ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: শীতকালীন মৌসুমে কুলের চাহিদা থাকায় গত কয়েক বছর থেকে বাগান মালিকরা বিভিন্ন জাতের কুল বাজারজাত করতে সক্ষম হচ্ছে। গতবছর কৃষি বিভাগের উদ্ভাবিত বলসুন্দরী নামের কুলের চারা বেশ কিছু বাগান মালিকের মধ্যে বিতরণ করেছে দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তর। এরকম এক চাষি বদরুল আলম। যিনি ২ একর জমিতে বলসুন্দরী কুলে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখছেন।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার আদর্শ কৃষক বদরুল আলম। বছর খানেক আগে কৃষি বিভাগের উদ্ভাবন করা নতুন জাতের কুল বলসুন্দরী বাগান করেন তিনি। এবার ফুলে ফুলে ভরে গেলে তার বাগান। আশা করছেন ভালো ফলনের।

তিনি জানান, চলতি বছর এই মৌসুমে দিনাজপুর ঘোড়াঘাট উপজেলার নিতাইশা এলাকায় ২ একর জমিতে বলসুন্দরী কুল জাতের বরই বাগান করেছেন আদর্শ কৃষক বদরুল আলম। বাগানের বয়স এক বছর পেরিয়ে যেতেই গাছে ফুল এসেছে। হেমন্তের হাওয়ায় কার্তিক মাসের শুরুতেই ছোট-ছোট গুটিতে ভরে উঠেছে প্রতিটি বলসুন্দরী কুল গাছ। ফুল আর গুটির ভারে নুয়ে পড়ছে গাছগুলো। বদরুল ইসলাম অপেক্ষার প্রহর গুণছেন কুল বরই বিক্রি করার জন্য।

বাগান মালিক বদরুল আলম জানান- বাগানে প্রায় ১ হাজার গাছ রয়েছে। বাগান করতে ব্যায় হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টাকা। বাগান তৈরির শুরু থেকে আমি নিজে শ্রমিকদের নিয়ে বাগান পরিচর্যার কাজ করে যাচ্ছি। গাছের যতœ নেয়া এবং সঠিক সময় জৈব ও গোবর সারসহ কিছু রাসায়নিক সারও গাছের গোড়ায় দূরত্ব বজায় রেখে দেয়া হয়েছে। গাছে যাতে কোনো ধনের প্রাকৃতিক বালাই আক্রান্ত করতে না পারে এ জন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শে জীবানুমুক্ত ট্যাবলেট প্রত্যেক গাছ থেকে ১ ফুট দূর দিয়ে ৬ইঞ্চি নিতে পুতে দেয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কমের আরোও নিউজ পড়তে পারেন:

গ্রীষ্মকালীন মাশরুম চাষে স্বপ্ন বুনছেন তরিকুল

বরই চাষে ওমান ফেরত দুই বন্ধুর লাভ ৩ লাখ

পদ্মার চরে গার্ডলিং পদ্ধতিতে শত শত বিঘা জমিতে বরই চাষ

বাগানের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক সরেন হাসদা জানান, এই বাগান শুরু থেকে দিন ও রাতে সে বাগানে থেকে দেখাশুনার কাজ করে। এ ধরনের একটি নতুন উদ্ভাবনের ফল বলসুন্দরী কুল বাগানের পরিচর্যার কাজে থাকতে পেরে সে নিজে খুব খুশী। গাছগুলোতে ফুল ও ফলের গুটি বের হতে শুরু করেছে। ফলগুলো বড় হলে আরও ভাল দেখা যাবে বলে তার আশ্বাস।

বদরুল বলেন, গাছ লাগানো আমার নেশা। আর নেশা থেকেই একে আমি পেশা হিসেবে নিয়েছি। বাগানে ড্রাগন, মাল্টা এবং পেঁপে গাছ আছে। অনেক আশা এবং স্বপ্ন নিয়ে বলসুন্দরী কুল বরই বাগান করেছি। প্রতিটি গাছে পর্যাপ্ত ফুল এবং গুটি এসেছে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বরই বাজারজাত করবো। আশা করছি ফলন ভালো হলে এই সিজনে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবো।

দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের ফল ও বিভিন্ন জাত উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত সহকারী পরিচালক মো. আশরাফুজ্জামান জানান, জেলার ১৩টি উপজেলাতেই শীতকালীন সময়ে কুল বরই যথেষ্ট পরিমাণ হয়ে থাকে। অনেক বাগান মালিক আম ও লিচুর বাগানের মধ্যে এবং পৃথকভাবেই কুলের আলাদা বাগান সৃজন করছেন।

জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা কৃষি অফিসার এখলাছ উদ্দিন সরকার বলেন, দিনাজপুর জেলায় ২১২ হেক্টর জমিতে এবারে বিভিন্ন জাতের কুলের বাগান রয়েছে। বাগানগুলো সঠিক পরিচর্যার জন্য কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ওই তালিকার মধ্যেই ঘোড়াঘাট উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে বরই চাষ হচ্ছে। ৭টি বরই বাগান আছে।

বদরুল ইসলাম আমাদের পরামর্শ নিয়ে উন্নত জাতের বলসুন্দরী বরই বাগান করেছেন। বাগানে প্রচুর পরিমাণে ফুল ধরেছে। বাগানটি দেখে অনেকেই বাগান তৈরির জন্য আমাদের কাছে পরামর্শ নিচ্ছেন। আশাকরি বাগান মালিক কাঙ্খিত ফল পাবেন। বলসুন্দরী কুলে ভাগ্যবদলের স্বপ্ন দেখছেন বদরুল সংবাদের তথ্য বাসস থেকে নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ