মেহেদী হাসান, নঁওগা থেকে ফিরে: শীত ও গরম উভয় সময়েই খামারের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ খামারিদের। তবে ভালো ও উন্নত মানের সিমেন্ট শীট সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বড় ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে আনোয়ার সিমেন্ট শীট।

শিক্ষিত থেকে শুরু করে সব শ্রেণির খামারিদের অন্যতম ভরসার জায়গা দখল করেছে আনোয়ার সিমেন্ট শীট। লাভজনক করে তুলছে খামার। আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহারের ফলে সফল খামারিদের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রকৌশলী ড. ফিজার আহম্মেদ।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর সাথে আলাপকালে এ প্রকৌশলী জানালেন তাঁর খামারটির লাভজনক হয়ে ওঠার গল্প। আনোয়ার সিমেন্ট শীট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে গল্প শোনালেন ড. ফিজার আহম্মেদ।

নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার এক প্রত্যন্ত অঞ্চল বেড়াডাঙ্গা আদিবাসী এলাকায় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে ড. ফিজার আহম্মেদ এর ‘তালঝারি কৃষি খামার’।

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা শেষে বিজনেস ইনফরমেশনে জার্মানি থেকে নিয়েছেন উচ্চতর ডিগ্রি। বর্তমানে ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশলান ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন।

আধুনিক খামার ব্যবস্থাপনায় তিনি খামারে ব্যবহার করেছেন সিমেন্ট শীট। তিনি বলেন, আমাদের এলাকা চরম রুক্ষ একটা এলাকা। শীতের সময় প্রচন্ড শীত, গরমের সময় প্রচন্ড গরম। গরমের সময় যেখানে সাধারণ টিনের ঘরে ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে যায় সেখানে আনোয়ার সিমেন্ট শীটের কারণে ৩০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা থাকে। এর ফলে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। নইলে গরমে মুরগি হিট স্ট্রোক করে মারা যায়। আবার ঠান্ডায় রক্ত আমাশয়, সর্দি সহ বিভিন্ন রোগ হয়। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থাকলে এসব সমস্যা হয় না।

আনোয়ার সিমেন্ট শীটের খোঁজ পাওয়া বিষয়ে তিনি বলেন, গত ২০১৯ ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক মেলায় আনোয়ার সিমেন্ট শীট সম্পর্কে জানতে পারি। তাঁদের কথা শুনে আমি আশস্ত হই।

আনোয়ার সিমেন্ট শীটের পক্ষ থেকে বলা হয়, শীতের সময় শীত কম হবে আবার গরমের সময় গরম কম হবে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এরপর আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহার করে দেখি দেখি সত্যি-সত্যিই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সে হিসেবে দামও তুলনামূলক কম।

কৃষি খামারে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে এ প্রকৌশলী এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, শিক্ষকতার পাশাপাশি ২০১৬ সাল থেকে নিজেকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেষ্টা করছেন। প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি খাতের উন্নতি কিভাবে করা যায় এ বিষয়ে গবেষণা করছেন দীর্ঘদিন। গবেষণাকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতেই নিজ গ্রামে পৌনে দুই একর জমিতে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকায় গড়ে তুলেছেন আধুনিক কৃষি খামার। যা ক্রমাগত বাড়ানো হচ্ছে।

স্ত্রী ২ ছেলে সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকলেও দেশের বাইরে থাকাকালীন সময়ে বন্ধুর সাহায্যে নিজ গ্রামে খামারের কাজ শুরু করেন। দফায় দফায় টাকা পাঠিয়ে গড়েছেন কৃষি খামারের ভিত। বর্তমানে খামার থেকে আয় হচ্ছে মাসিক ৩ লাখ টাকা।

খামারে রয়েছে প্রায় ৩০টি গরু, এর মধ্যে গাভী ১৫টি। সোনালী প্যারেন্টস ১২০০, লেয়ার মুরগি রয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার, গাড়ল ১৫টি। এছাড়াও রয়েছে ভার্মি কম্পোস্ট প্রজেক্ট, বায়োগ্যাস প্লান্ট। খামারের গরুগুলোকে পুষ্টিকর খাবার যোগাতে ৩ একর জমিতে চাষ করা হয়েছে উন্নত জাতের ঘাস।

বিশাল খামার দেখাশুনা করার জন্য রয়েছে ম্যানেজারসহ নিয়মিত-অনিয়মিত মিলিয়ে প্রায় ১৭ জন কর্মচারী। এদের মধ্যে ২ জন নারী রান্নাকরাসহ নানান বিষয়ে সহযোগিতা করে থাকেন। এখানে একজন কর্মচারীর বেতন প্রায় ১৪ হাজার টাকা।

নিজের খামারে উৎপন্ন দুধ দিয়ে তৈরি হয় দই, ঘি, মাখন, মিষ্টিসহ নানান বায়োপ্রডাক্ট। আর এসব বিক্রি হয় নিজস্ব বিক্রয় কেন্দ্র স্থানীয় বাজারে।

খামারে রোগ বালাই, পরামর্শ সার্বিক বিষয়ে প্রণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতা পান কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত আমাদের এখানে আসেন। এছাড়াও ব্রান্ডের-ভালো ঔষধ কোম্পানির লোকজন এখানে আসেন। কোন ঔষুধ বেশি কার্যকরী, খামার ম্যানেজমেন্ট হচ্ছে কি না এসব বিষয়সহ নানান পরামর্শ তাঁরা দিয়ে থাকেন। খামারের দেখাশুনা করার জন্য ম্যানেজার ও আমার ছেলে-পেলেরা আছেন তাঁরাই মূলত দেখাশুনা করেন। তাঁরা সবাই অভিজ্ঞতা।

খামারে রোগ বালাই ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, খামারে রোগ বালাই তো থাকবেই। ঠিকমতো নিয়মমাফিক টিকা, ভ্যাকসিন, যত্ন করতে হবে। নিয়মিত দেখভাল করলে অনেকটাই এগিয়ে নেওয়া যায়।

খামারের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি/ প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের বাজার ব্যবস্থা খুবই নাজুক। আমাদের উৎপাদিত পণ্যের ঠিকমতো দাম পাইনা। তবে এ অবস্থা সারাবছরই নয়, একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। আমি চাই সরকার এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের পথ বের করবেন।

খামারের বায়োগ্যাস প্লান্ট বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি শাখা শ্রেডা যারা রিনেবল এনার্জি নিয়ে কাজ করে। আমি শ্রেডা থেকে একটি ফান্ড পেয়েছিলাম। যা দিয়ে খামারে অটোমোটেড বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করি। এই বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে ৫০ ঘনমিটার গ্যাস উৎপন্ন করা সম্ভব। প্লান্টে ৩০ টি গরুর গোবর এবং ৫-৬ হাজার মুরগির লিটার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

পেশা শিক্ষকতা হলেও কৃষি খাতে যুক্ত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যুবকদের এই পেশায় আকৃষ্ট করতে চাই। আমার খামার মডেল হিসেবে তাঁরা আসবে, দেখবে, ট্রেনিং নেবে। অনেকেই আসছেন। ইতোমধ্যে কয়েকজন কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

শিক্ষিত যুবকদের উদ্যেশ্যে তিনি বলেন, আমি বলি, ফার্মিংটা তো অশিক্ষিতদের জন্য নয়। এখানে অনেক হিসাব নিকাশ আছে, ক্যালকুলেশন, বিভিন্ন বিষয় আছে যা একজন শিক্ষিত ছেলেই পারে। চাকরির জন্য শুধু বসে না থেকে আমাদের দেশের মাটির যে উবরতা, যে পরিবেশ তা কাজে লাগাতে পারে। আর ছোট একটি দেশ কতো মানুষের চাকরি দিতে পারবে? তাই বলি, বড় না হোক ছোট একটি শেড তৈরি করে শুরু করতে পারে। আমি যা দেখছি, তাঁরা একটা চাকরির চেয়ে অনেকগুণে এখানে লাভবান হবেন। দেশটাও এগিয়ে যাবে, সেও স্বাবলম্বী হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ