নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ মোঃ এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প অনেক দূর এগিয়েছে। রপ্তানিও শুরু করতে হবে। সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

রোববার (১৫ জানুয়ারি) ওয়াল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) আয়োজিত বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহাপরিচালক এসব কথা বলেন।

 ডাঃ মোঃ এমদাদুল হক বলেন, এইচএস কোডের জটিলতাসহ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সাথে যে ধরনের জটিলতা দেখা দিয়েছে তা নিরসনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে একটি সভা আয়োজনের আশ^াস দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ড. নাহিদ রশীদ। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে।

শুধু গবাদি পশুর চিকিৎসা নয় বরং পোল্ট্রিসহ অন্যান্য পাখি এবং পশুর চিকিৎসাও দিচ্ছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা। স্থানীয় পর্যায়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আয়োজিত সমন্বয় সভায় স্টেকহোল্ডারদেরও সমৃপ্ত করা হয়েছে বলে জনান ডাঃ তালুকদার। বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে বলেও আশ্বাস দেন প্রাণিসম্পদ মহাসচিব।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ খাত সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু এক্সপো অনুষ্ঠিত হয়। বড় বড় শো গুলোর বেশ কয়েকটিতে পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রি বড় অংশ জুড়ে থাকলেও এককভাবে পোল্ট্রি শো বিবেচনায় শো’টি নিঃসন্দেহে প্রথম সারির বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াপসা-বিবি সভাপতি মসিউর রহমান।

তিনি বলেন, সংগঠনটি যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৯৭ সালে। স্বপ্ন ছিল বিশ^ মানের পোল্ট্রি শো আয়োজন করার। “আমাদের দেশের সাধারণ খামারিরাও উন্নত বিশে^র গবেষণালব্ধ জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পকে জানতে পারবেন; আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে পারবেন। দেশের পোল্ট্রি শিল্পের চেহারা পাল্টে যাবে”- এমনটাই চেয়েছিলাম।

মসিউর বলেন, মাত্র ৩০টা স্টল নিয়ে আইডিবি’তে মেলা শুরু হয়েছিল। এ বছর থাকছে ৬০০টি স্টল। জমা পড়েছে ১৬৭টি টেকনিক্যাল পেপার। এর মধ্যে ওরাল প্রেজেন্টেশনের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে ৩১টি দেশি ও ৯টি বিদেশী পেপার। থাকছে ৫২টি পোষ্টার প্রেজেন্টেশন। এছাড়াও প্লেনারী সেশনে বিশে^র নামকরা ১১জন পোল্ট্রি বিজ্ঞানী পেপার উপস্থাপন করবেন।

মসিউর বলেন, গ্লোবাল ওয়াপসা’তে বাংলাদেশ শাখা বিগত প্রায় ১২ বছর যাবৎ ‘সবচেয়ে বড় শাখা’ হিসেবে সম্মানজনক অবস্থান ধরে রেখেছে।

মসিউর বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, বিশ^ অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কাঁচামালের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশে^র পোল্ট্রি শিল্পের অবস্থাই বেশ নাজুক। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। ডিওসি’র দাম তলানিতে ঠেকেছে। ব্রয়লার খামারিদের অবস্থা খুবই খারাপ। ডিম বিক্রি কওে উৎপাদন খরচের টাকা আসছেনা। ফিডের কাঁচামাল কিনতেই সব শেষ, এখন তো এলসি খোলাও কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে গেছে। ২০২৩ সাল আমাদের জন্য ধৈয্যের পরীক্ষা।

তিনি বলেন, করোনা আমাদের হাইজিন শিখিয়েছে। খামারের হাইজিন, জীবনিরাপত্তা ঠিক রাখতে হবে। ফার্ম ডিজাইন করার সময়েই Waste Management এবং Dead Bird Disposalএর ব্যবস্থা ঠিক করে নিতে হবে।

এটি ছাড়া খামার করার অনুমতি দেয়া ঠিক হবেনা। মসিউর বলেন- গবেষণা বাড়াতে হবে, গবেষণার মানও বাড়াতে হবে। আগামী বছর হয়ত আমরা অনেকেই থাকবো না। তবে ইন্ডাষ্ট্রি থাকবে। তাই যার পক্ষে যতটা সম্ভব কাজ করতে হবে। ইন্ডাষ্ট্রিকে টেকসই করতে হবে। সেক্টরকে আরও বড় করতে হবে।

অতীতে আমাদের সামনে অনেক বাধা এসেছে। আমরা বুক পেতে দিয়েছি। পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষা করেছি। তাই আমাদের সবাইকে একত্রে থাকতে হবে। মসিউর বলেন- তরুণদের নেতৃত্বে আসতে হবে। অন্তত: ৫০ শতাংশ পদে উদ্যমী নতুন নেতৃত্ব থাকা উচিত। চলতি বছর মার্চে অনুষ্ঠিতব্য ১২তম International Poultry Show I Seminar কে সফল করতে সকলের সহযোগিতা চান ওয়াপসা-বিবি সভাপতি।

ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহাবুব হাসান বিগত এক বছরের কার্যক্রমের খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে যে আধুনিক পোল্ট্রি খামার, হ্যাচারি, ফিড মিল, প্রসেসিং ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে উঠেছে তার পেছনে ওয়াপসা-বিবি’র শো’ ও সেমিনারের অনেক বড় অবদান আছে। দেশে এখন নিরাপদ ডিম ও মাংস উৎপাদিত হচ্ছে। এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমে প্রিবায়োটিক ও প্রয়োবায়োটিকের ব্যবহার বেড়েছে; ভ্যাকসিনের ওপর গুরুত্ব বাড়ছে। ইন্ডাষ্ট্রি’র বৃহত্তর স্বার্থে খামারি ও ভোক্তাদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করছে ওয়াপসা-বিবি।

মাহাবুব বলেন, ১৪-১৫ মার্চ হোটেল রেডিসন ব্লু’তে আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার এবং ১৬-১৮ মাচ আইসিসিবি, ঢাকায় ১২তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো অনুষ্ঠিত হবে। শো চলাকালে ওয়াপসা-বিবি রিসার্চ গ্রান্ট কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হবে। পোল্ট্রি ও কৃষি বিষয়ক মিডিয়ার অবদানকেও মূল্যায়ন করা হবে।

রিসার্চ গ্রান্ট কার্যক্রমের আওতায় ৬টি বিশ^বিদ্যালয় থেকে একজন করে এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয় ও পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় থেকে ২জন করে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীকে রিসার্চ গ্রান্ট হিসেবে প্রত্যেক কে ৫০ হাজার টাকার বৃত্তি প্রদান করা হবে। এ লক্ষ্যে ৩৪ লক্ষ টাকার একটি ফান্ড গঠন করা হয়েছে।

গত ১২ জানুয়ারি কৃষি মন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদন বিষয়ে আলোচনা করেন মাহাবুব হাসান। তিনি বলেন, পোল্ট্রি ফিড, ব্রয়লার মাংস ও ডিম নিয়ে অপপ্রচার আছে। এ অপপ্রচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে একটি গবেষণা পরিচালনার ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশনায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) একটি গবেষণা সম্পন্ন করেছে। এ উদ্যোগের প্রারম্ভিক পর্যায়ে বিপিআইসিসি এবং ওয়াপসা-বিবি’র প্রতিনিধিরা বিএআরসি এর নির্বাহী পরিচালকের সাথে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন।

বিপিআইসিসি এবং ওয়াপসা-বিবি সভাপতি মসিউর রহমানও মাননীয় কৃষি মন্ত্রী’র সাথে এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তবে মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর আন্তরিকতা এবং বলিষ্ঠ উদ্যোগের কারণেই সময়োপযোগী এ গবেষণাটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে থাকা বিভ্রান্তি দূর হয়েছে, পোল্ট্রি শিল্প উপকৃত হয়েছে। এজন্য মাননীয় কৃষি মন্ত্রী এবং মাননীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মাহাবুব হাসান এবং মসিউর রহমান।

২০২১-২০২২ অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং সেই সাথে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন ট্রেজারার বিপ্লব কুমার প্রামাণিক।

ওয়াপসা-বিবি’র প্রায় দুই শত সদস্য বসুন্ধরা মডেল টাউনে অবস্থিত নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরি, প্রফেসর ড. মোঃ শওকত আলী, ড. নাথু রাম সরকার, ড. মোঃ গিয়াস উদ্দীন, ওয়াপসা-বিবি’র সহ-সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ বজলুর রহমান মোল্ল্যা ও জাহিদুল ইসলাম, সহ-সাধারন সম্পাদক মোঃ ফয়জুর রহমান (ফয়েজ), নির্বাহী সদস্য ড. এবিএম খালেদুজ্জামান, মোঃ আসাদুজ্জামান মেজবাহ, ড. মোঃ আল আমীন ও শাহ ফাহাদ হাবীব, সাবেক সাধারন সম্পাদক ডাঃ আলী ইমাম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডাঃ বিশ^জিৎ রায়।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ