নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষতি মোকাবিলায় গ্রামের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক-খামারির জন্যে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ বিতরণের মেয়াদ বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৬ মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ মাস মেয়াদী এ ঋণের সুদ হার ৪ শতাংশ।

বুধবার (৩১ মার্চ ২০২১) বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এবং দেশে কার্যরত সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত এই ঋণ বিতরণ করতে পারবে দেশের ব্যাংকগুলো।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘কৃষিখাতের বিশেষ প্রণোদনামূলক পুনঃঅর্থায়ন স্কিমটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহক পর্যায়ে ঋণ বিতরণের সময়সীমা ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হলো। আগে বিশেষ এ তহবিলের ঋণ বিতরণের সময় সীমা ছিল চলছি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এছাড়া একক খাতে ব্যাংকের অনুকূলে বরাদ্দকৃত ঋণের ৩০ শতাংশের বেশি ঋণ বিতরণ করতে পারবে না এমন নির্দেশনা ছিল। এটির সীমা ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে।’

কৃষক-খামারির জন্যে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল

গ্রামের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক-খামারির জন্যে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল এর ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ রোববার (১২ এপ্রিল, ২০২০) করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবেলায় দিক নির্দেশনা দিতে ঢাকায় গণভবন থেকে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রণোদনা ঘোষণা দেন।

কৃষি প্রধান দেশ তাই আমাদের খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময়ে তিনি ধান কাটাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা ও নানা বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ধান কাটতে যেন যেতে পারেন কৃষি শ্রমিকেরা, সেই যাওয়ার ব্যবস্থা করা দেয়া হবে। ফসল উৎপাদনও অব্যাহত করতে হবে। এছাড়া বাড়ির ছাদে, আঙ্গিনায়, টবে গাছ লাগাতে পারেন।

সারে ভর্তুকি বাবদ আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৯০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার ঘোষাণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের শিল্প এবং ব্যবসা বাণিজ্য যাতে অব্যাহত থাকতে পারে, সেজন্য প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকার একটা প্রণোদনা ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছি।

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি খাতের জন্যও ‘বিশেষ উদ্যোগ’ নেয়ার তথ্য তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কৃষিকাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কিম গঠন করবে। শুধু কৃষি খাতের জন্যই এই ৫০০০ কোটি টাকার প্রণোদনা ফান্ড আমরা তৈরি করব।

কেবল গ্রাম অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝরি চাষিরাই এ তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘তারা কৃষি, ফুল ফল, মৎস্য চাষ, পোল্ট্রি, ডেইরি ফার্ম- ইত্যাদি উৎপাদনে এখান থেকে সহায়তা পাবেন। যাতে করে কোনো মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সেদিকে লক্ষ রেখেই আমরা এই ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা, শুধু এই কৃষি খাতে দিচ্ছি। যাতে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বীজ ও চারা বিতরণের জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।

কৃষি উৎপাদন যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয়, সেজন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে সারে ভর্তুকি বাবদ ৯০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

কৃষকেরা যেন ন্যায্য দাম পান সেটা নিশ্চিত করতেও অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন, কিছুদিনের মধ্যে বোরো ধান উঠবে, কৃষক যেন এই ফসলের ন্যায্য দাম পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাদ্য মন্ত্রণালয় গতবছরের চেয়ে বেশি ধান চাল ক্রয় করবে। ২ লাখ মেট্রিক টন বেশি ক্রয় করবে, সেই উদ্যোগটা নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে যান্ত্রিকীকরণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। আরও ১০০ কোটি টাকা এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইতোমধ্যে আরেকটা উদ্যোগ চলমান আছে। কেউ পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদাসহ মসলাজাতীয় কিছু উৎপাদন করলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মাত্রা ৪ % সুদে ঋণ দেওয়া হয়। এটাও অবাহত থাকবে।

আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষিপণ্য যেন কৃষকেরা বিক্রি করতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর হাট বাজার বসার জন্যে বড় মাঠ বেছে নেয়ার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবেদনটি তৈরিতে বিডিনিউজ২৪.কম এর সহায়তা নেয়া হয়েছে।

কৃষক-খামারির জন্যে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল ঘোষণা খাদ্য উৎপাদনে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ