ইউসুফ আলী সুমন, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর বদলগাছীতে অতি বৃষ্টিতে রবিশস্যে ক্ষতির শঙ্কায় কৃষকরা। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে শীতকালীন আগাম রবিশস্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমে আসলে ক্ষতির পরিমান কম হতে পারে বলে আশা কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এক হাজার হেক্টর জমিতে রবিশস্য চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রবিশস্য চাষের সময় শুরু হবে ১৫ অক্টোবর থেকে। কিন্তু অতিরিক্ত লাভের আশায় কৃষকরা সাধারণত আগেই চাষাবাদ শুরু করে। অতিরিক্ত লাভ পেয়েও থাকে এ অঞ্চলের কৃষক। তবে এবছর অতিরিক্ত ও দীর্ঘমেয়াদী বর্ষার কারণে ফসলগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বদলগাছী উপজেলার কৃষকরা জানান, আগাম শীতকালীন শস্য হিসেবে তারা সাধারণত ফুলকপি, বাধাকপি, লালশাক, পালং শাক, শিম, গাজর, টমেটো, মূলা ইত্যাদি সবজি চাষ করে থাকে। কিন্তু এ মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এই রবিশস্যগ মাঠে পচে যাচ্ছে।

বালুভরা ইউপির কুশারমুড়ি গ্রামের আহাদ আলী বলেন, আমি পাঁচ কাঠা জমিতে পালং শাক ও ধনেপাতা রোপণ করেছিলাম। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে আমার শাক ও ধনেপাতার চারাগুলো পচে গিয়েছে।

আরোও পড়ুন: নওগাঁর মান্দায় ফের বন্যা, পাউবোর বিরুদ্ধে গাফলতির অভিযোগ

সদর ইউপির হাপানিয়া গ্রামের কৃষক জোবায়ের হোসেন বলেন, ১০ কাঠা জমিতে ২০ হাজার টাকা খরচ করে পটল লাগিয়েছিলাম। মাত্র পাঁচ হাজার টাকার পটল বিক্রি করেছি। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে গাছগুলো মরে গিয়েছে। তাই মরা গাছগুলো সরিয়ে শিমের চারা রোপণ করতে চাচ্ছি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেটাও পারছি না।

কোলা ইউপির কোলার পালশা গ্রামের মামুন হোসেন ১৫ কাঠা জমিতে ফুলকপি রোপণ করেন। ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বাজারজাত শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় সবগুলো চারা নষ্ট হয়ে গেছে।

ভোলার পালশা গ্রামের এমরান হোসেন ১২ কাঠা জমিতে পালং শাক রোপণ করেছিলেন। তিনি বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে জমিতে প্রচুর পরিমাণে আগাছা জন্মেছে। শাকের চেয়ে এখন জমিতে আগাছাই বেশি। তাই কেটে গরুকে খাওয়াচ্ছি।

বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার হামিদুল হক জানান, বিগত ১৫ বছরের তুলনায় এবছর বৃষ্টিপাত বেশি। রাজশাহী বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় (২৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত) বদলগাছীতে সর্বোচ্চ ৪৯.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ১৩ সেপ্টেম্বর বদলগাছীতে এ মাসের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৯৬.৫ মিলিমিটার। সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসে এ পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় না।

আরোও পড়ুন: নওগাঁয় পাউবোর উদাসীনতায় নষ্ট দুই হাজার বিঘা জমির ফসল

হামিদুল আরো জানান, এ বছর মৌসুমী বায়ু রাজশাহী বিভাগে বেশি সক্রিয়। ৯ থেকে ১০ দিন থেকে এ অঞ্চলে প্রতিকূল আবহাওয়া বিরাজ করছে। ফলে শীতকালীন রবিশস্য শাক, মূলা, গাজর, বেগুন, পটল ইত্যাদির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তবে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে আবহাওয়া অনুকূলে আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বদলগাছীতে অতি বৃষ্টিতে রবিশস্য ক্ষতির শঙ্কায় কৃষক এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাসান আলী বলেন, রবিশস্য রোপণের সময় শুরু হবে আরো কিছুদিন পর থেকে। আগাম চাষ করলে বেশি লাভ পাওয়া যায়। তাই অনেকে বেশি লাভের আশায় শীতকালীন রবিশস্য আগাম চাষ করে। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে আগাম শস্যগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে রোপণ করলে আশা করা যায় কৃষক ভালোভাবে রবিশস্যগুলো উৎপাদন করতে পারবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ