চাষ ব্যবস্থা ও করর্ণীয় ডেস্ক: পানি কচু খুব সহজে চাষ করা ন গেলেও কিছু নিয়ম মেনে চাষ করলে শতভাগ ভালো ফলন মিলবে।

পাঠক আসুন জেনে নেয়া যাক সঠিক পদ্ধতিতে পানিকচু চাষাবাদের কৌশলসমূহ।

জাতের নাম: বারি পানিকচু-১ (লতিরাজ)।

বৈশিষ্ট্য: এ জাতের সব অঙ্গই সব্জি হিসেবে খাওয়া যায়। যদিও লতিই হলো এ জাতের প্রধান ভক্ষনযোগ্য অংশ। এজাতটি প্রচুর সংখ্যায় উৎকৃষ্ট মানের লতি উৎপাদন করে যার প্রতিটি লতি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১ মিটার লম্বা হয়।

লতি গোলাকার,অপেক্ষাকৃতমোটা ও গাঢ় সবুজ বর্নের হয় এবং গলাচুলকানীমু্ক্ত অর্থ্যাৎ এ কচুতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট এর পরিমাণ কম থাকায় গলা চুলকায় না । সিদ্ধ করলে সমান ভাবে সিদ্ধ হয়। হেক্টরপ্রতি ফলন ২৫- ৩০ টন লতিএবং প্রায় ১৮- ২২ টন কান্ড উৎপন্ন হয়।

উপযোগী এলাকা: বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই এর চাষ করা যায়।

বপনের সময়: আগাম ফসলের জন্য কার্তিক (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর) ও নাবী ফসলের জন্য মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য বৈশাখ (মার্ছ-এপ্রিল) মাসে লাগানো যায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদের জন্য অগ্রহায়ণ পৌষ মাস (ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারী) চারা রোপণের উপযূক্ত সময়।

মাড়াইয়ের সময়:  লাগানোর ২ মাস পর থেকে ৭ মাস পর্যন্ত লতি হয়ে থাকে।

 রোগবালাই দমন ব্যবস্থা:  পাতা পোড়া রোগ: লক্ষণ: এ রোগে প্রথমে পত্রফলকের ডগা, গোড়া বা কিনারায় বেগুনী থেকে বাদামী রঙের বৃত্তাকার পানি-ভেজা দাগ দেখা যায়। এ দাগগুলো ক্রমান্বয়ে বড় ও একত্রিত হয়ে পুরো পাতাটিকে মেরে ফেলে। অনুকূল আবহাওয়ায় (২০-২২০ সে. ও উচ্চ আর্দ্রতা) এ রোগে ৭-১০ দিনে পুরো ক্ষেতের ফসল মারা যায় এবং ক্ষেতের ফসল পুড়ে গেছে বলে মনে হয়।

এ রোগের তীব্রতার মাত্রা অনুসারে ২৫-৫০% ফলন হ্রাস পায়। এটি Phytophthora colocasiae প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা সংগঠিত হয়।

 গোড়া পঁচা রোগ বা ফুট/কলার রট: লক্ষণ: ১.         এ রোগের আক্রমনে গাছের গোড়ায় সাদা বর্ণের মাইসেলিয়াম দেখা যায় এবং এর সাথে কালচে বাদামী বর্ণের সরিষার দানার মত স্কেলরোশিয়া দেখা যায়।

২.      আক্রান্ত গাছটি সম্পূর্ণ রুপে হলুদ হয়ে যায় এবং সবশেষে গাছটি কলার (Collar) অঞ্চল হতে ঢলে পড়ে।

৩.     রোগের মারাত্মক আক্রমনে, মাটির নীচের গুড়ি (Corm) ক্ষতিগ্রস্থ হয়, এর ফলে পুরো গাছ উইল্টিং (Wilting) হয়ে যায়।

 দমন ব্যবস্থা: পাতা পোড়া রোগের দমন ব্যবস্থা

রোগ দেখা দেয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়থেন এম ৪৫ (ডব্লিউ পি) ০.২৫% হারে (প্রতি লিটার পানিতে ২৫ গ্রাম) অথবা রিডোমিল/জি মেটালেক্স ০.২% হারে (প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম) স্প্রে করতে হবে এবং ১২-১৫ দিন পর পর তিনটি স্প্রে দিতে হবে।

গোড়া পঁচা রোগ বা ফুট/কলার রট এর দমন ব্যবস্থা

১. রোগমুক্ত এলাকা হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।

২. ক্ষেতের পানি সরিয়ে ব্যাভিস্টিন (১ গ্রাম/লিটার পানি) নামক ছত্রাক নাশক দিয়ে ফসলের গোড়ার মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। তবে ভিজিয়ে দেয়ার ১ দিন পর আবার পানি দেয়া যাবে।

৩. ফসল কর্তনের পর, ফসলের অবশিষ্টাংশ সরিয়ে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

৪. পরিস্কার চাষাবাদ ও শস্য পর্যায় অবলম্বন করে এ রোগ কমানো যায়।

বিশেষ সতর্কতা: কচুতে যে কোন ঔষধ প্রয়োগ করার সময় স্প্রে মেশিনে ২ গ্রাম/লি. হারে সাবানের গুড়া বা ডিটারজেন্ট অবশ্যই মিশিয়ে নিতে হবে।

 পোকামাকড় দমন ব্যবস্থা

লেদা পোকা : এক্ষেত্রে আক্রমন দেখা দেওয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত পাতা তুলে পায়ে পিষে বা পুড়িয়ে দমন করা যায়। এছাড়াও ট্রেসার – ৪৫ এসসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৪ মিলি বা এডমায়ার -১০০ এসপি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি মিশিয়ে ২- ৩ টি স্প্রে করতে হবে।

লাল মাকড়সা: প্রতি লিটার পানিতে ১-১.৫ মিলি ওমাইট বা যে কোন মাইট দমনকারী ঔষধ মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পর পর জমিতে প্রয়োগ করে এ মাকড় দমন করা যায়।

জাব পোকা: এডমায়ার (১০০ এস পি) ০.৫% হারে (প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি) ২-৩ টি স্প্রে করতে হবে।

সার ব্যবস্থাপনা: সারের নাম     সারের পরিমাণ/হেক্টর

গোবর (টন)         ১০-১৫, ইউরিয়া (কেজি)  ২০০-২৬০, টিএসপি (কেজি)  ১৮০-২২০, এমওপি(কেজি)    ২০০-২৫০, জিপসাম(কেজি)  ১০০-১১০, জিংক সালফেট*(কেজি)         ১০-১৬, বরিক এসিড* (কেজি) ১০-১২

*এলাকাভেদে প্রয়োজন হয় প্রয়োগ পদ্ধতিঃ গোবর বা কম্পোস্ট, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বরিক এসিড এবং অর্ধেক এমওপি সার জমি তৈরীর সময় শেষ চাষের আগে প্রয়োগ করতে হবে।

চারা রোপনের ১.৫-২ মাস সময়ে অর্ধেক এমওপি এবং ইউরিয়ার এক ষষ্টাংশ ছিটিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়ার বাকী পাঁচ ভাগ সার সমান কিসিত্মতে ১৫ দিন পর পর জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। সূত্র: বারি।