প্রাণিসম্পদে ভরপুর দিনাজপুর ডিম

পোল্ট্রি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: প্রাণিসম্পদে ভরপুর দিনাজপুর, ডিম, মুরগির মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে জেলাটি। তাইতো ধান-লিচুতে ভরপুর তার নাম দিনাজপুর এক সময়ের এ প্রবাদবাক্যটি রুপ নিয়েছে প্রাণিসম্পদে ভরপুর তার নাম দিনাজপুর।

এ জেলার পোল্ট্রি ও গবাদি পশু খামারিদের সফলতার কারণে এমনটা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন দিনাজপুরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শাহিনুর আলম।



সোমবার (১১ নভেম্বর, ২০১৯) দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত নিরাপদ পোল্ট্রি পালন বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মশালার সহযোগী প্রতিষ্ঠান আনোয়ার সিমেন্ট শীট।

ডা. শাহিনুর আলম বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী দিনাজপুরের লোকসংখ্যা ৩১ লাখ ০৯ হাজার ৬২৮জন।   এ জেলায় বর্তমানে লেয়ার খামারের সংখ্যা ৩৪১টি, ব্রয়লার ৮২৯টি, হাঁসের খামার ৪৩৭টি, প্যারেন্টস্টক খামার ১১টি, গ্রান্ডপ্যারেন্টস্টক খামার ২টি, হ্যাচারী ১২টি, কোয়েল খামার ২৯টি, কবুতর খামার ৪৮৪টি, টার্কি খামার ১২৬টি, গাভীর খামার ১১২৯টি, গবাদি পশু হৃষ্টপুষ্ট খামার ৯২৬টি, মহিষের খামার ১১ টি, ছাগলের খামার ৫৯৯টি এবং ভেড়ার খামার ৩৩০টি।

ডিমের বার্ষিক চাহিদা ৩২,৩৪,০১,৩১২টি, উৎপাদিত হয় ৩৪,৪১,৩৭,৪১৯টি।  মাংসের বার্ষিক চাহিদা ১৩৬,২০২ মেট্রিক টন (দৈনিক ১২০ গ্রাম), উৎপাদিত হচ্ছে ১৪০,৩৫৫ মে:ট: (দৈনিক ১২৪ গ্রাম)। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসাব মতে চাহিদার বিপরীতে ডিমের উদ্বৃত্ত উৎপাদন ২০৭৩৬,১০৭টি এবং মাংসের উদ্বৃত্ত উৎপাদন প্রায় ৪,১৫৩ মেট্রিক টন।

জেলার পোল্ট্রি খামারি ও হ্যাচারি মালিকদের সরকারিভাবে নিবন্ধিত হওয়ার আহ্বান জানান ডাঃ শাহিনুর। তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্যের উৎপাদন নিশ্চিত করতে চায় সরকার। তাই খামারিদেরকেও এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে। নিবন্ধিত খামারিদের জন্য স্বল্পমূল্যে রোগ প্রতিষেধক টিকা ছাড়াও বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনেও সহযোগিতা করছে সরকার।

ডাঃ শাহিনুর বলেন, অনিবন্ধিত খামারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। নিবন্ধনের আওতায় না এলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

মুরগির বিষ্টা সরাসরি ভূট্টার খামারে ব্যবহার না করে কম্পোষ্ট সার তৈরির পর তা ব্যবহার করলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যাবে বলে মনে করেন এই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, খামারিরা যেন নিরোগ স্বাস্থ্যসম্মত বাচ্চা পান সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া এন্টিবায়োটিক নয়; আর প্রয়োজন হলেও এন্টিবায়োটিকের দায়িত্বশীল ব্যবহার ও তার প্রত্যাহার কাল অবশ্যই মেনে চলতে হবে বলে জানান ডাঃ শাহিনুর।

ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আব্দুস সামাদ বলেন, অসচেতনা এবং ডিলারদের প্রতি অধিক নির্ভরশীলতার কারণে সাধারন খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ডিলারের দোকানগুলো এখন একই সাথে ফিড, বাচ্চা এবং ঔষধ বিক্রি করছে- এটি কাম্য নয়।

উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঘোড়াঘাট উপজেলায় সেপ্টেম্বর মাসে ডিমের উৎপাদন ছিল ৮২৫,২২৪ টি এবং অক্টোবরে ৬৭৪,৫৬৭ টি। মাংসের উৎপাদন ছিল যথাক্রমে ৯৮.২৮ ও ৯৫.৪৪ লাখ মে.টন।

ওষুধ ব্যবহারের আগে রেজিস্টার্ড ভ্যাটেরিনারি ডাক্তারদের পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানান বিপিআইসিসি’র সেক্রেটারি জনাব দেবাশিস নাগ।

তিনি বলেন, ভোক্তার জন্য নিরাপদ ডিম ও মুরগির মাংস নিশ্চিত করতে হবে, সেই সাথে প্রাণিজ এ আমিষ যেন সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন করা যায় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং আনোয়ার সিমেন্ট শীট লিঃ এর কনসালট্যান্ট ডা. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, হিট স্ট্রেসের কারণে পোল্ট্রি ও গবাদি পশুর রোগব্যাধি বাড়ছে, খামারিদের ব্যয় বাড়ছে।

তাই সাশ্রয়ীমূল্যের প্রযুক্তি হিসেবে খামারে আনোয়ার সিমেন্ট শীট ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। পোল্ট্রি পালন, খামার ব্যবস্থাপনা, বায়োসিকিউরিটি, ওষুধ ব্যবহার বিষয়ক খামারিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডাঃ মোসাদ্দেক।

প্রাণিসম্পদে ভরপুর দিনাজপুর, ডিম, মুরগির মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন হওয়ায় জেলাবাসিকে অভিনন্দন জানিয়েছে এগ্রিকেয়ার২৪.কম পরিবার।

আরও পড়ুন: কর্মশালায় খামারিরা বলেন, লোকসানে অনেক পোল্ট্রি খামারি ব্যবসা ছাড়ছেন, সরকারকে উদ্যোগের আহ্বান