ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কুমিল্লায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও সংকট দেখা দিয়েছে ধান কাটা শ্রমিকের। চড়া দামেও মিলছে না শ্রমিক।

করোনায় লকডাউনে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে কুমিল্লায় শ্রমিকরা আসতে না পারায় এমনটা হয়েছে। ঠিক সময়ে শ্রমিক না পেলে বৈরি আবহাওয়াতে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

এদিকে শ্রমিক সংকট যাতে না পড়ে সেজন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি অফিস। অন্যান্য জেলায় বাস পাঠিয়ে আনা হচ্ছে ধানকাটা শ্রমিক। এছাড়া করোনায় অন্যান্য পেশার মানুষও নেমেছে মাঠে।

জানা গেছে, কুমিল্লার হাট-বাজারে শ্রম বিক্রি করতে আসা মানুষরা বেশিরভাগই রংপুর, গাইবান্ধা, নীলফামারী, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, নেত্রকোনা ও ঠাকুরগাঁওসহ দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর বাসিন্দা। এখানে শ্রম বিক্রয় হয় দিন, সপ্তাহ কিংবা মাস চুক্তিতে। তবে শ্রমিক সংকট থাকলে মজুরি বেড়ে যায় দুই-তিন গুণ। এবছর লকডাউন থাকায় মৌসুম শুরুতেই শ্রমিক আসতে পারেনি। আগাম ধান অনেকেই দ্বিগুণ দামে শ্রমিক রেখে কেটে ঘরে তুলেছেন।

সদর উপজেলার আমড়াতলি এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী মাইনুল হক। শ্রমিক না পাওয়ায় নিজেই নিজের জমি থেকে একা একা ধান তুলে আনছেন।

তিনি জানান, দুই দিন আগে একদিনের জন্য ৮০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে দুই জনকে দিয়ে ধানগুলো কাটিয়েছেন। সেগুলো মাঠ থেকে ঘরে তোলার জন্য দুই দিন ধরে শ্রমিক পাননি। তাই নিজে নিজে যতটুকু পারা যায় ঘরে নিচ্ছেন। নতুবা বৃষ্টির কবলে পরলে ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে যাবে।

একই এলাকার কৃষক আনোয়ার হোসেন তার তিন শিশু সন্তানকে নিয়েই মাঠে নেমেছেন ধান ঘরে তুলতে। আনোয়ার হোসেন জানান, চারদিকে শ্রমিকের এত চাহিদা-কয়েক জন আমার জমির ধানগুলো কেটেই অন্য জায়গায় চলে গেছে। এখন নিজের পরিবারের লোকজন নিয়ে এগুলো মাড়াই করে বাড়ি নিতে হবে। আর শ্রমিকের যে দাম, ক্যান্টনমেন্ট বাজারে গিয়ে দুই দিন ঘুরে এসেছি- চড়া দাম দিয়ে শ্রমিক আনলে পোষাবে না। আনোয়ার হোসেন জানান, দৈনিক মজুরিতে ৮০০ টাকায় শ্রমিক এনে এই ধানের দাম পাওয়া যাবে সর্বোচ্চ ১২শ’ টাকা। তাহলে কৃষকের লাভ কি, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

নগরীর কান্দিরপাড়, পদুয়ার বাজার, শুয়াগাজী বাজার, চৌয়ারা বাজার, নিমসার বাজার, লালমাই বাজার, ক্যান্টনমেন্ট বাজার, ইলিয়টগঞ্জ বাজার, দেবিদ্বার বাজার, মুরাদনগর বাজার, বাঘমারা, বিজরা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে দৈনিক বা চুক্তিভিত্তিক মজুরিতে শ্রমিক পাওয়া যায়। ধানকাটা মৌসুমে প্রতিদিনই এ সব বাজারে শ্রম বিক্রির জন্য একটু বেশি ভিড় করে শ্রমজীবী মানুষরা। পণ্যের মতো বিক্রি হয় তাদের শ্রম।

শ্রমিক সংকটে বাড়ে দৈনিক মজুরি নির্ধারণ। তখন প্রতিজন শ্রমিক ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। শ্রমিকের সহজলভ্যতা বাড়লে মজুরিও কমে যায়। সর্বনিম্ন ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় দৈনিক মজুরিতে শ্রমিক মিলে।

কুমিল্লা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, কৃষকদের ধান কাটার জন্য সহযোগিতায় ৮৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ও ৭৯টি রিপার রয়েছে। তাছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে কৃষি শ্রমিক আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এবার জেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কুমিল্লা জেলায় এক লাখ ৫৮ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫০ হেক্টর বেশি। জেলায় এ পযর্ন্ত ৯ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে, ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ