রাকিবুল ইসলাম, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: বর্তমানে কৃষি জমি ক্রমাগত কমছে, বাড়ছে জনসংখ্যা। এ পরিস্থিতিতে পুষ্টি উৎপাদনের জন্য নানান পদ্ধতি আবিস্কার করছে বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় চাষাবাদ অনন্য রুপ লাভ করছে। তেমনিই একটি চাষাবাদ পদ্ধতি ভাসমান সবজি চাষ। বাড়ির পাশের ডোবায় ভাসমান বেডে চাষ করতে পারবেন সবজি।

যে সব এলাকা বছরের ৬-৭ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে, চাষাবাদের সুযোগ নেই, সেখানে পানির উপরে ভাসমান অবস্থায় কচুরিপানার সাহায্যে বেড তৈরি করে চাষাবাদের প্রক্রিয়াকে ভাসমান বেডে সবজি চাষ বলা হয়। ভাসমান বেডের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হচ্ছে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা। টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের জোয়ারিয়া ব্লকের বন্যাবাড়ি ও মিত্রডাঙ্গায় শতবছরের পুরাতন এ চাষাবাদের আবির্ভাব।

পড়তে পারেন: হাজার টাকা কেজির সবজি কাটরুয়া

ভাসমান বেড তৈরির জন্য পানির গভীরতা মূখ্য বিষয় নয়। যে কোন গভীরতায় ভাসমান বেড তৈরি করা যায়। পানির গভীরতা কম হলে পানিতে দাঁড়িয়ে পাশ থেকে কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ আগাছা সংগ্রহ করে বেড তৈরি করতে হয়। পানির গভীরতা বেশি হলে নির্বাচিত ঘন কচুরিপানার উপরে বাঁশ ফেলতে হয়। এরপর বাঁশের উপর দাঁড়িয়ে বাঁশের চারপাশ থেকে কচুরিপানা টেনে এনে জড়ো করে ভাসমান বেড তৈরি করতে হয়।

বেড তৈরি শেষে বাঁশ বের করে নেয়া যায়। তবে ভাসমান বেডকে শক্তিশালী করা এবং ভেসে থাকার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাঁশ রেখে দেয়া ভাল।ভাসমান বেডের পুরুত্ব ও আকার হবে- দৈর্ঘ্য ২০মিটার, প্রস্থ ১.৫ মিটার ও পুরুত্ব ২.৫ মিটার (১ম কাঁচা অবস্থায়)। পুরুত্ব কম হলে ফসল প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পায় না এবং বেড সব সময় আর্দ্রভাব থাকবে ফলে ফসলের বৃদ্ধি সঠিক ভাবে হয় না, গাছ মারাও যেতে পারে। বেড তৈরির ২/৩ অংশ শেষ হলে উপরের দিকের ১/৩ অংশের কচুরিপানার শিকড় উপরের দিকে এবং কান্ডগুলো নিচের দিক করে আস্তে আস্তে প্রস্থ থেকে দৈর্ঘ্যরে বরাবরে সাজাতে হবে।

পড়তে পারেন: ছাদের অল্প জায়গায় বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ পদ্ধতি

বেডের উপরের ১/৩ অংশে অপেক্ষাকৃত ছোট কচুরিপানা দিতে হবে। এভাবে কচুরিপানা স্তুপ করে প্রয়োজনীয় মাপ অনুযায়ী বেড তৈরি করতে হয়। প্রাথমিক ভাবে ১ (এক) বর্গমিটারের একটি ছোট বেড (ধাপ) তৈরি করতে হবে। বেডের চার পাশে আরো কচুরিপানা দিয়ে স্তুপ করতে হবে যাতে স্তুপের উপরে অন্ততঃ একজন মানুষ উঠে দাঁড়াতে পারে।

এরপরে চারপাশ থেকে আরো কচুরিপানা লাঠি দিয়ে টেনে টেনে স্তুপের উপর এবং পাশে ফেলতে হবে। বেডের স্থায়িত্ব নির্ভর করে ১ম স্তরের উপর; বেডের ১ম স্তরে যদি ঘন, লম্বা ও পুরু কচুরিপানা ব্যবহার করা হয় তাহলে বেডের স্থায়িত্ব বেশি হয়। ভাসমান বেডের নিচের দিকে লম্বা ও বড় আকারের কচুরিপানা দিতে হয়। পানিতে ভেসে থাকা প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো কচুরিপানার স্তর যেখানে ঘন, লম্বা ও পুরু এমন জায়গা বেছে নিতে হবে।

পড়তে পারেন: ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে ৫ গুণ বেশি ফলন

পানির উপরের কচুরিপানার প্রাকৃতিক স্তর নষ্ট করা যাবে না। কচুরিপানার প্রাকৃতিক স্তর নষ্ট করা হলে স্তর সাজানোর সময় স্তর একটু মোটা হলেই বা উপর থেকে চাপ দিলে নীচের দিক থেকে কচুরিপানা বের হয়ে আসবেতবে কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান বেড তৈরি করলে বেশি ভাল হয়। আখের ছোবড়া ব্যবহার করেও ভাসমান বেড তৈরি করা যায়।

ধানের খড় বা ফসলের অবশিষ্টাংশ, বিভিন্ন ধরণের জলজ আগাছা, শেওলা, জলাবদ্ধ এলাকা যেখানে বছরের ৬-৭ মাস বা আরো বেশি সময় পানি থাকার কারণে সমতল ভূমির ন্যায় ফসল চাষ করা যায় না, এসব জলমগ্ন এলাকাগুলো যেখানে কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ আগাছায় আচ্ছন্ন থাকে সেখানে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ¯ুÍÍপ করে প্রয়োজনীয় মাপের ভেলার মত বেড তৈরি করে ভাসমান পদ্ধতিতে পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন ধরণের সবজি ও মসলা উৎপাদন করা যায় । ভাসমান বেড তৈরির প্রধান উপকরণ কচুরিপানা। এছাড়া-টোপাপানা।

পড়তে পারেন: শ্রাবন মাসে কি কি সবজি চাষ করবেন, জানুন বিস্তারিত

ভাসমান বেড প্রস্তুতিঃ

১. বর্ষা মৌসুমে সবজির সরবরাহ বাড়াতে ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে।

২. পরিবেশ বান্ধব সবজি ও মসলা উৎপাদন করতে এবং

৩. জলাবদ্ধ এলাকায় সুষম খাদ্য সরবরাহ বাড়াতে;

৪. খাদ্য নিরাপত্তার কারণে কৃষক ধান চাষকে প্রাধান্য দিচ্ছে;

৫. দেশে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চাষের জমি কমছে।

পড়তে পারেন: নভেম্বর-ডিসেম্বরে যেসব সবজি ও ফসল চাষ করবেন

ভাসমান বেডে ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তাঃ

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তা ক্রমাগত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঝুঁকি মোকাবেলা করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কৃষিকে খাপ খেয়ে নিতে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ প্রযুক্তি কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময় উদ্যোগ।

বাড়ির পাশের ডোবায় ভাসমান বেডে চাষ করুন সবজি লেখাটি লিখেছেন গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম। লেখাটি কৃষি বাতায়ন প্রকাশ করেছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ