কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু,বাকৃবি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশের বাহিরে পাঙ্গাসের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এর হলুদ রং ও দুর্গন্ধের কারণে এ মাছ রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে না। সাধারনত ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে সাদা মাংসের পাঙ্গাসের চাহিদা রয়েছে।

কিন্তু দেশে পানির গুণাগুণের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে যেমন দুর্গন্ধযুক্ত পাঙ্গাস উৎপাদন হচ্ছে তেমনি পাঙ্গাসের মাংসের রং হলুদ হচ্ছে। তাই পাঙ্গাসের মাংসের এই হলুদ রং এবং দুর্গন্ধের কারণে বিদেশের বাজার ধরতে পারছে না এই মাছ।

সে সুযোগে ভিয়েতনামের সাদা মাংসের পাঙ্গাস রপ্তানির মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। অথচ বাংলাদেশের মোট চাষকৃত মাছের শতকরা ১৬ ভাগ আসে এই পাঙ্গাস উৎপাদন থেকে।

আজ রোববার (১৪ অক্টোবর) বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ‘পাঙ্গাস মাছের দুর্গন্ধ এবং মাংসের হলুদ রং এর বাহ্যিক কারণসমূহ’শীর্ষক এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

সেমিনারে একোয়াকালচার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম। এছাড়াও সেমিনারে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক, পি এইচ ডি গবেষক, মাস্টার্সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাকৃবির একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক এর তত্ত্বাবধানে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিএইচ. ডি গবেষক শেখ রাজিবুল ইসলাম। তিনি ব্যাংফিশ প্রজেক্ট এর মাধ্যমে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাকৃবি এবং ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণ সহযোগিতায় পাঙ্গাস মাছের মান উন্নয়নের উপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

উল্লেখ্য বাকৃবি একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিল ও জি জরজেনসন এর তত্ত্বাবধানে শেখ রাজিবুল ইসলাম গত ৩ বছর ধরে এ গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাকৃবি প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন সঠিক একোয়াকালচার পদ্ধতিতে পাঙ্গাস চাষ করলে সহজেই এর দুর্গন্ধ দূর করা সম্ভব তবে আমাদের হলুদ রঙ দূরীকরণে বিশেষ গবেষণা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, সে ক্ষেত্রে উক্ত গবেষণা কার্যক্রমে আমি এ সমস্যা সমাধানে আশাবাদী। রপ্তানি বাজারে পাঙ্গাসের অনুপস্থিতির কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে এর মূল্য কম থাকায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পাঙ্গাস চাষের ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

ফলে বিপুল সম্ভাবনাময় এই মাছের উৎপাদন আজ হুমকির মুখে। একোয়াকালচার ভিত্তিক মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম হওয়া স্বত্বেও সে কারণে মৎস্য রপ্তানিতে আমাদের কোন অবস্থানই নেই।

সেমিনারে শেখ রাজিবুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের পাঙ্গাস মাছের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে মাছের দুর্গন্ধের পেছনে মূলত পুকুরের পানির গুনগত মান এবং মাছের মাংসের হলুদ রং এর জন্য দায়ী মাছের খাদ্যের উপকরণ।

মাছের খাবারের মধ্যে থাকা জিয়াজেনথেন এবং লুটেইন নামক দুটি রাসায়নিক উপাদান মূলত হলুদ রং এর জন্য দায়ী। মৎস্য খাদ্যে ব্যবহৃত ভূট্টা ও খৈল এ দুটি রাসায়নিকের প্রধান উৎস।

এ তথ্যের ভিত্তিতে বাকৃবিতে গবেষণা পুকুরে পানির সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন রকমের খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করে একটি গবেষণা করা হয়। গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে খুব শীঘ্রই গুনগতমান সমৃদ্ধ পাঙ্গাস মাছ উৎপাদন এবং বহির্বিশ্বে রপ্তানি সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।