নিজস্ব প্রতিবেদক: পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার গোমতি ইউনিয়নের রংমিয়া পাড়ার বিচিত্র পেশার মানুষের জীবন চলে পিঁপড়ার ডিম বেচে। লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করেন তারা। ডিম সংগ্রহ শেষে তা বিক্রি করেন তারা। পিঁপড়ার ‍ডিমের কেজি ৬০০ টাকা! এ আয় দিয়েই চলে সংসার।

জানা গেছে, তারা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে মাছের খাবার ও বড়শি দিয়ে মাছ ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহার করা লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে স্থানীয় পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন। সেই পাইকারদের হাত ধরেই এসব পিঁপড়ার ডিম বিক্রি হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লায়। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তারা পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করেন।

প্রতিদিন ১ থেকে দেড় কেজি পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করতে পারেন জানিয়ে মো. রুস্তম আলী বলেন, সকাল হলেই বাঁশ ও ঝুড়ি নিয়ে বের হয়ে গাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করি। বিকেলে এসব ডিম পাইকারদের কাছে বিক্রি করি। প্রতি কেজি ডিম ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করি।

৭-৮ বছর ধরে এ কাজের সঙ্গে জড়িত মো. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ডিম সংগ্রহ করতে অনেক কষ্ট হয়। পিঁপড়াগুলো সাধারণত মগডালে বাসা বাঁধে। ডিম সংগ্রহ করার সময় কমবেশি কামড় খেতে হয়। সারাদিন বনে-জঙ্গলে ডিমের আশায় ঘুরে বেড়াতে হয়। পিঁপড়ার বাসা খুঁজে পাওয়ার ওপর নির্ভর করে তার আয়।

ডিম সংগ্রহকারী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সব পিঁপড়ায় ডিম পাওয়া যায় না। এ জন্য প্রয়োজন লাল পিঁপড়ার বাসা। লাল পিঁপড়ার বাসায় মেলে প্রচুর সাদা ডিম। সাধারণত মেহগনি, আম, লিচু, কনক ও কড়ইসহ দেশীয় গাছগুলোয় লাল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়।

লাল পিঁপড়ার ডিমের স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘স্থানীয় ২০-২৫ জন পাহাড়ি বন-জঙ্গল থেকে লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে আমার কাছে বিক্রি করেন। পিঁপড়ার ডিম কিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লায় বিক্রি করি। মূলত মাছের খামারি ও সৌখিন মাছ শিকারীরা এ ডিম কিনে থাকেন।’

মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রতিদিন ১৮-২০ জন আমাকে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে দেন। ২-৩ দিন পরপর চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লা থেকে ব্যবসায়ীরা ডিম কিনে নিয়ে যান। একসময় এ পেশায় লোকজন কম ছিল। তখন প্রচুর ডিম পাওয়া যেত। লোকজন বাড়লেও দেশীয় গাছ কাটার কারণে পিঁপড়ার বাসা কমে গেছে। তাই নির্বিচারে দেশি গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানাই।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ/২০২৩