ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সবজির পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে মৌরী চাষ করে লাভবান হতে পারেন কৃষকরা। বাজারে চাহিদা থাকায় বেশি মুনাফার আশায় বিকল্প এই ফসল চাষে আকৃষ্ট হচ্ছেন কৃষকরা। খুব বেশি ভালো জমির প্রয়োজন নেই পড়ে থাকা জমিতেই চাষ করুন মৌরি। যেমনি মিলবে অতিরিক্ত মুনাফা তেমনি জমির উত্তম ব্যবহার হবে।

শীতের সবজি তোলার পর ২ থেকে ৩ মাস পড়ে থাকে জমি। তারপর আবার ফসল ফলাতে বেশ শ্রম দিতে হয় কৃষকদের। ফেলে রাখার বদলে এসময়টাতে কিছু না কিছু ফলাতে চান কৃষকরা। তাদের এই চাওয়া মেটাতে বারি-২ ও তিন জাতের মৌরি নিয়ে এসেছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।

ফসলের নাম    : মৌরি
জাতের নাম     : বারি মৌরি-১

বৈশিষ্ট্য : মৌরি গাছ উচ্চতায় ১০০-১৩০ সেন্টি মিটার পর্যন্ত হতে পারে। প্রতি গাছে গড় শাখা-প্রশাখা ৬-৭ টি, আম্বেল ৩৯ টি, প্রতি আম্বেলে আম্বেললেটের সংখ্যা প্রায় ২৭ টি এবং প্রতি আম্বেললেটে বীজের সংখ্যা প্রায় ১২ টি। প্রতি ১০০০ বীজের গড় ওজন ৫-৬ গ্রাম। বীজ এর ফলন প্রতি হেক্টরে ১.৫৩-২.০৫ টন। এজাতের জীবন কাল ১৪০-১৫০ দিন এবং বীজ সংগ্রহের সময় ২-৩ ধাপে ফসল সংগ্রহ করতে হয়।

উপযোগী এলাকা  : বৃহত্তর কুষ্টিয়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, ফরিদপুর, নাটোর, যশোর, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, বগুড়া, ময়মনসিংহ , লালমনিরহাট, মাগুরা, সহ অন্যান্য অঞ্চল যেখানে মৌরি চাষ হয়।

বপনের সময়  : কার্তিক (মধ্য অক্টোবর থেকে মধ্য নভেম্বর)
মাড়াইয়ের সময়:  চৈত্র-মধ্য বৈশাখ (মধ্য মার্চ-এপ্রিল)
বীজ/চারার হার: ৯-১২ কেজি/হে. (ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে), ৭-৯ কেজি/হে. (সারিতে বপনের ক্ষেত্রে)
বপন/ রোপনের দূরত্ব: সারি-সারি ৪০ সেমি, গাছ-গাছ ১০ সেমি (চারা পাতলা করণের মাধ্যমে)
ফলন: ১.৫- ২.০ টন/হে:

বারি মৌরি-১

আম্বেল ব্লাইট রোগ মৌরি চাষে প্রধান অন্তরায়। এর ফলে বীজের ফলন ১০০% পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়।
 
দমন ব্যবস্থা: আম্বেল ব্লাইটঃ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি এমিস্টারটপ মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

 পোকামাকড় ও দমন ব্যবস্থা

 পোকামাকড়: কীট পতঙ্গের মধ্যে মৌরিতে জাব পোকার আক্রমন লক্ষ করা যায়।
 দমন ব্যবস্থা: প্রতি লিটার পানিতে ১-২ মিলি লিটার ম্যালাথিয়ন-৫৭ ইসি বা ০.৫ গ্রাম লিটার কনফিডর ভালোভাবে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে।

 সার ব্যবস্থাপনা

মৌরি চাষের জন্য হেক্টর প্রতি নীচের হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নামমোট পরিমাণ (কেজি)শেষ চাষের সময় প্রয়োগ (কেজি)পরবর্তী পরিচর্যা হিসেবে প্রয়োগ
১ম কিস্তি২য় কিস্তি
গোবর/কম্পোষ্ট৫টনসব
ইউরিয়া১৮০কেজি৯০কেজি৯০কেজি
টিএসপি১৭৫কেজিসব
এমওপি১৪০কেজিসব
জিপসাম১১০কেজিসব
জিংক৩কেজিসব
বোরণ১.৫কেজিসব

জমি তৈরীর সময় গোবর, এমওপি, টিএসপি, জিপসাম, জিংক ও বোরণ সার প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজানোর ২৫ দিন পর ১ম কিস্তি এবং ফুল ফোটার পর পর বাকি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

তাই পরিত্যক্ত বা পড়ে থাকা জমিতে চাষ করুন মৌরি। দিন দিন জনসংখ্যা বাড়লেও জমির পরিমাণ কমছে। সবদিক বিবেচনায় এক ইঞ্চি জমি ফাঁকা না রেখে উত্তম ব্যবহার করুন। মৌরি চাষ বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে তথ্য শাখা কৃষি প্রযুক্তি ভান্ডার।
এগ্রিকেয়ার/এমএইচ