পোল্ট্রিতে এন্টিবায়োটিকের বিকল্প প্রোবায়োটিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: পোল্ট্রিতে এন্টিবায়োটিকের বিকল্প প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিকের ব্যবহার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলেন, বিগত কয়েক বছরে এন্টিবায়োটিক মুক্ত নিরাপদ মুরগির মাংস ও ডিম উৎপাদনে অনেকখানি এগিয়েছে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প।

সরকার আইন করে পোল্ট্রি ও মাছের খাবারে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, এন্টিবায়োটিকের দায়িত্বহীন ব্যবহারের বিরুদ্ধে আদালতের রুল জারি হয়েছে। এর ফলে প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে।

আজ শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর, ২০১৯) ‘জার্নি অব সেইফ পোল্ট্রি প্রোডাকশন ইন বাংলাদেশ এন্ড রোল অব মিডিয়া’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টরা এসব কথা বলেন।

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে (কেআইবি) অনুষ্ঠিত বৈঠকটির আয়োজনে ছিলো বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। এতে ৩৫ জন গণমাধ্যম কর্মী এবং পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও সরকারি কর্মকর্তাসহ মোট প্রায় ৬০ জন অংশগ্রহণ করেন।

বক্তারা বলেন, তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে উপজেলা পর্যায়ে নিরাপদ পোল্ট্রি পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যা নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

বৈঠকে উপস্থিত পোল্ট্রি ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্রয়লার মুরগির মাংস ও ডিম নিয়ে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝেমধ্যেই এমন কিছু খবর আসে যা সাধারন মানুষকে বিভ্রান্ত ও আতংকিত করে। সাম্প্রতিক সময়ে এমনই একটি খবরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যমুনা টেলিভিশনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সুশান্ত সিনহা।

তিনি জানান, অপর একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের একজন শিক্ষকের গবেষণা ও সাক্ষাৎকার দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনিও রিপোর্ট করার জন্য জনৈক শিক্ষকের কাছে যান কিন্তু তাঁর সাথে কথা বলে জানতে পারেন যে বাংলাদেশের পোল্ট্রি ফিড নিয়ে গবেষণার দাবি করলেও প্রায় দুই শতাধিক নিবন্ধিত কোম্পানীর কোনটির স্যাম্পল নিয়ে গবেষণা করেন নি তিনি।

শুধু তাই নয় কোন্ কোন্ উপকরণ দিয়ে পোল্ট্রি ফিড তৈরি হয় সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা নেই জনৈক অধ্যাপকের। তিনি তাঁর গবেষণা কর্মে মাত্র দু’টি মুরগি নিয়ে গবেষণা করেছেন।

যেখানে এ ধরনের একটি গবেষণায় ৫শ থেকে কয়েক হাজার মুরগি’র উপর গবেষণা হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ড. ইলিয়াস হোসেন।

তাছাড়া ঐ গবেষণাটির গবেষণা পদ্ধতি (রিসার্চ ম্যাথডোলজি) নিয়েও প্রশ্ন তোলেন উপস্থিত একধিক পোল্ট্রি বিজ্ঞানী ও গবেষক।

বৈঠকের সঞ্চালক সরকারের সাবেক তথ্য কমিশনার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান বলেন, পোল্ট্রি ফিড কিংবা মানবদেহে এর প্রভাব নিয়ে কোনো গবেষণা না করা সত্বেও দেশীয় পোল্ট্রি ফিড নিয়ে যে বক্তব্য জনৈক অধ্যাপক গণমাধ্যমকে দিয়েছেন তা উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং অপেশাদারিত্বের লক্ষণ।

ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারন সম্পাদক মাহাবুব হাসান তাঁর প্রেজেন্টেশনে জানান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালে প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন এজিপি অলটারনেটিভ এডিটিভস (এ.এ.এ) দেশে আমদানি হয়েছে এবং প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন টন মুরগি ও মাছের খাবার তৈরিতে তা ব্যবহৃত হয়েছে, যা দেশে উৎপাদিত মোট ফিডের প্রায় ৮০ শতাংশ।

মাহাবুব বলেন, এন্টিবায়োটিক মুক্ত ফিড উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি।

তবে তিনি বলেন, নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদনে ফিড একটি অন্যতম নিয়ামক হলেও নানাভাবেই এতে জীবানুর সংক্রমণ ঘটতে পারে যেমন- জবেহ করার সময়, প্রসেস করার সময়, স্টোরেজ করার সময় এমনকি রান্নার সময়ও।

তাই একদিকে যেমন নজরদারি বাড়ানো, আইন ও নীতিমালা প্রয়োগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে আরও বেশি কঠোর হতে হবে, অপরদিকে তেমনি ভোক্তাদেরও সচেতন হতে হবে।

বৈঠকে মিডিয়া প্যানেলে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা, আরটিভি’র প্রধান বার্তা সম্পাদক লুৎফর রহমান, ইনডিপেন্ডেন্ট টিভি’র প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীষ সৈকত এবং এসএ টিভি’র বার্তা সম্পাদক সালাহউদ্দীন বাবলু।

তাঁরা বলেন, তথ্যের প্রাপ্যতা ও দ্বিমুখী প্রবাহের অভাবে অনেক সময় কিছু সারফেস রিপোর্ট প্রকাশিত হতে দেখা যায়। তাই বস্তনিষ্ঠতার স্বার্থেই তথ্যের দ্বিমুখী প্রবাহ বাড়াতে হবে।

বক্তারা জানান, তবে কোনো একটি উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্য ক্রস চেক করা সাংবাদিকতার পেশাদারিত্বের অংশ। তারা বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত কোন সংবাদ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া থাকলে তা স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত। এতে সংবাদ-মাধ্যম সংশোধনীমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।

বৈঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাথু রাম সরকার, পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মকবুল হোসেন, অধ্যাপক ড. শওকত আলী, অধ্যাপক ড. এস.সি দাস, অধ্যাপক ড. কে.এম.এস ইসলাম প্রমুখ পোল্ট্রিখাতে অথেনটিক রিসার্চের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং দেশীয় মুরগির উন্নতজাত নিয়ে গবেষণার কথা বলেন।

পোল্ট্রি ও মাছের খাবার কিভাবে, কতটা বৈজ্ঞানিক উপায়ে তৈরি হয় তার পুরো প্রক্রিয়াটি উপস্থাপন করেন মো. আব্দুল মালেক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুস্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রফেসর খালেদা ইসলাম বলেন, দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ এবং পুষ্টি সূচকের উন্নতিতে বড় ভ‚মিকা রেখে চলেছে পোল্ট্রি শিল্প।

তিনি বলেন, ব্রয়লার মাংস ও পোল্ট্রি’র ডিম স্বাস্থ্য-সম্মত এবং বিশ্বজুড়েই হোয়াইট মিট খাওয়ার পরিমান বাড়ছে। পোল্ট্রিতে এন্টিবায়োটিকের বিকল্প প্রোবায়োটিক ও প্রিবায়োটিকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে এর ফলে এ শিল্পে বেশ উন্নতিও হচ্ছে।