মেহেদী হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী: বাজারে আগাম জাতের লাল পাখরি (ইন্দুরকানি) আলুর দেখা মিলছে শীতের শুরু থেকেই। মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে রাজশাহীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে মাঝারি ও বড় আলু ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও তা সপ্তাহ দুয়েক আগে ২০ টাকায় নেমে এসেছিল। চাষিরা সেসময় ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরি পেয়েছেন। কারণ দাম বাড়তে শুরু করেছে। সবমিলিয়ে আগাম আলু বেশ ভালো দামের কারণে খুশি জেলার আলুচাষিরা।

ব্যবসায়ী ও চাষি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বাজারে যে আলু দেখা যাচ্ছে তার বয়স সর্বোচ্চ ৭০ দিন ছাড়িয়ে গেছে। ৫০ দিনের পর থেকে আলুর আকার মাঝারি হতে শুরু হয়। ফলে কোন কোন চাষি আগাম আলু উত্তোলন করে বাজারজাত করেন। এতে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দামের ক্ষেত্রে পুষিয়ে যায়। ফলন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অর্ধেক হলেও তাদের আপত্তি থাকে না। এখন ফলনের সাথে দামও ভালো পাচ্ছেন তুলনামূলক ভাবে। তাই আশা দেখছেন তারা।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, রাজশাহীতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড ও এ্যাস্টেরিক জাতের আলু বেশি চাষ হয়। অনেক চাষি আগাম (ষ্যাঁটা) জাতের আলু চাষ করেন। এসব আগাম আলুর দাম বেশি পাওয়ায় অনেক চাষি আগ্রহ নিয়ে আলু চাষ করেন।

চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল ৩৮ হাজার ৬২৯ হেক্টর জমিতে। চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে আগের তুলনায় কমেছে আলুর চাষ। ৩৬ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ৭৬ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন আলু চাষের পরিকল্পনায় এগোচ্ছে কৃষি বিভাগ। অর্থাৎ প্রতি হেক্টর জমিতে ২৬ দশমিক ৫০ টন আলু চাষ করার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

চাষিরা বলছেন, বিগত কয়েক বছর ধরে তারা আলুর নায্য দাম পান না। তবে গত দুই বছর থেকে দাম ভালো পাওয়ায় আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন তারা। কিছুদিন আগে আলু আমদানি বাড়তি হওয়ার কারনে দাম কমে গিয়েছিল। সেসময় ৬৫০ টাকা মণ দরে লাল আলু বিক্রি করেছেন। সেই একই আলু বাজারে দাম বেড়ে পাইকারিতে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে নতুন আলু।

তানোর যোগীশহ এলাকার আলু চাষি রেজাউল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রতি বছর ২০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করি। বর্তমানে আলুর দাম ভালো দাম রয়েছে। বাজারে যে দামে বিক্রি হচ্ছে সে দামে তো আর জমিতে বিক্রি হবে না। আগাম আলু ১২’শ টাকা মণ বিক্রি করতে পারলেও লাভ হবে। লোকসান হবে না।

একই উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের আলু চাষি ও ব্যবসায়ী আব্দুর রাকিব বলেন, গত বছর ৫০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছিলাম। কিন্তু এবছর আলুর বীজ সংকট এবং দাম বেশি হওয়ায় ৩০ বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেছি। আগামীকাল থেকে তুলা শুরু করবো।

রাজশাহীর সাহেব বাজারের সবজি বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, লাল আলু বিক্রি করছি ৫০ টাকা কেজি। দিন পনের আগে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। আর কিছুদিন পর আরো দাম কমবে। সাদা বার্মা জাতের আলু একটু দাম কম। ৪০ টাকা কেজি। মাঝে কমে গিয়েছিল। আবার ৩০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।

আজ বৃহস্পতিবার ৫ জানুয়ারি রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি আসছে। সব সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালের ভেতরেই আছে। নতুন আলু ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি এখন ৩০ টাকা । আগেভাগে তোলা নতুন আলু বাজারে ভালো দামে বিক্রি হয়েছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন এগ্রিকেয়ার.কম কে বলেন, আলুর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষক। কৃষকদের জমি প্রস্তত। আমরা সরেজমিনে গিয়ে চাষিদের সাথে কথা বলেছি। বীজ কিংবা সারের কোন সংকট নেই। আর নির্ধারিত সময়ে আলু চাষের জন্য উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন সমাবেশের মাধ্যমে তাদেরকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কৃষকরা যাতে আলুর ভালো ফলন পান সেই জন্য সার, সেচ ও পোকামাকড় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া হচ্ছে।