বন্যায় কৃষকের ক্ষতি পোষাতে

মোফাজ্জল বিদুৎ, রাজশাহী, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: চলতি বছরের বন্যায় উত্তরবঙ্গের রাজশাহীতে আউশের আবাদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩১ কোটি টাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, জেলার একাধিক উপজেলায় দুই হাজার ৮০০ হেক্টর আউশের জমি বন্যায় তলিয়ে গেছে। এসব ফসলের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সৃষ্ট বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এর ফলে বন্যার পানি নিষ্কাশন হতে সময় লাগছে। এতে দীর্ঘ সময় পানির নিচে ধান গাছ থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

চাষিরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের বন্যার লোকসান অনেক বেশি হবে।

জেলার মোহনপুর উপজেলার ধান চাষী মাহাবুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আউশ ধান লাগিয়ে ছিলেন। কিন্তু বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে ধান গাছ ডুবে গেছে। তার মোট ৪০ হাজার টাকার পুঁজি এখন পানিতে ডুবে আছে।

একই উপজেলার আইয়ুব আলী বলেন, বোরো ধানের ভালো দাম পাওয়ায় এবার আউশের আবাদ বেশি করেছি। ৫ বিঘা জমিতে আউশ ধান লাগিয়েছিলাম। সব জমির ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। এতে ৫০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এছাড়াও বাগমারা উপজেলার ধান চাষী আবুল কালাম কয়েক বিঘা জমিতে আউশ ধান রোপণ করেছিলেন। বন্যায় তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহী জেলায় চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার ৯৬০ হেক্টরের চেয়ে ১০ হেক্টর বেশি জমিতে আউশ ধানের চাষাবাদ করেছেন কৃষকেরা। প্রতি বছরের মত এবারো জেলার তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলায় এলাকায় সবচেয়ে বেশি মৌসুমী ধান লাগিয়েছেন কৃষকেরা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামছুল হক এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, এবার বন্যার কারণে কৃষিতে মোট ক্ষতি হয়েছে ৪০ কোটি ৬৩ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা। এর মধ্যে ধানের ক্ষতি ৩০ কোটি ৮৯ লক্ষ। এতে ৩২ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

তিনি বলেন, কৃষকের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে দিতে আমরা ইতিমধ্যে প্রণোদনার কাজ শুরু করেছি। এর মধ্যে ৪ হাজার কৃষকে বিনামূল্যে মাসকালাই বীজ ও তিন হাজার ২০০ কৃষককে সার ও বীজ দিচ্ছি। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মোহনপুর ও বাগমারার কৃষকরা। এখানে কৃষকের ধান তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে সরাসরিভাবে তাদের জন্য কাজ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকায় প্রায় সব জমিই তিন ফসলি। কিছু দুই-এক ফসলি জমি রয়েছে। ইতিমধ্যে সেই জমিগুলো আমরা চিহ্নিত করে ফসল করার টার্গেট নিয়েছি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, রাজশাহীতে বন্যায় আউশের ক্ষতি ৩১ কোটি, বিপাকে কৃষক এ সময়ে দরকার সরকারি সহযোগিতা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিকের কাছে পৌঁছাতে হবে প্রণোদনার উপকরণ।