বাজেটে পোল্ট্রি’র আমদানি পণ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: সদ্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে বাজেটে পোল্ট্রি’র আমদানি পণ্যে ‘অগ্রিম কর’, সয়াবিনে রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন পোল্ট্রি শিল্পের উদ্যোক্তারা।

২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট পেশ পরবর্তী বাজেট প্রুতিক্রিয়ায় পোল্ট্রি উদ্যোক্তারা এসব তথ্য তুলে ধরেছেন। সদ্য প্রস্তাবিত বাজেটে পোল্ট্রি শিল্পের জন্যে তেমন কোন সুখবর না থাকায় তারা হতাশা প্রকাশ করেছেন।

বুধবার (১৯ জুন) রাজধানীর প্যারাগন হাউসে (মহাখালী) অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ হতাশার কথা তুলে ধরেন।



সংবাদ সম্মেলনে পোল্ট্রি উদ্যোক্তারা বলেন, বিগত বছরের মত এবারও আশা ভঙ্গ হয়েছে পোল্ট্রি খামারি ও উদ্যোক্তাদের।  পোল্ট্রি ফিডের অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল ‘ভূট্টা’ আমদানিতে অগ্রিম আয়কর এবং ‘সয়াবিন অয়েল কেক’ এর উপর থেকে রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহার না হওয়ার পাশাপাশি সব ধরনের পণ্য আমদানিতে নতুনভাবে আগাম কর (এ.টি) আরোপ হওয়ায় চরম হতাশা বিরাজ করছে পোল্ট্রি শিল্পে।

পোল্ট্রি শিল্পের যুক্ত নেতারা বলছেন, উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেশীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানী বাজারে প্রবেশের যে স্বপ্ন তাঁরা দেখছিলেন প্রস্তাবিত বাজেটে তা পূরণ হয়নি।

ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব) এবং ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি) যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ফিআব সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান।

তিনি বলেন, সয়াবিন অয়েল কেক এর উপর আরোপিত ৫% রেগুলেটরি ডিউটি, কটন সীড ও পাম নাটসের উপর থেকে ৫% সিডি ও ৫% এটিভি; এবং ভূট্টার ওপর থেকে ৫% এআইটি প্রত্যাহারই ছিল এবারের অন্যতম দাবি।

আশা করা হয়েছিল এ দাবি পূরণ হলে পোল্ট্রি ফিড এবং সেই সাথে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ কিছুটা কমবে।

তিনি বলেন, সয়াবিন অয়েল কেক আমদানিতে আরডি এবং ভূট্টা আমদানিতে এআইটি বহাল রাখা হয়েছে; পাম নাটস বা কারনেল এবং কটন সীডের ওপর থেকে কাস্টমস শুল্ক তুলে নিয়ে নতুন করে ৫% হারে রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা হয়েছে।

এহতেশাম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ফিডের উপকরণ হিসেবে যে ৩টি উপকরণে কর ও শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে [১. অ্যামোনিয়া বাইন্ডার, ২. লিভার প্রটেকটর, রেনাল প্রটেকটর, রেসপিরেটরি প্রটেকটর, এবং ৩. ভ্যাকসিন স্ট্যাবিলাইজার (থিওসাফফেট)]সেগুলোর সাথে ফিড ইন্ডাষ্ট্রি’র কোন সম্পর্ক নেই।

ফলে কার্যত তেমন কোন সুফল আসবে না। তবে বিদ্যমান সুবিধাদি বহাল রাখা এবং রাইস ব্রান এর রপ্তানী শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবে সন্তোষ প্রকাশ করেন ফিআব সাধারন সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান। একই সাথে ডি-অয়েলড রাইস ব্রান (ডিওআরবি) এর উপরও সমহারে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেন তিনি।

তাঁর মতে যেহেতু এ দু’টি উপকরণ মূলত একই পণ্য তাই শুল্ক সমান না হলে এক পণ্যের নামে অন্য পণ্য রপ্তানী করে মুনাফা লুটার চেষ্টা করবে সুযোগ সন্ধানীরা। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে সরকারের নতুন একটি সিদ্ধান্ত মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন আহসানুজ্জামান। এ সিদ্ধান্ত মতে সব ধরনের পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ৫ শতাংশ হারে আগাম কর (এ.টি) প্রদান করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএবি) সভাপতি রকিবুর রহমান টুটুল বলেন, অর্থ বিল ২০১৯ এর ৭১ নম্বর অনুচ্ছেদে ২০১২ সনের ৪৭ নং আইনের ধারা ৩১ এর সংশোধন করে সকল আমদানিকৃত পণ্য সরবরাহের উপর ৫% হারে আগাম কর (অঞ) ধার্য্য করা হয়েছে।

এসআরও নং ১৭২-আইন/২০১৯/২৯-মূসক তারিখ ১৩ জুন ২০১৯ মূলে এই আগাম কর ধার্য্য করা হয়েছে যা পোল্ট্রি খাতের উপর প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়।

তিনি বলেন- পোল্ট্রিখাত মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে অব্যহতি পাওয়ার কারনে হ্রাসকৃত অর্থ সমন্বয়েরও কোন সুযোগ নেই। তাই এ বিধান প্রযোজ্য হলে একদিন বয়সী জিপি/পিএস বাচ্চা, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিপুল পরিমাণ অর্থ অগ্রিম কর হিসেবে কর্তন করা হবে।

ফলশ্রুতিতে বাচ্চার উৎপাদন কার্যক্রমে চলতি মূলধনের সংকট সৃষ্টি হবে। সর্বোপরি পোল্ট্রির ডিম ও মাংস উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সার্বিকভাবে পোল্ট্রি খাতের জন্য এ বিধান রহিত করার অনুরোধ জানান টুটুল।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, বাজেটে প্রত্যাশা পূরুণ না হওয়ায় প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ দাম পোল্ট্রি পণ্যে বৃদ্ধি হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আয়করের সমতার নীতি অনুসরণের লক্ষ্যে উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল সংগ্রহের উপর ‘উৎস আয়কর’কর্তনের বিধান পুণঃসংযোজন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: ২০৩০ সাল পর্যন্ত কর অব্যহতি’র দাবি পোল্ট্রি উদ্যোক্তাদের

এ বিধানটি কার্যকর হলে দেশীয় উৎস থেকে সংগৃহীত পোল্ট্রি ফিড তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ যেমন ভূটা, রাইস ব্রান সহ বিভিন্ন উপকরণ ক্রয়ে ২ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ‘উৎস কর’ কর্তন করতে হবে।

এতে পোল্ট্রি ফিডের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে, যা সামগ্রিকভাবে পোল্ট্রি’র উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেবে।

গত মে মাসে ‘কৃষির বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীর ‘পোল্ট্রি বীমা’ চালু’র আশ্বাস দিলেও বাজেটে তার প্রতিফলন নেই।

সাশ্রয়ী মূল্যের ডিম ও মুরগির মাংসের যোগান সহজলভ্য রাখতে এবং প্রতিযোগিতামূলক রপ্তানী বাজারে বাংলাদেশী পোল্ট্রি পণ্যের প্রবেশ সহজতর করতে বাজেটে পোল্ট্রি’র আমদানি পণ্যে ‘অগ্রিম কর’, সয়াবিনে রেগুলেটরি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি তুলে ধরেন পোল্ট্রি সংশ্লিষ্টরা।