ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: শতভাগ আমদানি নির্ভরতা কমাতে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে গোলমরিচ চাষ শুরু হয়েছে।এতে কৃষকরা সফলতা পেয়েছেন। ফলে গোলমরিচ চাষে বিপুল পরিমাণ আয়েরও সম্ভাবনা দেখা গেছে। উৎপাদিত গোলমরিচ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

জানা যায়, বর্তমানে জেলার মীরসরাই ও ফটিকছড়ির অনাবাদী ৬০ একর পাহাড়ি জমিতে দু’শ চাষি বাণিজ্যিকভাবে গোলমরিচ চাষ করে ভালো ফলনও পেয়েছেন। ২০১৭ সালে চারা রোপণের তিন বছর পর ২০২০ সালের শেষের দিকে ফলন পেতে শুরু করেছে কৃষক।

চলতি বছর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দারবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলায় গোলমরিচ চাষ শুরু করেছে চাষিরা। এর ফলে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে গোলমরিচ রপ্তানি করাও সম্ভব বলে মনে করছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় গোলমরিচ চাষের সফলতা পাওয়ার পর চলতি বছর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দারবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলায় গোলমরিচ চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফ। এর ফলে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে গোলমরিচ রফতানি করাও সম্ভব বলে মনে করছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা।

গোলমরিচ চাষীরা জানিয়েছেন, রোপনের তিন বছরের মধ্যে ফলন দেয়া শুরু হয়। পঞ্চম বছর থেকে ফলন কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছে। যা এক টানা ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ফলন হয়। প্রতিটি খুঁটি (গাছ খুটির সাথে বেড়ে ওঠে) থেকে বছরে কমপক্ষে চার কেজি কাঁচা গোলমরিচ পাওয়া যায়।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বর্তমানে বছরে প্রায়িএক হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গোলমরিচ আমদানি করা হয়। কেজি প্রতি গড়ে ৫০০ টাকা দরে এ খাতে প্রতি বছর ৭৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

চা বাগানে নতুন ফসল গোলমরিচ চাষে সাফল্য

গোলমরিচ রফতানিতে শীর্ষে ভিয়েতনাম

৩০ প্রজাতির ফল চাষে তাক লাগিয়েছেন সুশান্ত তঞ্চঙ্গ্যা

মরিচের বিকল্প হতে পারে চুইঝাল, কেজি ১৫০০ টাকা!

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) বান্দারবানের উপ-পরিচলক দীপক কুমার দাশ বলেন, পাহাড়ি এলাকার উঁচু ও ঢালু জমিতে গোলমরিচের ফলন ভালো হয়। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচর্যা করতে পারলে গোলমরিচ চাষে অবশ্যই সফলতা আসবে। বিশেষ করে মীরসরাই ও ফটিকছড়ির পতিত পাহাড়ি এলাকায় ভালো ফলনের পর পার্বত্য তিন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে গোলমরিচ চাষের একটি বিশাল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে গোলমরিচ বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব।

পিকেএসএফ’র সিনিয়র জোনারেল ম্যানেজার আকন্দ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের মীরসরাই এবং ফটিকছড়ি উপজেলায় পিকেএসএফর সহযোগী সংস্থা অপকা’র মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদী গোলমরিচ চাষ প্রকল্প শুরু হয়। এই প্রকল্পে আমরা খুবই সফল হয়েছি।

আমাদের কৃষকদের থেকে চারা নিয়ে ওই এলাকার অনেকেই গোলমরিচের চাষ করেছে। পরীক্ষামূলক প্রকল্পে সফলতার পর চলতি বছর আমরা পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মাধ্যমে বৃহৎ পরিসরে গোলমরিচ চাষের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ি এলাকায় গোলমরিচের চাষ সম্প্রসারিত হলে দেশের অনেক বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচবে।

মীরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের কয়লা খামারপাড়া এলাকার কৃষক আসারাম ত্রিপুরা বলেন, তিন বছর আগে ৫৫০টি গোলমরিচের চারা রোপন করেছি। এখন অল্প অল্প করে ফলন পেতে শুরু করেছি। আগামীতে ফলন আরো বাড়বে বলে আশা করছি। লতানো গাছের জন্য ৮ থেকে ১২ ফুট উচ্চতায় খুঁটি দেয়া হয়। একটি গাছ ২৫ বছর পর্যন্ত ফলন দেয়।

খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ি জসীম উদ্দীন জানান, শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং ভিয়েতনাম থেকে গোলমরিচ আমদানি করা হয়। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। খুচরা পর্যায়ে কেজি প্রতি বিক্রি হয় এক হাজার টাকায়।

অপকা’র নির্বাহী পরিচালক মো. আলমগীর বলেন, ২০১৭ সালে ২০ জন কৃষকের মাধ্যমে শুরু হয় গোল মরিচের চাষ। গোলমরিচ চাষে ২০ জন কৃষককে তিন বছর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করেছে অপকা। গোলমরিচ চাষের জন্য চারা, খুটি, কীটনাশক, প্রশিক্ষণ বাবদ প্রতি কৃষকের জন্য এক লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ফলন পেতে শুরু করে চাষীরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ