নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) স্বল্প সময়ে পোক্ত হয় ও লবণাক্ত সহনশীল তিন সরিষার জাত উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত ‘বাউ সরিষা-১’, ‘বাউ সরিষা-২’ ও ‘বাউ সরিষা-৩’ এ তিন জাত ১২ ডেসিসিমেন্স পর্যন্ত লবণাক্ত সহনশীল।

গতকাল রোববার (২১ মার্চ ২০২১) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে ‘স্বল্প মেয়াদে লবণ সহনশীল র‌্যাপসিড জাতের সরিষার বিকাশ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়।

কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি প্রকল্পের পিএইচডি প্রগ্রামের আওতায় বাকৃবি এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) যৌথভাবে জাতগুলো উদ্ভাবনে কাজ করে।

উদ্ভাবিত জাতগুলো অলবণাক্ত ও লবণাক্ত উভয় এলাকায় চাষ করা যায় বলে দেশে সরিষা উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন। গবেষকরা জানান, এই তিনটি সরিষার জাত থেকে লবণাক্ত মাটিতে প্রতি হেক্টরে ২.৫ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য মাটিতে প্রতি হেক্টরে তিন মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যাবে। এ ছাড়া এই জাতগুলো থেকে ৪০-৪১ শতাংশ তেল পাওয়া যাবে। উদ্ভাবিত তিনটি জাত এরই মধ্যে জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে নিবন্ধিত হয়েছে।

গবেষণায় বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুত্ফুল হাসানের তত্ত্বাবধানে প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন বিএআরআইয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফেরদৌসী বেগম। এ ছাড়া সহকারী গবেষক হিসেবে ছিলেন বাকৃবির উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুল হক ও কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সিরাজুল ইসলাম এবং বিএআরআইয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রোজিনা আফরোজ।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা ৫১.২৭ লাখ মেট্রিক টন, যার মধ্যে ৪৬.২১ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকেই সাধারণত ভোজ্য তেল তৈরি করা হয়। দেশে মোট ৪.৪৪ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়, যা থেকে ৬.৫ লাখ মেট্রিক টন সরিষা এবং এই সরিষা থেকে ২.৫০ লাখ টন তেল উৎপন্ন হয়।

কর্মশালায় কৌলীতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শরীফ আর রাফির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যোগ দেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুত্ফুল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস, কৃষি অনুষদীয় ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম, উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা কমিটির সহসমন্বয়ক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, বাকৃবি রিসার্চ সিস্টেমের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবু হাদী নূর আলী খান।

খুবিতে বেগুনি ক্যাপসিকাম

চলতি মৌসুমে মাঠ পর্যায়ে কম খরচে পোকা ও ভাইরাসমুক্ত নিরাপদ রঙিন ক্যাপসিকাম চাষের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) মাঠ গবেষণা কেন্দ্র। মালচিং কিংবা জৈব প্রযুক্তি উপায়ে চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে।

গবেষণার জন্য বেগুনি, হলুদ ও সবুজ- তিন ধরনের ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। গবেষণার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক খুবির এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. প্রশান্ত কুমার দাশ। একই ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সের ছাত্রী সাদিয়া আলম গবেষণা সহায়ক হিসেবে কাজ করছেন।

প্রতিটি গাছে ৪ থেকে ১০টি পর্যন্ত ক্যাপসিকাম রয়েছে। আকর্ষণীয় বেগুনি রঙের ক্যাপসিকাম দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে এবারই প্রথম খুবির এই গবেষণা মাঠে চাষ করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহযোগিতায় এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্যাপসিকাম সংগ্রহ করা হবে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তারা জানায়, গবেষণার মূল লক্ষ্য বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে থ্রিপসবাহিত ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করে ক্যাপসিকাম উৎপাদন।

ড. প্রশান্ত কুমার দাশ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্পের মাঠে তিন রঙের ক্যাপসিকাম গাছের বৃদ্ধি ও ফলনের তুলনামূলক গবেষণা চালানো হয়। বেগুনি রঙের ক্যাপসিকাম এই তিন রঙের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফলন দেয়। যার বাজারমূল্য অন্যান্য ক্যাপসিকামের চেয়ে অনেক বেশি (প্রতি কেজির দাম ২৫০-৩০০ টাকা)। বাজারে সবুজ, লাল ও হলুদ ক্যাপসিকামের দেখা মিললেও বেগুনি রঙের ক্যাপসিকাম তেমন চোখে পড়ে না। এ জন্য আকর্ষণীয় রঙিন সবজি হিসেবে বাজারে এর প্রচুর চাহিদা। ক্যাপসিকাম সাধারণত সালাদ, মিক্সড সবজি ও চায়নিজ রান্নায় ব্যবহূত হয়।

তিনি জানান, এই মাঠে একটি গাছে সর্বোচ্চ ২০-২৫টি ক্যাপসিকাম হয় এবং একেকটির ওজন ৮০ থেকে ১৪০ গ্রাম। মাঠ পর্যায়ে ক্যাপসিকাম চাষের প্রধান অন্তরায় থ্রিপস পোকার আক্রমণ। এই থ্রিপস মরিচ গোত্রের সবজির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। মাঠ পর্যায়ে জৈব উপায়ে কার্যকরী থ্রিপস দমনের পদ্ধতি নির্বাচন ছিল এ গবেষণার মূল লক্ষ্য। এ গবেষণায় থ্রিপস পোকা দমনে ক্যায়োলিন ক্লে ও নিমের তেল জৈব বালাইনাশক হিসেবে ১০ দিন পরপর ছিটানো হয়। ক্যায়োলিন ক্লে একটি অর্গানিক ক্লে পার্টিকেল, যা অ্যালুমিনিয়াম ও সিলিকন সমৃদ্ধ। এ দ্রব্যের বাণিজ্যিক নাম সারাউন্ড।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ