নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: ২০১৭ সালের ৯ মার্চ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক অফিস রাজশাহীর ফজলি আমের ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতির জন্য আবেদন করে। একইসাথে বাগদা চিংড়ির ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতির জন্য প্রায় দুই বছর পর আবেদন করে বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তর।

তবে, এই দীর্ঘ সময় পর ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসেবে একসাথে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ফজলি আম ও চিংড়ি মাছ। ইতোমধ্যে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি নেওয়ার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের রেজিস্টার মো. আবদুস সাত্তার।

আজ সোমবার (১ নভেম্বর) সকাল ১১টায় ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের আয়োজনে শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাইস্কুল গেট চত্বরে রাজশাহীর নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আমকেই জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।

এ ছাড়া মানববন্ধনে আমে ব্যবহৃত ব্যাগ কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা ও ট্যাক্স মওকুফ, নওগাঁ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আমের ওজন ৪৬ কেজির নিচে নির্ধারণের দাবি করা হয়। তারা বলেন, সবদিক দিয়েই রাজশাহী নয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য অগ্রগণ্য। তাই রাজশাহী বাদ দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য মানববন্ধন করছি। এসব দাবির সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেন জেলার আমচাষি, আমসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাবেক সচিব ও জনপ্রতিনিধিরা।

মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, ফজলি আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দ্বারে এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্ক বিভাগ তাদের ১০ নম্বর জার্নালে রাজশাহীর ফজলি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য কাজ করেছে। কিন্তু প্রকৃতভাবে রাজশাহীর চেয়ে ইতিহাস, উৎপাদনের পরিমাণ ও নানান দিক দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আমই এগিয়ে রয়েছে বহুকাল থেকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আমই সেরা। রাজশাহীর ফজলি বাদ দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম জিআই স্বীকৃতি দেওয়ায় যুক্তিযুক্ত। কারণ উৎপাদনে বেশি, স্বাদে ও ঐতিহ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আমই সেরা।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব জিল্লার রহমান, শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস, সদস্য সচিব সাংবাদিক আহসান হাবিব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষিপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম ও ছত্রাজিতপুর আলাবক্স ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রোপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। জিআই সনদ পেলে ফজলি আম ও বাগড়া চিংড়ি উৎপাদন করার অধিকার এবং আইনি সুরক্ষা পাবে। অন্য কোনো দেশ আর সেগুলোকে নিজেদের বলে দাবি করতে পারবে না।

পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রথম দফায় ৩টি পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। এগুলো হচ্ছে- জামদানি, ইলিশ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম। দ্বিতীয় ধাপে ৬টি পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক স্বীকৃতি মেলে। পণ্যগুলো হলো- ঢাকাই মসলিন, রাজশাহী সিল্ক, কালিজিরা চাল, দিনাজপুরের কাটারিভোগ, বিজয়পুরের (নেত্রকোনা) সাদামাটি ও শতরঞ্জি। এর সঙ্গে ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ি যুক্ত হলে মোট জিআই পণ্য হবে ১১টি।

সরকারের পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগের রেজিস্টার মো. আবদুস সাত্তার জানান, ফজলি আম ও বাগদা চিংড়ির জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে গেজেট প্রকাশ করা হয়ে গেছে। আর মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে সনদ দেওয়ার কাজ শেষ হয়ে যাবে।

আবদুস সাত্তার আরোও জানান, নিয়ম অনুযায়ী স্বীকৃতির জন্য আবেদন আসার পরে এই দুটি কৃষি পণ্যের ভৌগোলিক নির্দেশক যাচাই করা হয়েছে, দুটি জার্নাল প্রকাশ করা হয়েছে। এই পণ্যের নির্দেশক নিয়ে এখনো কেউ আপত্তি করেনি। জার্নাল প্রকাশের দুই মাসের মধ্যে এটি নিজেদের বলে কেউ আপত্তি না করলে সনদ দেওয়া হয়।

আমের মৌসুমের শেষের দিকে বাজারে আসা ফজলি পাশের দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও উৎপাদন হয়। আর লবণাক্ত পানির বাগদা চিংড়ি এশিয়ার বেশ কিছু দেশে হয়। কিন্তু এই কৃষিপণ্য দুটি কেন বাংলাদেশের জিআই সনদ কেন পাবে সেটি ব্যাখ্যা করেন মো. আবদুস সাত্তার।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ