কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু, সহকারী পরিচালক, জনসংযোগ ও প্রকাশনা, বাকৃবি, ময়মনসিংহ: কৃষিই কৃষ্টি, আমাদের সংস্কৃতির অনিবার্য অনুষঙ্গ। কৃষি প্রধান এই দেশে সনাতন কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়নে তথা বিজ্ঞান-ভিত্তিক চাষাবাদের মাধ্যমে টেকসই কৃষি উন্নয়ন ও কৃষি-বিজ্ঞান ভিত্তিক অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ষাটের দশকের গোড়ায় গড়ে ওঠা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশের প্রথম উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার ঐতিহ্যবাহী জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

কৃষিশিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণের পথিকৃৎ এ বিদ্যাপীঠ ১৯৬১ সনে ১৮ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৯ সনের জাতীয় শিক্ষা কমিশন এবং খাদ্য ও কৃষি কমিশনের সুপারিশের ওপর ভিত্তি করে এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। ময়মনসিংহস্থ তদানীন পূর্ব পাকিস্তান ভেটেরিনারি কলেজকে কেন্দ্র করে শুরু হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

বাংলাদেশের প্রথম উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার ঐতিহ্যবাহী জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমাগত সাফল্যের পথ বেয়ে ৫৬ বছরের গৌরবময় যাত্রাপথ অতিক্রম করে ৫৭তম বর্ষে পদার্পণ করছে- এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্যে পরম আনন্দ ও গৌরবের।

মানসম্মত উচ্চতর কৃষি শিক্ষাদান এবং কৃষি উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব বহনে সমর্থ দক্ষ কৃষিবিদ, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ তৈরি করাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। বাংলাদেশে কৃষির ক্রমোন্নতি ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ কর্মকান্ডে নিয়োজিত দক্ষ  কৃষিবিজ্ঞানীদের প্রায় সবাই এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু পরিবেশে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের ধারায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আজ আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং এ বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে প্রথমস্থানে অধিষ্ঠিত।

অবস্থান: রাজধানী ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তরে ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম প্রান্তে চিরসবুজে ঘেরা নৈসর্গিক পরিমন্ডলে প্রায় ১২০০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

শিক্ষা কার্যক্রম: ভেটেরিনারি ও কৃষি অনুষদ নামে  দু’টি অনুষদ নিয়ে ১৯৬১ সনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই পশুপালন অনুষদ নামে তৃতীয় অনুষদের যাত্রা শুরু। এরপরে ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়।

বর্তমানে ছয়টি অনুষদের আওতায় ৪৪টি শিক্ষা বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সিমেস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষা দান করা হচ্ছে। আট সিমেস্টার মেয়াদে বি.এসসি. এজি. (অনার্স), বি.এসসি. এজি. ইকন. (অনার্স), বি.এসসি. এগ্রি. ইঞ্জি., বি.এসসি. ফিশারিজ (অনার্স) এবং বি.এসসি. ফুড. ইঞ্জি. ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

ভেটেরিনারি অনুষদে ১০ সিমেস্টার মেয়াদে ডি.ভি.এম. এবং পশুপালন অনুষদে ৯ সিমেস্টার মেয়াদে বি.এসসি. এএইচ. (অনার্স) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মোট ৪৪টি বিষয়ে একটানা তিন সিমেস্টারে বিন্যস্ত কোর্স-ক্রেডিট ও গবেষণাভিত্তিক এম.এস. শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।

পিএইচ.ডি.  ডিগ্রি কার্যক্রম পূর্ণকালীন ৩ বছর মেয়াদি। বর্তমানে ৪৩ টি শিক্ষা বিভাগে ৪২ বিষয়ে পিএইচ.ডি. কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। । উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটি স্নাতকোত্তর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের সমন্বয় ও তত্ত্বাবধান করে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একমাত্র বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজটি জামালপুরের মেলান্দহে অবস্থিত।

উত্তীর্ণ গ্র্যাজুয়েট সংখ্যা: এ যাবত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৬,৯৫৬ জন স্নাতক, ১৭,৯৬৯ জন এম.এসসি./এম.এস. এবং ৬৪১ জন পিএইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেছেন। জাপান, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, ইরান, মালদ্বীপ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, শ্রীলংকা এবং নেপাল থেকে পড়াশুনা করতে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১১২ জন।

এদের মাঝে ৯৯ জন স্নাতক, ৯ জন মাষ্টার্স ও ৪ জন পিএইচ. ডি. ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মোট ৭টি সমাবর্তনের মাধ্যমে উত্তীর্ন গ্রাজুয়েটদের ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও, বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লবের জনক নোবেল লরিয়েট বিজ্ঞানী ড. নরম্যান ই. বোরলগকে সম্মানসূচক ডি.এসসি. (অনারিজ কজা) ডিগ্রি প্রদান করা হয়।

শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও জনবল: বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬টি অনুষদে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ৬৬৪৯ জন, তারমধ্যে ৫০০১জন স্নাতক, ১২৪৯জন এম.এস. এবং ৩৯৯জন পিএইচ. ডি. পর্যায়ে অধ্যয়নরত। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৫৬৬ জন শিক্ষক, ৩৫৪ জন কর্মকর্তা এবং ১,৫৩২ জন কর্মচারি কর্মরত আছেন। শিক্ষকদের মধ্যে ৩১৭ জন অধ্যাপক, ৬৭ জন সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৩৮ ও ৪৪ জন যথাক্রমে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক।

ভৌত স্থাপনা: কালের ধারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ক্রম অগ্রসরমান কর্মকান্ড পরিকল্পিতভাবে পরিচালনার জন্য এই ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো গড়ে ওঠেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল প্রশাসন ভবনসহ বিভিন্ন অনুষদীয় ভবন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, সম্প্রসারণ ভবন, জিটিআই ভবন এবং শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ১৩টি হল রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি হল ছাত্রীদের জন্য।

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি ও পরিবেশ বিজ্ঞানসহ প্রাগ্রসর গবেষণার লক্ষ্যে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত গবেষণাগার গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, সীড প্যাথলজি সেন্টার, ফিল্ড ফার্টিলিটি ক্লিনিক ল্যাব, আইপিএম ল্যাব, বায়োটেকনোলজি ল্যাব, সয়াবিন ও অয়েল সিড ল্যাব, রিপ্রোডাকটিভ বায়োটেকনোলজি ল্যাব এবং ফিশ নিউট্রিশন ও ডিজিজ ল্যাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইনষ্টিটিউট অভ এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট। এছাড়াও পশু-পাখির চিকিৎসা ও শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শিক্ষাদানের  জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ভেটেরিনারি ক্লিনিক ও অ্যানিমেল ব্লাড ব্যাংক। রয়েছে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন (প্রায় দু’ হাজার আসনবিশিষ্ট)।

প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিরল বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেন, জার্মপ্লাজম সেন্টার, প্ল্যান্ট ডিজিজ ক্লিনিক, দেশের প্রথম কৃষি মিউজিয়াম এবং উপমহাদেশের প্রথম ফিশ মিউজিয়াম। একটি বিশাল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসহ রয়েছে বিভিন্ন অনুষদীয় লাইব্রেরী। রয়েছে সুপরিসর জিমন্যাসিয়াম, স্টেডিয়াম, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রকৌশল শাখা, সুসজ্জিত অতিথি ভবন, আন্তর্জাতিক অতিথি ভবন, ক্লাব ভবন, কমিউনিটি সেন্টার, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও মন্দির। এছাড়াও রয়েছে শহীদ মিনার, মুক্তিয্দ্ধু স্মৃতিস্তম্ভ, বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাষ্কর্য বিজয়-৭১ এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্বর।

গবেষণা ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য: প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে বর্নাঢ্য গবেষণা সাফল্য । বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কার্যক্রম দু’টি প্রধান ধারায় পরিচালিত হয়ে থাকে। এর একটি ডিগ্রিভিত্তিক অপরটি প্রকল্পভিত্তিক। মাস্টার্স ও পিএইচ.ডি. পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা ডিগ্রি অর্জনের অংশ হিসেবে শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে থাকে; পক্ষান্তরে বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কোন বহিস্থ সংস্থার অর্থানুকূল্যে অপরাপর সমস্যা সমাধানমূলক প্রকল্পের গবেষণাকাজ পরিচালিত হয়। 

গবেষণা প্রকল্পসমূহ সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় ও ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম (বাউরেস) এর তত্ত্বাবধানে ১৯২২টি গবেষণা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমানে এর চলমান প্রকল্পসংখ্যা ৪৩২টি। বিদেশী অর্থায়নে চলমান মোট গবেষণা প্রকল্পের সংখ্যা ২২টি অর্থায়নকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ,জার্মানী,জাপান,যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য,অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন,নরওয়ে, ডেনমার্ক অন্যতম।

বিদেশী ও দেশীয় দাতাসংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে IFS, USDA, DFID, GTZ, NIAES, FAO, IAEA, GEF, EU, IRRI, ILRI, USAID, IDRC, ACIAR, BAU, BARC, MOST, UGC, AU-GC, BAS-USDA, MoE, DK, WORLD- FISH, DANIDA | বাউরেস এর তত্ত্বাবধানে ৬টি অনুষদের মাধ্যমে ১৪০টি প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে হস্তান্তর করা হয়েছে। কৃষক পর্যায়ে হস্তান্তরিত প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে সম্প্রতি গবেষণালব্ধ ৯টি কৃষি প্রযুক্তির প্যাটেন্ট বর্তমানে শিল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ফসল ও প্রাণির রোগ দমন পদ্ধতি, ভ্যাকসিন, শস্য ও মাছের জাত ও উৎপাদনের আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক  শস্যের জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তিসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে  বাউ-৬৩, বাউধান -২, নামে উফসী ধান এর জাত ; বড়ই  এর জনপ্রিয় জাত বাউকুল, ‘সম্পদ’ ও ‘সম্বল’, বাউ-এম/৩৯৫, বাউ-এম/৩৯৬ নামে ৪টি উফশী সরিষা জাত; ডেভিস, ব্র্যাগ, সোহাগ, জি-২ ও বিএস-৪ নামে ৫টি সয়াবিন জাত; কমলা সুন্দরী ও তৃপ্তি নামে আলুর জাত; লতিরাজ, বিলাসী ও দৌলতপুরী নামে তিনটি মুখীকচু জাত; কলা ও আনারস উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি,  রাইজোবিয়াল জৈব সার উৎপাদনে প্রযুক্তি; সয়েল টেস্টিং কিট; পেয়ারা গাছের মড়ক নিবারণ পদ্ধতি; বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহজ পদ্ধতি, সৌরতাপের সাহায্যে পাট ও ধান বীজের ফাংগাস আক্রমন নিয়ন্ত্রণ, অ্যারোবিক পদ্ধতিতে ধান চাষ প্রযুক্তি, সেচ সাশ্রয়ী শুকনো পদ্ধতিতে বোর ধান চাষ পদ্ধতি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) জার্মপ্লাজম সেন্টার কর্তৃক ৬টি নতুন জাতের রঙিন আলুর জাতসহ ৮১টি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের জাত বের করা হয়েছে। এছাড়া ২২০ প্রজাতির ১০,৫০০ মাতৃগাছসহ ২১২টি আমের, পেয়ারার ৪৭টি, লিচুর ৩২টি, ৪৮ রকমের সাইট্রাস ফল ও ৬৮ জাতের ঔষধী গাছ, ৯৮ জাতের কাঁঠালসহ বিশ্বের ৪৯টি দেশ থেকে আনা নানা ফলের জার্মপ্লাজম রয়েছে এখানে।

আফ্রিকান ধৈঞ্চার অঙ্গজ প্রজনন, গার্লিক ট্যাবলেট, এলামনডা ট্যাবলেট, আইপিএম ল্যাব বায়োপেস্টিসাইট, বিলুপ্তপ্রায় শাকসবজি ও ফলের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ ও মলিকুলার বৈশিষ্ট সনাক্তকরণ কলাকৌশল, বিভিন্ন প্রকার সবজি অগ্রবর্তী লাইন ও হাইব্রিড জাত এবং মানুষ ও পশু খাদ্য হিসেবে কাসাবার বহুবিধ ব্যবহার উদ্ভাবন প্রভৃতি অন্যতম।

মোরগ-মুরগির রানিক্ষেত রোগ ও ফাউল পক্স্রের প্রতিষেধক টিকা উৎপাদন, হাঁসের প্লেগ ভ্যাকসিন ও হাঁসমুরগির ফাউল কলেরার ভ্যাকসিন তৈরি, রাণীক্ষেত রোগ সহজেই সনাক্তকরণের মলিকুলার পদ্ধতির উদ্ভাবন, মুরগীর সালমোনোসিস রোগ সন্ক্তকরণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন, প্রাণীজ কৃষি উন্নয়নে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হাঁস-মুরগীর টিকা উৎপাদন ,সালমোনেলা ভাই ভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন, বিসিআরডিভি ভ্যাকসিন, আরডিভি ভ্যাকসিন উদ্ভাবন, মুরগী ও গবাদীপশুর ক্যাম্পাইলোব্যাকটার সনাক্তকরণের প্রযুক্তি উদ্ভাবন, পিপিআর রোগ সনাক্তকরণে পদ্ধতি, বার্ড ফ্লু ডায়াগনোসিস করার মলিকুলার পদ্ধতি, কমিউনিটি ভিত্তিক উৎপাদনমুখী ভেটেরিনারি সেবা, গবাদিপশুর ভ্রুণ প্রতিস্থাপন, ছাগল ও মহিষের কৃত্রিম প্রজনন, কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত ষাঁড়ের আগাম ফার্টিলিটি নির্ণয়, হরমোন পরীক্ষার মাধ্যমে গরু ও মহিষের গর্ভ নির্ণয়, গাভীর উলান প্রদাহ রোগ নির্নয় কীট উদ্ভাবন ও প্রতিরোধ কৌশল, ভেড়ার কৃত্রিম প্রজননে হিমায়িত ভ্রণ সংরক্ষণ এবং স্থানান্তরের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসবে সাফলতা লাভ।

গো-খাদ্য হিসেবে খড়ের সঙ্গে ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক উদ্ভাবন ও ব্যবহার, বাউ ব্রো-কালার, বাউ ব্রো-হোয়াইট নামের ব্রয়লার মুরগীর জাত উদ্ভাবন, রেড চিটাগাং জাতের গরুর কনজারভেশন, দুর্লভ জাতের ফডার জার্মপ্লাজম, হাঁসমুরগির সুষম খাদ্য তৈরি, গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ফডার খেসারি চাষ, ফডার ‘হে’ সংরক্ষণ, গ্রামের বসতবাড়িতে চরে খাওয়া অবস্থায় উন্নতজাতের হাঁস-মুরগী পালন, হাওর এলাকায় হাঁস পালনের কলাকৌশল, সুষম পোল্ট্রি খাদ্য, দেশি জাতের গরুর সঙ্গে আমেরিকান  ব্রাহমা গরুর কৃত্রিম প্রজননে দ্রুত বর্ধনশীল গরুর  জাত, হাঁস-মুরগীর উন্নতজাত উদ্ভাবন, মহিষের কৃত্রিম ভ্রণ উৎপাদন প্রযুক্তি,গবাদিপশু মোটাতাজা করণে প্রাণটেইন উদ্ভিদ চাষ এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসম্মত দই, মাখন, ঘি ইত্যাদি দুগ্ধজাত খাবার উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও বিপনণ,

কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানী গবেষণা তৎপরতার মাধ্যমে টেকসই শস্যবীমা কার্যক্রম, শস্যবহুমুখীকরণ, মুক্ত জলাশয়ে মৎসচাষীদের প্রতিষ্ঠানিক ঝণ সহায়তা দান ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের সমবায় সংগঠনকে সুসংহতকরণে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিনিধারণীমূলক সুপারিশ প্রণয়ন, কৃষি অর্থনীতিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ভূমিকা, বাংলাদেশে কৃষি পরিবারের বায়োগ্যাস উৎপাদনের দক্ষতা উপর গবেষণা এবং কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ, শস্য. মৎস্য,পোল্ট্রী, ডেইরী সেক্টরে ভ্যালু-চেইন এনালাইসিস কার্যক্রম, পাংগাশ ও তেলাপিয়া মাছের ভ্যালু-চেইন এনালাইসিস, কৃষি অর্থনীতিতে সেচ ও সার ব্যবস্থাপনার সঠিক কৌশল নিরূপণ, জলবায়ূ পরিবর্তনে কৃষক পর্যায়ের অভিযোজনের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন এর সুপারিশ জাতীয় পর্যায়ে প্রদান অন্যতম।

স্বল্প ব্যয়ে সেচ নালা তৈরী, উন্নতধরনের লাঙ্গল ও স্প্রে মেশিন তৈরী, বাউ-জিয়া সার ও বীজ ছিটানো যন্ত্র, সৌর ড্রায়ার, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট উদ্ভাবন, সবজি বীজ শোধন যন্ত্র, ভাইরাস শনাক্তকরণ যন্ত্র, সোলার ড্রায়ার, উন্নতধরনের হস্তচালিত টিউবয়েল পাম্প, পশুখাদ্য কাটার মেশিন, ঝিনুক চূর্ণ করার হস্তচালিত মেশিন, জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নত মানের দেশি চুলা, কেন্দ্রীয়ভাবে শষ্য শুষ্ককরণ ব্যবস্থার উপযোগী কম্পিউটার সফটওয়ার তৈরী,  খাদ্য হিসেবে গম ও ধানের ভূসির বিশেষায়িত ব্যবহার কৌশল, স্বল্প ব্যায়ে ধান কাটার মেশিন, ফলের রস সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি, পন্ড অ্যারেটর ও শাকসবজি ও ফলের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণের বিদুৎবিহীন শীতলকরণ চেম্বার প্রযুক্তি,

বিএইউ এসটিআর ড্রায়ার-অল্প সময়ে ধান শুকানোর যন্ত্র আবিষ্কার ; শিং ও মাগুর মাছের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল ও চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন , ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, খাচায় পাঙ্গাস চাষ, পেরিফাইটন বেইজ্ড মৎস্য চাষ,ডাকউইড দিয়ে মিশ্র মাৎস্যচাষ, মাছের জীবন্ত খাদ্য হিসেবে টিউবিফিসিড উৎপাদনের কলাকৌশল, পুকুরে মাগুর চাষের উপযোগী সহজলভ্য মৎস্য খাদ্য তৈরী, মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উন্নয়ন ও জীব বৈচিত্র সংরক্ষণে শুক্রাণু ক্রয়োপ্রিজারভেশন প্রযুক্তির ব্যবহার কৌশল, স্বল্প ব্যয়-মিডিয়ামে ক্লোরেলার চাষ, মাছের পোনা পালনের জন্য রটিফারের চাষ, মাছের রোগ প্রতিরোধকল্পে ওষুধী গাছের ব্যবহার এবং, রুই, কাতলা, মৃগেল, বিপন্ন প্রজাতির মাছ মহাশোল ও বাঘাইর, তারাবাইম, গুচিবাইম ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন,

নিরাপদ সুটকি তৈরীর ট্যানেল উদ্ভাবন, ধানক্ষেতে মাছ ও চিংড়ি চাষ,  সহজলভ্য উপায়ে মাছের খাদ্য তৈরি ও গুনগত মান নির্ণয় প্রযুক্তি,ফিস বার্গার, ফিস বল, ফিস ফিংগারের মত জনপ্রিয় খাবার উদ্ভাবন, মাছের বিকল্প খাদ্যের জন্য ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই চাষ এবং বাড়ীর ছাদে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারবিহীন একইসাথে মাছ ও সব্জী উলম্ব একোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে চাষ করার কৌশল, ধান ক্ষেতে মাছ চাষ প্রযুক্তি, ধান ক্ষেতে বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ায় মাছের আঙ্গুলি পোনা উৎপাদন,ইফকাস পদ্ধতিতে ভাসমান খাচা ও মাচায় মাছ ও সবজী উৎপাদন, জৈব সার হিসেবে পুকুরের কাদা ব্যবহার করে ঘাস উৎপাদন,গাঙ মাগুরের কৃত্রিম প্রজনন,ক্ষত রোগের প্রতিকার নির্ণয় ইত্যাদি।

প্রশিক্ষণ ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম: কৃষি খামার, গৃহাঙ্গণ ও সমষ্টিগত উন্নয়নকল্পে পরিচালিত সম্প্রসারণ কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকদের জীবনধারার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জিটিআই) এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণ কেন্দ্র (বাউএক) এর অন্যতম লক্ষ্য কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যাবলিতে নিয়োজিত গ্র্যাজুয়েট, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও গবেষকদের জন্য চাকরিকালীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং বাংলাদেশের সকল এলাকার জন্য উপযোগী এমন একটি কার্যকর সম্প্রসারণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা, যা অঞ্চল বিশেষে  সহজেই বিস্তৃতি লাভ করতে পারে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিটিআই, বাউএক, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও অনুষদসমূহ তাদের শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কর্মকান্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মোট ৫৭,৮৬৬ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যার মধ্যে ২২,০১৪ জন খামারি, ৬,৭৭৯ জন মাঠকর্মী এবং ২৯,০৭৩ জন গ্র্যাজুয়েট ও পেশাজীবী রয়েছেন। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থায়নে জিটিআই নিয়মিতভাবে দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক ও রোটার‌্যাক্ট ক্লাবের সদস্যদের পেশাগত উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

উত্তীর্ণ গ্র্যাজুয়েটদের কর্মক্ষেত্র ও সাফল্য: এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন ডিগ্রিপ্র্রাপ্ত কৃষিবিদগণ আজ ছড়িয়ে আছেন দেশের কৃষি ও গ্রামোন্নয়নে নিয়োজিত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে।

পেশাভিত্তিক গবেষণা ও সম্প্রসারণমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর (ডিএলএস), মৎস্য অধিদপ্তর (ডিওএফ), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই), বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই), বাংলাদেশ আণবিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই), বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট(বিএসআরআই),তুলা উন্নয়ন বোর্ড (সিডিবি), বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই), মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই), বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআইডিএস), বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট (আরআরআই), বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি কলেজ, সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক এবং এনজিও।

এছাড়া প্রশাসনসহ অন্যান্য ক্যাডারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্র্যাজুয়েট আজ কর্মরত। দেশের বাইরেও আন্তর্জাতিক গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটবৃন্দ অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে কাজ করে চলেছেন।

শিক্ষাতিরিক্ত কার্যক্রম: শিক্ষার্থীদের মননশীলতা বিকাশ ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের আওতায় বিনোদন সংঘ, সাহিত্য সংঘ, নাট্য সংঘ, সংগীত সংঘ, বিজ্ঞান সংঘ, ডিবেটিং ক্লাব ইত্যাদি নিয়মিতভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়াও শিক্ষার্থীবৃন্দ স্কাউটিং, বিএনসিসি, রোটার‌্যাক্ট ক্লাব ও বাঁধন এর সঙ্গে যুক্ত থেকে ভবিষ্যত জাতি গঠণে নেতৃত্ব দিতে নিজেকে তৈরি করছে ।

মুক্তিযুদ্ধের চিরঞ্জীব শহীদ: ১৯৭১ সনের অসহযোগ ও মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিগণ হানাদারবাহিনী ও তার এদেশীয় দোসরদের সকল ষড়যন্ত্র, ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুলসংখ্যক ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারি মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় হারায় ১৯ জন সাহসী বীর সন্তানকে, যাঁরা দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য অকাতরে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

তাঁরা আমাদের চিরতরে ছেড়ে চলে গেছেন এ কথা যেমন সত্য, তেমনি এটিও সত্য যে, এই চিরঞ্জীব শহীদগণ আজো আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন এবং আগামী দিনগুলোতেও আমরা তাঁদের উজ্জ্বল উপস্থিতি অনুভব করবো। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে ছাত্রদের তিনটি আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়েছে, হলগুলো হচ্ছে শহীদ শামসুল হক হল, শহীদ নাজমুল আহসান হল ও শহীদ জামাল হোসেন হল।

কৃষিবিদদের পদমর্যাদা: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিগত ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ(বাকসু) আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় যোগদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় সবুজ চত্বরে আগমণ করেন।

এই গুরুত্বপূর্ণ সংবর্ধনা সভায় তাঁর ঐতিহাসিক ঘোষণার পথ ধরেই আজ কৃষিবিদগণ সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত। কৃষি শিক্ষা ও কৃষিবিদদের যথাযথ মূল্যায়ন ও প্রথম শ্রেণীর পদমর্যাদা প্রদানের ঐতিহাসিক ঘোষণা আজও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে স্লোগান হিসেবে -‘বঙ্গবন্ধুর অবদান – কৃষিবিদ ক্লাস ওয়ান’ সোচ্চার কন্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

বিশ্ব র‌্যাংকিং এ প্রথম: স্প্যানিশ জাতীয় গবেষণা কাউন্সিলের (সিএসআইসি) সাইবারমেট্রিক্স ল্যাব প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন  দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করে। Webometrics Ranking of world Universities শিরোনামে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ওয়েবমেট্রিক্সে প্রকাশিত ওই তালিকায় বাংলাদেশের ১৫০টি সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে কৃষি শিক্ষায় দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ ও প্রাচীন বিদ্যাপিঠ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

ওয়েবমেট্রিক্স সাইটটির জুলাই, ২০১৭ সংস্করণে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বাকৃবি এর দক্ষ গ্রাজুয়েটবৃন্দের নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলেই দেশ আজ খাদ্য শস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। কৃষিক্ষেত্রে দৃশ্যমান এ সাফল্যগুলোর কৃতিত্ব এ দেশের কৃষক ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের, এটি আজ সর্বজন স্বীকৃত।

উপসংহার: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ এমন একটি পথিকৃৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষা, গবেষণা প্রশিক্ষণ ও সম্প্রসারণের মতো বহুমাত্রিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের চাহিদা ও সমস্যা মোকাবেলার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সবসময় তৈরি থাকতে হয়। নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বিশ্ববিদ্যালয় এ যাবত যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা একেবারে গৌন নয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জার্মপ্লাজম সেন্টারের মাধ্যমে কৃষি গবেষণায় ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরষ্কার-১৪১৯’ স্বর্ণপদক লাভ আমাদের অন্যতম অর্জন।

এ ছাড়া ২০১৭ সালে ওয়েবমেট্রিক্স র‌্যাংকিং অভ দ্যা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিসে বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা বিশ্বাস করি যথাযথ পরিকল্পনা ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে এর শিক্ষা ও গবেষণাসহ যাবতীয় কর্মকান্ডের বিকাশ অব্যাহত থাকবে এবং এর মধ্য দিয়েই কৃষি তথা জাতীয় উন্নয়নে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন আরো ফলপ্রসূ হবে Ñ এধারা অব্যাহত রাখতে আমরা প্রতিশ্রুত।