মোঃ তোফাজউদ্দীন আহমেদ, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: লাভজনক মাছ চাষের জন্য সঠিক মাছ চাষ পদ্ধতি নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। চাষিপর্যায়ে অনেক ধরনের মাছ চাষ প্রচলিত আছে। তারমধ্যে পুকুরে মাছের ঘনত্ব ও এ্যারেটর স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনেক চাষি জানেন না। সনাতন পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে থাকেন। তাই এই দুই বিষয়ে জানা প্রয়োজন।

পুকুরে মাছ চাষের ঘনত্ব
মাছ চাষে একেক প্রজাতির মাছ একেক ঘনত্বে মজুদ করতে হয়। তবে চাষের পুকুরে মাছের ঘনত্ব, মাছের উৎপাদন এবং প্রয়োগকৃত খাদ্যের খাদ্য রূপান্তর হারের (ঋঈজ) একটি সম্পর্ক আছে। মাছের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে মাছের মোট উৎপাদন বেশি করা সম্ভব কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রয়োগকৃত খাদ্যের রূপান্তর হার ভাল হয় না, ফলে মাছ চাষে লাভ কমে যেতে পারে। মাছ চাষে উপযুক্ত ঘনত্বের বেশি মাছ ছাড়লে পুকুরের পরিবেশের উপর প্রভাব পড়ে এবং পরিবেশ ভাল রাখার জন্য নানা প্রকার ব্যবস্থাপনার প্রয়োগের প্রয়োজন হয় এর ফলে চাষ ব্যবস্থাপনার খরচ বেড়ে যায়, মাছের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতেও পারে।

মাছের খাদ্য ব্যবস্থাপনা

মাছ চাষে মোট বিনিয়োগের ৭০% অধিক খাদ্য খরচ হয়। সে জন্য কোন খাদ্য প্রয়োগ করলে মাছ চাষে লাভ করা যাবে তা মাছের বাজার দর, মাছের প্রজাতি ও চাষ পদ্ধতি বিবেচনায় রেখে নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমান সময়ে মাছের বাজার দর বিষয়টিকে আরো কঠিন করে তুলেছে। বিদ্যমান অবস্থার মাঝে মাছ চাষিকে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে মাছের খাদ্য নির্বাচন করতে হবে।

মাছ চাষের পুকুরের পানি পরিবর্তন

আধুনিক মাছ চাষ সম্পূর্ণভাবে, পুকুরের পানি ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভরশীল। মাছ চাষের পুকুরে প্রতিদিন খাবার প্রয়োগ করতে হয়। মাছ পুকুরের পানিতেই পায়খানা করে। অবশিষ্ট খাবার এবং মাছের পায়খানার (ঊীপৎবঃধ) কারণে পুকুরের পানি সহজে ভারী হয়ে দূষিত হয়ে যায়। পানি পরিবর্তন করলে পুকুরের এ সমস্যাসহ অনেক সমস্যাই সহজে সমাধান করা যায়। মাছের যে কোন রোগ দেখা দিলে পানি পরিবর্তন সর্বোত্তম সমাধান। শীতের সময় পুকুরে পানি দিতে পারলে মাছ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং খাবার গ্রহণ হার বৃদ্ধি পায়। পুকুরের পানির অক্সিজেন মাত্রা বাড়াবার সহজ উপায় পুকুরে পানি সরবরাহ। তবে সরবরাহকৃত পানি অবশ্যই আয়রন মুক্ত হতে হবে।

মাছ চাষের পুকুরে এ্যারেটর স্থাপন

মাছ চাষের পুকুরে এ্যারেটর সংযোজন করতে পারলে নিরাপদ মাছ চাষে কয়েকধাপ এগিয়ে যাওয়া যায়। মাছ চাষের পুকুরে দ্রবণীয় অক্সিজেনের অভাব একটি সাধারণ সমস্যা। যান্ত্রিক এ্যারেটর এ সমস্যা দূর করা ছাড়াও পুকুরের সাধারণ অক্সিজেনের মাত্রা (৫ পিপিএম) বাড়িয়ে দেয় ফলে মাছের খাদ্য গ্রহণ হারসহ খাদ্যের হজম হার বৃদ্ধি পায়। মাছের শরীরে খাদ্যের আত্ত্বীকরণ বৃদ্ধি পায় ফলে সার্বিকভাবে খাদ্যের ঋঈজ এর মান ভাল হয়। ফলে কম খাবারে মাছের অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়।

নিয়মিত প্রবায়োটিক্স ব্যবহার

বর্তমান মাছ চাষে প্রবায়োটিক্সের ব্যবহার মাছের পুকুরের পরিবেশ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। প্রবায়োটিক্স হচ্ছে পুকুরে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধির উপকরণ। মাছ চাষের পুকুরের তলদেশে প্রতিনিয়ত জৈব পচনশীল দ্রব্য জমতে থাকে। এই জৈব পদার্থ পুকুরের তলদেশে পচে ক্ষতিকর গ্যাসের সৃষ্টি হয় এবং পুকুরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হতে পারে।

প্রবায়োটিক্স প্রয়োগের ফলে পুকুরে উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার পর্যাপ্ত সৃষ্টি হওয়ার কারণে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া উৎপাদন প্রতিহত হয়। পুকুরের পরিবেশ উন্নয়ন এবং মাছ চাষকে নিরাপদ রাখার জন্য বাজারে প্রাপ্ত যে কোন প্রবায়োটিক্স ২০-২৫ দিন পরপর প্রয়োগ করতে হবে। প্রবায়োটিক্স বাজারে দুই ধরনের আছে, কিছু আছে ব্যবহারের আগে চিনির পানিতে ২৪ ঘণ্টা প্রতিপালন করে ব্যবহার করতে হয়। আর কিছু আছে পুকুরে সরাসরি প্রয়োগ করতে হয়। প্রবায়োটিক্স প্রয়োগের পর পুকুরে কোন প্রকার ব্যাক্টেরিয়া নাশক (ঝধহরঃরুবৎ) প্রয়োগ করা যাবে না।

বর্তমান সময়ে একটু চিন্তাভাবনা করে মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে চাষের প্রযুক্তি নির্ধারণ করে একনিষ্ঠভাবে ধৈর্যসহকারে এগিয়ে গেলে যে কেউ মাছ চাষে সফলতা লাভ করতে পারবে বলে আশা করা যায়।

পুকুরে মাছের ঘনত্ব ও এ্যারেটর স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা লেখাটি লিখেছেন বিভাগীয় উপপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তর, রাজশাহী বিভাগ, রাজশাহী। লেখাটি কৃষি তথ্য সার্ভিস থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ