এগ্রিকেয়ার২৪.কম ডেস্ক: ‘খাল কেটে কুমির আনা’ প্রবাদ থাকলেও ঘটনা সত্যি। বাংলাদেশেও কুমির চাষে সাফল্য পেয়েছেন ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার উথুরার ব্যবসায়ী মোস্তাক আহম্মেদ ও মেজবাউল হক। ১৫ একর জায়গা জুড়ে বাণিজ্যিক ব্যতিক্রমী খামারটি ২০০৪ সালে ‘রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড’ নামে যাত্রা শুরু করে।

চাইলে আপনিও শুরু করতে পারেন কুমিরের খামার। বিশ্ব বাজারে কুমিরের চামড়া, মাংস, হাড়, দাঁত চড়া দামে বিক্রি হয়। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে এগুলোর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

রপ্তানির শর্তে বাংলাদেশে কুমির পালন করার লাইসেন্স দিয়ে থাকে বন বিভাগ। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ এর ধারা ৫২, ২৪ ধারা অনুযায়ী কুমির লালন-পালন বিধিমালা, ২০১৯ জারি করেছে সরকার। সেই অনুযায়ী, বন বিভাগ থেকে লাইসেন্স নিয়ে কুমিরের খামার স্থাপন করা যায়।

খামার যেখানে স্থাপন করা হবে, সেই এলাকার বন কর্মকর্তার কাছ থেকে এই লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হয়। খামার স্থাপনের জন্য সিটি করপোরেশন এলাকায় লাইসেন্স ফি এক লাখ টাকা, সিটি করপোরেশনের বাইরের এলাকার জন্য ৫০ হাজার টাকা।

প্রতিটি কুমিরের জন্য মালিককে বাৎসরিক ভিত্তিতে পজেশন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়। প্রতিটি কুমিরের জন্য এক হাজার টাকা পজেশন ফি দিতে হবে। লালন-পালনের জন্য কুমির আমদানি করতে হবে, কোনোভাবেই প্রকৃতি থেকে কুমির ধরা বা সংগ্রহ করা যাবে না।

তবে সেখানে শর্ত রয়েছে, কুমির লালন-পালন বা খামার স্থাপনে কমপক্ষে পাঁচ একর বন্যামুক্ত জমি থাকতে হবে। এর দূরত্ব হবে সুন্দরবন থেকে অন্তত ১০০ কিলোমিটার। খামারে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকতে হবে।

খামারে নিরাপদ অবকাঠামো, নিরাপত্তাবেষ্টনী, বর্জ্য পরিশোধন ও খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা, কুমিরজাত পণ্যের প্রক্রিয়াজাতের জন্য সংরক্ষণাগার ইত্যাদি থাকতে হবে। কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রতিটি কুমিরের দেহে বন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে মাইক্রোচিপ লাগাতে হবে।

খামারের কুমির রপ্তানি যোগ্য হওয়ার পর দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তির মাধ্যমে কুমির বা কুমিরজাত পণ্য সংগ্রহ করে রপ্তানি করার জন্য বন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে হবে। খামারে কুমিরের হ্রাস-বৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানির সব তথ্য রেজিস্টারে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।

তবে যেসব বন্যপ্রাণী বৈধভাবে লালন-পালনের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ, এর বাইরেও অনেক সময় অনেক বন্যপ্রাণী খাঁচায় আটকে পালন করতে দেখা যায়।

সবচেয়ে বেশি বানর আটকে রেখে খেলা দেখানোর কাজ ব্যবহার করতে দেখা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন মিনি চিড়িয়াখানায় অজগর, সজারু, বিভিন্ন পাখি, বনবিড়াল, উদবিড়াল, ভোঁদড় ইত্যাদি আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল করিম বলেন, যেগুলোকে আমরা অনুমতি দিয়েছি, সেগুলো ছাড়া আর সব বন্যপ্রাণী আটকে রাখা বা পালন করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এজন্য কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান আছে।

‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। যে কোনো তথ্য পেলেই সেখানে অভিযান চালানো হয়। আমরা চেষ্টা করি যেন শতভাগ ক্ষেত্রে বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হয়।’

তিনি জানান, গত দুই-তিন বছরে তারা ৪০ হাজারের বেশি বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছেন। এসব অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে এক হাজার ৩০০ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ