সৃজন পাল, ইন্সটিটিউট অব মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারিজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: বাংলাদেশের মোট সামুদ্রিক সীমা ১, ১৮, ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার। এই সীমার মধ্যে লুকিয়ে আছে অজানা রহস্য, আছে নানান সামুদ্রিক সম্পদের বাহার! এ সব সম্পদের অনুসন্ধান এবং গবেষণা করা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে এ ব্লু ইকোনমির যুগে।

বাংলাদেশের সীমানার সামুদ্রিক সম্পদের পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান করার জন্য আগে থেকে-ই সাহায্য করে আসছিলো বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা এ বংদেশ। সাথে দেশীয় সহযোগিতা তো আছেই।

বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশের জরীপ কাজের বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছিল আরও আগে থেকেই এবং সেগুলো এখনো চলমান। এরই ধারাবাহিক তায়নতুন এবং অত্যাধুনিক জরীপ জাহাজ আসলো বাংলাদেশে।

জাহাজের নাম DR. FRIDTJOF NANSEN. শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর থেকে ছেড়ে আসা জাহাজটি গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের সাইলোজেটিতে এসে পৌঁছেছে। উন্নত প্রযুক্তির এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা করে জাহাজটি বাংলাদেশে আসে মূলত মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পীড়নে।

এক্ষেত্রে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) যথেষ্ট আন্তরিক ছিল কেননা, জাহাজটি পরিচালনার দায়িত্বেই আছে এই  FAO এবং নরওয়ে সরকারের  Norwegian Agency for Development Cooperation (NORAD).

গত বছরের মার্চ মাসে এই জাহাজটি তৈরী করে Astilleros Gondan নামের একটি shipbuilder’s কোম্পানি, যার উদ্দেশ্য ছিল সমুদ্র ও মৎস্য নিয়ে গবেষণা করবে জাহাজটি। জাহাজটি পরিচালনার দায়িত্বে আছে ইনস্টিটিউট অব মেরিন রিসার্চ (IMR) এবং নরওয়ের University of Bergen (UiB)।জাহাজটি পূর্ণাঙ্গ ভাবে তৈরীর পর সারাবিশ্বে  FAO ‘র  সহযোগিতায় সামুদ্রিক ও মৎস্য সংক্রান্ত নান জরীপ কাজ করে যাচ্ছে।

দৈর্ঘ্য- ৭৪.৫ মিটার, প্রস্থ- ১৭.৪ মিটার এবং নিচের দিকের গভীরতা- ৮.৬ মিটার (প্রায়)। জাহাজের সর্বোচ্চ গতি ১৪.৫ নট। জাহাজটিতে  ৪৯০ ঘন মিটার জ্বালানি (MDO), ১৭৫ ঘনমিটার পানি এবং আরও ৪৫০ ঘনমিটার ব্যালস্ট রাখার মতো সক্ষমতা আছে। এতে ১৫ জন নাবিক এবং ৩০ জন বিজ্ঞানীসহ মোট ৪৫ জন অভিযাত্রীর এক সাথে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

এটি শাব্দিক তরঙ্গের (Acoustics) মাধ্যমে সার্ভে করে। এখানে উল্লেখযোগ্য যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে- ১টি প্ল্যাংটন-বেন থোসল্যাব, ১টি ফিশল্যাব, ১টি ড্রাইল্যাব, ১টি ওয়েটল্যাব, ১টি কম্পিউটার ল্যাব,  CTD হ্যাঙ্গার (২৭ বর্গমিটার), সায়েন্টিফিক হ্যাঙ্গার (৫৩ বর্গমিটার), CTD রোসেট, আবহাওয়া স্টেশন, স্প্লিটবীম, ইকো-সাউন্ডার, অ্যাকুস্টিক ডপলার কারেন্ট প্রোফাইলার (ADCP), ফিশারিজসোনার, ওশানসার্ভেয়ার, ২টি  ব্যাথিমেট্রিক মাল্টি বীম ইকো-সাউন্ডার যার একটি ২০০০ মিটার এবং অন্যটি ৫০০০ মিটার গভীরতার ক্ষেত্রে কাজে দেয়। এটি একটি তৃতীয় প্রজন্মের জাহাজ।

বাংলাদেশে কি করবে এই জাহাজ?

আগস্ট মাসের ২ তারিখ থেকে ১৭ তারিখ মোট ১৬ দিন বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে জরীপ করবে এই জাহাজ। এই সময়ে এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিভিন্ন স্তরের জীববৈচিত্র্য অনুসন্ধান করবে, পানির গুণাগুণ, সমুদ্রের অক্সিজেন শূণ্য এলাকা নির্ণয় করবে, মাৎস্য সম্পদের প্রাচুর্যের এবং সমস্যা চিহ্নিত করবে, মাটির নমুনা সংগ্রহ, সামুদ্রিক দূষণের তথ্য দিবে এবং আরও নানা ধরণের জরীপ/সার্ভে করবে।

এজন্য জাহাজটিতে মোট ৩০ বিজ্ঞানী এবং ১৫ জন নাবিক অবস্থান করবেন। ৩০ জন বিজ্ঞানীর মধ্যে ১৮ জন দেশীয় এবং বাকী ১২ জন বিদেশীয়। এখানে নরওয়ে, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং পর্তুগীজ বিজ্ঞানিরা রয়েছেন।

বাংলাদেশের বিজ্ঞানিরা মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ও শানোগ্রাফিক রিসার্স ইনস্টিটিউট (BORI), বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (BFRI), বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক রয়েছেন।

জাহাজটিতে ৬ ঘন্টা পালা করে দিনের ৪ টি ভাগে কাজ হবে। গবেষণা কাজ শেষ হলে জাহাজটি ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাবে। বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদ গবেষণায় এটি নিতান্তই একটি চমৎকার উদ্দ্যোগ।

জাহাজের জরীপ শেষে হয়তো জানা যাবে অজানা অনেক তথ্য যা বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদের আহরণের তা গিদজোগাবে এবং অর্থনীতির জন্য হবে এক অনন্য মাইলফলক, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীগণ। পূরণ হোক আশা, নতুন উদ্যমে উচ্ছ্বাসিত হোক সোনার বাংলা।

তথ্যসূত্র: 1.https://www.ship-technology.com/projects/rv-dr-fridtjof-nansen-advanced-research-vessel/ 2.http://www.fao.org/in-action/eaf-nansen/en/  3. প্রথম আলো- ২আগস্ট, ২০১৮ (পৃষ্টা-৩) 3. FRIDTJOF NANSEN www.gondan.com, DR. FRIDTJOF NANSEN: অত্যাধুনিক মানের গবেষণা জাহাজ!