ডাঃ মোঃ আতিকুর রহমান, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: আমাদের দেশে নানা কারণে গরুর বাছুরের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি কারণ হলো অতিরিক্ত দুধ খেয়ে ফেলা। এছাড়া গরু রাখার স্থান নোংরা হলে বা নোংরা জিনিস খেয়ে ফেললে অথবা ডায়রিয়ার জীবাণু বহন করছে এরকম বস্তু অথবা তরল খেয়ে ফেললে বাছুরের পাতলা পায়খানা হতে পারে।

বাছুরের ডায়েরিয়া রোগের লক্ষণ ও সমাধান শিরোনামের বিষয়টি আলোচনা করেছেন রাজশাহী দুগ্ধও গবাদি উন্নয়নের উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ আতিকুর রহমান।

বিশেষ করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে লালন পালন করলে এই রোগ হয়ে থাকে। বাংলাদেশে গরু বাচ্চায় এ রোগটি বেশি হয়ে থাকে। বাছুর যেসব রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তার মধ্যে অন্যতম এই ডায়েরিয়া। এ কারণে রোগটিকে বাছুরের ঘাতকব্যাধি বলা হয়। জেনে নিন বাছুরের ডায়েরিয়া রোগের লক্ষণ ও সমাধান সম্পর্কে-

লক্ষণ
শুরুর দিকে বাছুরের শরীরে জ্বর থাকে এবং পরবর্তীতে শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়। সাদা, হলুদ বা মেটেবর্ণ পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে। বাছুর দুর্বল হয়ে পড়ে। চোখ কোঠরে বসে যায় ও পিঠ বাঁকা হয়ে যায়। লেজে পশুর পায়খানা লেগে থাকে এবং গ্যাস থাকায় পায়খানায় ফেনা হয়ে থাকে। বাছুর একেবারে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। দুই তিনবার পায়খানা করার পর মায়ের দুধ খাওয়ার মত শক্তি থাকবেনা।

চিকিৎসা
বাছুরকে সাধারণত এ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যায়না। তবে খাওয়াতে পারে সেখানে লক্ষ রাখতে হবে যেন ই.কলাই বা সালমোনেলা না হয়। কারণ ইকলাই হলে বাছুর অনেকদিন দূর্বল থাকে। এর পর সেই বাছুরকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসা খুব কঠিন হয়ে যায়। এর জন্য তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও খাওয়ার স্যালাইন দিতে হবেঅ। মোটা সিরিঞ্জ অথবা বাঁশের চোঙ দিয়ে স্যালাইন খাওয়ানো যেতে পারে। আর এ সময়ে অবশ্যই স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক পরিমাণ দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া সালফোনামাইড বা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন জাতের ঔষধ, ডায়েডিন বা বায়োনাল ফোর্ট ইনজেকশন দেয়া যেতে পারে। এ থেকে বাঁচতে জন্মের পর পর বাছুরের জন্য উষ্ণ, পরিচ্ছন্ন ও ঠিকমত প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচল করে এমন বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অবস্থার উন্নতি না হলে অবশ্যই প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পুশু চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।

বিশেষ করে ১ থেকে ২১ দিন বয়সের নবজাতক বাচ্চার জন্য রোগটি খুবই মারাত্মক। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আমাদের দেশে অনেক বাছুর মারা যায়। বাছুরের মারা যাওয়া খামারি ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। দেখা যায় বাছুরের জন্মের ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে পাতলা পায়খানা দেখা দেয়। পায়খানার রঙ হয় হলদে। বাছুরের চঞ্চলতা বন্ধ হয়ে যায়। আর দৌড়ঝাঁপ করে না। কোনো ব্যবস্থা না নিলে ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে যায়। বেশি পায়খানা করলে এবং কোনো চিকিৎসা না পেলে ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) হয়ে বাছুর মারা যেতে পারে।

প্রিয় খামারি মনে রাখতে হবে, বাছুর বা গরুর যে কোন সমস্যা হলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিসে। অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আপনাকে সেবা দিতে হবে। এছাড়া এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর ফেসবুক পেজে ম্যাসাঞ্জারে আপনার সমস্যা জানাতে পারেন, আমরা বিশেষজ্ঞ এর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আপনাদের জানাবো।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ