নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে- প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ভারতের গম রপ্তানি বন্ধ হচ্ছে না। এছাড়া গম আমদানি বন্ধ নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই বলে জানায় কমিশন।

ভারত গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে- সম্প্রতি এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দেশে খাদ্য সংকট তৈরি অথবা দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাপ্রকাশ করেছেন অনেকে।

রোববার (১৫ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য নিশ্চিত করেছে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভারতে গম রপ্তানির ওপর ‘নিষেধাজ্ঞা’র খবর প্রকাশিত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, খাদ্যমূল্যের সঙ্গে সম্পর্কিত মূল্যস্ফীতি কমানো এবং ভারতের প্রতিবেশী ও খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকা অন্য দেশগুলোর চাহিদা পূরণে সহায়তার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

পড়তে পারেন: ভারত থেকে ১৩’শ কোটি টাকার গম আমদানি

ভারতীয় হাইকমিশনের দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ভারতে গম রপ্তানির ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ এরই মধ্যে চুক্তিবদ্ধ চালানের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। এই নির্দেশাবলী ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতেও গম রপ্তানি আটকাবে না।

পাশাপাশি, অন্য যেসব দেশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ভারতীয় গম আমদানি করতে ইচ্ছুক, ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে সেসব দেশেও গম রপ্তানি চলবে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশে যে পরিমাণ গম উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাই বাড়তি গম বাইরের দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে। গত ৯ মাসে ভারত থেকে ১৩’শ কোটি টাকার গম আমদানি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

কয়েক মাসে ব্যাপক হারে গম আমদানি বেড়েছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে। আমদানি বাড়ার কারণে প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি বেড়েছে পাঁচ গুণ।

পড়তে পারেন: এক দশকের সর্বোচ্চ দামে ভুট্টা, বেড়েছে গমের দাম

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব শাখা থেকে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে, অর্থাৎ জুলাই-মার্চ পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে গম আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৭১ হাজার ১৫০ টন। আমদানীকৃত এসব গমের মূল্য ১ হাজার ৩০৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ পর্যন্ত গম আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪৮৮ টন, যার মূল্য ২৮৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের বিভাগীয় সহকারী কমিশনার আমীর মামুন জানান, কৃষিপণ্য হিসেবে গম আমদানি বেড়েছে ব্যাপক হারে। কিন্তু খাদ্যশস্যটি আমদানি করে সরকার কোনো রকম রাজস্ব আয় করতে পারে না।

পড়তে পারেন: কমতে পারে গমের রফতানি, দাম বাড়ার পূর্বাভাস

ভোমরা স্থলবন্দরে কৃষিজাত পণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. শাহিন হোসেন জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩০-৩৫ ট্রাক গম আমদানি করছে তার প্রতিষ্ঠানটি, যা গত অর্থবছরের এ সময়ের তুলনায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। গত বছর প্রতিদিন ৮ থেকে ৯ ট্রাক গম আমদানি হয়েছিল। তিনি বলেন, দেশীয় বাজারে গমের চাহিদা বেশি থাকায় আমদানি বেড়েছে।

সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা বাজারের গম ভাঙানো মিল মুকন্দ ফ্লাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকন্দ কুমার মজুমদার জানান, অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় চলতি বছর দেশে গমের চাহিদা ব্যাপক। তিনি বলেন, আমাদের দেশে যে পরিমাণ গম উৎপাদন হয়, তাতে চাহিদা মেটে না। ফলে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়।

তার মিলে সপ্তাহে গমের চাহিদা রয়েছে ১৫-২০ হাজার কেজি। তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গমে চাহিদা মেটে না। ভারত থেকে আমদানীকৃত গম সংগ্রহ করে মিলের চাহিদা মেটান। তিনি বলেন, বর্তমানে গমের পাইকারি দর কেজিপ্রতি ৩১-৩২ টাকা।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ