ভুট্টার অতিরিক্ত দাম বাড়ার কারণে সয়াবিনে স্থানান্তর ঘটছে। প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০২২-২৩ মৌসুমে ভুট্টা উৎপাদন ২০ লাখ টন কমতে পারে। মোট উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ কোটি টনে।

তবে গম উৎপাদনে ব্যাপক নিম্নমুখিতা দেখা দিতে পারে। এ মৌসুমে উৎপাদন প্রায় ২২ শতাংশ কমার পূর্বাভাস দিয়েছে এক্সচেঞ্জ।

সয়াবিনের দাম বাড়ার কারণে ব্রাজিল থেকে আমদানি কমিয়েছে চীন। ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণেই আমদানিতে ভাটা পড়েছে। সম্প্রতি চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস এ তথ্য জানিয়েছে।

পড়তে পারেন: ১৭১ টাকা দরে এক কোটি ২৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনবে সরকার

ব্রাজিল চীনের অন্যতম প্রধান সয়াবিন সরবরাহকারী দেশ। কিন্তু দেশটির সয়াবিনের দাম বেড়ে যাওয়ায় চীন যুক্তরাষ্ট্র ও উরুগুয়ের কাছ থেকে পণ্যটির আমদানি বাড়িয়েছে।

চীন বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন ক্রেতা। আগস্টে দেশটি ব্রাজিলের কাছ থেকে ৬২ লাখ ৫০ হাজার টন সয়াবিন আমদানি করে। গত বছরের একই সময় আমদানির পরিমাণ ছিল ৯০ লাখ ৪০ হাজার টন। অর্থাৎ আমদানি কমেছে ২৭ লাখ ৯০ হাজার টন।

শুধু ব্রাজিলের কাছ থেকেই নয়, চীনের মোট সয়াবিন আমদানিও লক্ষণীয় মাত্রায় কমেছে। গত আগস্টে দেশটি সব মিলিয়ে ৭১ লাখ ৭০ হাজার টন সয়াবিন আমদানি করে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি ২৫ শতাংশ কমেছে। ২০১৪ সালের পর এ বছরই আগস্টে সর্বনিম্ন সয়াবিন আমদানি করল দেশটি। শুল্ক বিভাগ জানায়, বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে চীনে পণ্যটির চাহিদায় ভাটা পড়েছে।

পড়তে পারেন: সয়াবিনের লিটারে ফের বাড়লো ৭ টাকা

শুল্ক বিভাগ জানায়, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র চীনে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৭৬২ টন সয়াবিন রফতানি করেছে। গত বছরের একই সময় রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র ১৭ হাজার ৫৭৫ টন। এছাড়া উরুগুয়ে থেকে আগস্টে আমদানি করা হয় ৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৪২ টন। গত বছরের একই সময় যা ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭০ টন।

চলতি বছরের প্রথম আট মাসে চীন ব্রাজিলের কাছ থেকে ৪ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার টন সয়াবিন আমদানি করেছে। গত বছরের একই সময় আমদানি করা হয়েছিল ৪ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার টন। সে হিসাবেও দেশটি থেকে আমদানি কমেছে। আট মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আমদানি কমেছে। জানুয়ারি-আগস্ট পর্যন্ত দেশটি থেকে ১ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার টন সয়াবিন আমদানি করা হয়। গত বছরের একই সময় যা ছিল ২ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টন।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ