এগ্রিকেয়ার২৪.কম ডেস্ক: কিছু বিদেশী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানীর নিরেট মুনাফার স্বার্থে যদি পোল্ট্রি শো, এক্সিবিশন, সেমিনার বা ইভেন্ট আয়োজন করা হয় তবে তা শিল্পের উন্নয়ন ঘটাবে নাকি দীর্ঘমেয়াদে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এ শংকাটি দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে।

এ অবস্থায় বিপিআইসিসি’র মাধ্যমে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে কীভাবে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া যায় সে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিপিআইসিসি’র ১৪তম কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

ডব্লিউ.পি.এস.এ বাংলাদেশ শাখা এবং আহকাব একবছর পরপর আন্তর্জাতিক মানের প্রদর্শনী ও সেমিনার করছে, এবার যুক্ত হতে যাচ্ছে বিপিআইসিসি। এ আয়োজনগুলোতে পোল্ট্রি ও লাইভস্টক সেক্টরের প্রায় প্রতিটি শাখার চাহিদা পূরণ হচ্ছে এবং এ আয়োজন থেকে অর্জিত অর্থ বাংলাদেশের পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নের জন্যই ব্যয় করা হচ্ছে।

তাই শুধুই মুনাফার লোভে যারা এ ধরনের আয়োজন করছে তাদেরকে নিরুৎসাহিত করা এবং সেই সাথে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টদের এ ধরনের আয়োজনে অংশ না নিতে অনুরোধ জানানোর পক্ষে অভিমত দিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্ট ৭টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা।      

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, এটি সত্যিই একটি জটিল অবস্থা তৈরি করেছে। বাইরের বড় কিছু কোম্পানীর আশীর্বাদ নিয়ে কিছু ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম সারা বছর জুড়েই এ ধরনের আয়োজন করছে।

প্রদর্শনীগুলোতে উচ্চহারে স্টলের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কিন্তু তারপরও পোল্ট্রি ব্যবসায়িদের পারস্পরিক সম্পর্ক যেহেতু খুবই আন্তরিক তাই একজনের আয়োজন বা অনুরোধকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে।

শুরুর দিকে বিষয়টি এতটা গুরুতর মনে হয়নি কিন্তু গত কয়েক বছর থেকে যে অবস্থা শুরু হয়েছে তাতে লাগাম টানা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে করছে বিপিআইসিসি’র সদস্যভুক্ত ৭টি সংগঠন- ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখা (ডব্লিউ.পি.এস.এ বাংলাদেশ), ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাশে (ফিআব), ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি), এনিমেল হেলথ কোম্পানীজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আহকাব), এগ প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই.পি.এ.বি), বাংলাদেশ এগ্রো ফিড ইনগ্রিডিয়েন্টস ইম্পোর্টার্স এন্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফিটা) এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বি.পি.আই.এ)।

ডব্লিউ.পি.এস.এ বাংলাদেশ শাখার সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ অঞ্জন বলেন, এভাবে চলতে পারে না। নিজেদের স্বার্থে, শিল্পের স্বার্থেই আমাদেরকে অবশ্যই বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে।

এ ধরনের আয়োজন থেকে বিদেশী ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্মগুলো যে পরিমান অর্থ উপার্জন করছে তার প্রায় পুরোটাই বাইরে চলে যাচ্ছে, দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে এর একটি টাকাও খরচ করা হচ্ছেনা। এটা কেন হবে, আমরা কেন এটা মেনে নেব? প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও এক সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

যেন চেইন শপের মতই হয়ে দাঁড়িয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল ইভেন্টগুলো। কিন্তু ভারতীয়রা এ পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। পুরো পরিস্থিতিকে তারা নিজেদের হাতে নিয়েছে এবং এতে কিন্তু তাদের ক্ষতি হয়নি বরং শিল্পের এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের লাভ হয়েছে। আমাদেরকেও এ পরিবর্তন আনতে হবে।

জনাব অঞ্জন বলেন- ডব্লিউ.পি.এস.এ বাংলাদেশ শাখার উদ্যোগে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার’ এ উপমহাদেশে পোল্ট্রি শিল্পের সবচেয়ে আসর বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে যে আর্থিক মুনাফা আসে তার প্রতিটি পয়সা বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয়।

তিনি বলেন- এ ধরনের আয়োজনে পোল্ট্রি শিল্পের প্রতিটি শাখা এবং প্রতিটি অ্যাসোসিয়েশনের অংশীদারিত্ব যেন সুনিশ্চিত হয় সে লক্ষ্যে এবার ‘১১তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার’ এর আয়োজন ভিন্নভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে।

সবাই যেন এ আয়োজনকে তাঁদের নিজেদের আয়োজন বলে মনে করেন, সবার যেন ওনারশীপ থাকে সেজন্য এবার এ আয়োজনের সাথে বিপিআইসিসি’কে যুক্ত করা হয়েছে। তাই এখন থেকে এটি শুধুমাত্র ডব্লিউ.পি.এস.এ বাংলাদেশ শাখা’র বিষয় নয় বরং এটি আমাদের সবার প্রোগ্রাম। 

ডব্লিউ.পি.এস.এ বাংলাদেশ শাখার সাধারন সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান বলেন, এবার ‘ইন্টারন্যাশনাল টেকনিক্যাল সেমিনার’ আয়োজন করবে ডব্লিউ.পি.এস.এ বাংলাদেশ শাখা এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল পোল্ট্রি শো’টি যৌথভাবে আয়োজন করবে ডব্লিউ.পি.এস.এ বাংলাদেশ শাখা ও বিপিআইসিসি।

সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে- ৫ ও ৬ মার্চ, ২০১৯, ঢাকা রিজেন্সি হোটেলে এবং ‘ইন্টারন্যাশনাল পোল্ট্রি শো’ অনুষ্ঠিত হবে ৭, ৮ ও ৯ মার্চ, বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (আইসিসিবি)। জনাব মাহাবুব বলেন- এবার স্টেকহোল্ডারগণ যেমন সেমিনারে অংশগ্রহণ করতে পারবেন, একইভাবে পোল্ট্রি শো’তেও পুরোপুরিভাবে মনোযোগ দিতে পারবেন। ফলে জ্ঞান, শিক্ষা এবং শো-কেসিং সবই হবে সমান তালে।

জনাব মসিউর বলেন, আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো’ই শুধু নয় পোল্ট্রি শিল্পের জন্য, ডিমান্ড এবং সাপ্লাই চেইনকে আরও শক্তিশালী করা, শিল্পের প্রমোশন ও ব্রান্ডিং এর জন্য যত ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন তার সব কিছুর সাথেই যুক্ত থাকবে বিপিআইসিসি।

আর বিপিআইসিসি মানেই হচ্ছে আহকাব, বাফিটা, বি.এ.বি, বি.পি.আই.এ, ই.পি.এ.বি, ফিআব এবং ডব্লিউপিএসএ-বাংলাদেশ। জনাব মসিউর বলেন- আগামী ৫ বছর ইনটেনসিভলি কাজ হবে। বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে।

এটি সম্ভব হবে যদি আমরা একসাথে থাকি, একসাথে চলি, সামগ্রিকভাবে পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নের কথা ভাবি এবং কাজ করি। সেক্টর বড় হলে সকলেই লাভবান হবেন- দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।

তাই পোল্ট্রি শিল্পের বৃহত্তর স্বার্থে ‘একসাথে চলো’ নীতিতে একতাবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান মসিউর।  বিপিআইসিসি এর পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।