রাজশাহী প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: এবারে তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহে ঠান্ডাজনিত কারণে পানের বাজারে ধ্বস নেমেছে। বর্তমানে তীব্রশীত, কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও পানপাতা ঝরার রেশ এখনো কাটে নি। এরই মধ্যে অনেক চাষি সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। পানচাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন, ভালো নেই তারা।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২ হাজার ১৯৬ হেক্টর (১৬ হাজার ৩৪০ বিঘা) জমিতে পানের আবাদ রয়েছে।

রাজশাহীতে জানুয়ারি মাসের পুরোটাই ছিল তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ। এই ঠান্ডা আবহাওয়া আঘাত হেনেছে পানবরজে। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পান চাষিদের কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে জেলার চারটি উপজেলায় অনেকটা গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। ভেঙ্গে গেছে পানচাষিদের আগামী দিনের স্বপ্ন।

জেলার মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি গ্রামের বিভিন্ন পানবরজে সরোজমিনে দেখা গেছে, বরজে পান নেই। শুধু ওয়াশির সাথে পানের লতা আটকানো আছে। লতা প্রতি দু,চারটে পান থাকলেও অনেকটায় বিবর্ণ। কোনটাই কাল দাগ, কোনটা হলদে, আবার কোনটাতে কাল-হলদে দুটোই বিরাজ করছে। যা একটু ঝাকুনি দিলেই পড়ে যাচ্ছে।

আবার যেগুলো একটু ভাল আছে মনে করা হচ্ছে সেগুলোও বরজ থেকে ভেঙে গোছানোর পরে দেখা দিচ্ছে ভাল পানে কালো দাগ ও পচন রোগ। আর এতেই ভাগ্য টলে গেছে চাষিদের। ভবিষ্যৎ চিন্তায় আতঙ্কসহ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা।

পানের পাতাই যেন সোনা। জেলায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে পান অতি গুরুত্বপূর্ণ ফসল। রাজশাহীর সুস্বাদু পানের কদর সবসময়ই বেশি। কিন্তু ঠান্ডা ও খরা সহিষ্ণু নতুন জাতের উদ্ভাবন না হওয়ায় প্রতিবছরই আবহাওয়াজনিত কারণে গাছসহ পানে নানা রোগে আক্রমন করে থাকে। তবে চাষিদের পান গবেষণাগারের দাবির বাস্তবায়ন এখনো হয়নি। এ প্রেক্ষিতে কান্ড পচা ও পাতা মরা রোগে চাষিদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

ওই উপজেলার মৌগাছি গ্রামের পানচাষি শেখ মাহবুব আলম তোতা, শেখ সামশুদ্দিন ও সুনখাজুর গ্রামের সাইবত বলেন, বেশী দাম পাবার আশায় একটু স্বাবলম্বিরা ফেরুয়ারি মাসের শেষে থেকে পান বাজারজাত করে থাকেন। প্রতিবছরই কিছু কিছু পান বিভিন্ন কারণে ঝরে যায়। এরপরেও যে পান অবশিষ্ট থাকে তাতেই বরজের পুরো খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়।

কিন্তু এবারে তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহ ধকলে যেভাবে বরজের পান ঝরেছে তার এরআগে কখনোই হয়নি। ভবিষ্যত চিন্তায় অনেকে চোখে অন্ধকার দেখছে। মনের দুঃখে অনেকে বরজে যাওয়ায় বাদ দিয়েছে।

নাম না প্রকাশ করা শর্তে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের এগ্রোনমী অ্যান্ড এগ্রিকালচার এক্সটেনসন বিভাগের এক সহযোগী অধ্যাপক জানান, বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায় পানের পাতাই সোনা। সনাতন নিয়ম ছেড়ে আধুনিক জ্ঞানের আলোয় গবেষণাভিত্তিক পান চাষ করে ১ বিঘা জমি থেকে বছরে ২/৩ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

কিন্তু পুরাতন পদ্ধতিতে পান চাষ করার কারণে চাষিদের ভাগ্যের ওপরে নির্ভর করে থাকতে হয়। কোন কোন সময় আবাদ ভাল হয়। আবার কখনো খারাপ। তাই অঞ্চলে পান গবেষণা কেন্দ্র একান্ত প্রয়োজন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) দেব দুলাল ঢালী পানের রোগ-বালাই এবং একটি গবেষণাগার স্থাপন প্রশ্নে বলেন, এ ব্যাপারে কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। পানের রোগ-বালাই সম্পর্কে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, জীব মানেই পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে সাথে রোগ বালায়ও আক্রমন করে। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক যত্ন নিলে আশানুরুপ ফল পাবেন চাষিরা।

তিনি বলেন, পরিবেশের সাথে খাপখাওয়ানো যায় এমন নতুন জাত উদ্ভাবন হলে চাষিদের ভাল হতো। শেষে বলেন এখনো গবেষণাগার স্থাপনের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।

 

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৮