বিকশিত হচ্ছে পোল্ট্রি শিল্প

এগ্রিকেয়ার প্রতিবেদক: কাঁচামালের ব্যবসা করতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতিতে পরে একেবারেই দিশেহারা হন সাইদুল ইসলাম। এরপর কোনো রকমে ২০০ ব্রয়লার মুরগি নিয়ে পোল্ট্রি ব্যবসায় নেমে পরেন। বছর তিনেক পর ২০০ মুরগির জায়গায় সংখ্যাটি দাঁড়ায় দুই হাজারে।

এরঠিক তিন বছরের মাথায় মুরগির সংখ্যা বৃদ্ধি পায় কয়েকগুণ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি সাইদুল ইসলামকে। দিনদিন ব্যবসার পরিধি শুধু বিস্তৃতিই হচ্ছে। নাটোর জেলার এই খামারি জানান, শুরুতে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। তবে পরিশ্রমের ফলও পেয়েছেন তিনি।

গত কয়েক বছরে সাইদুল ইসলামের মতো হাজার হাজার খামারির ভাগ্যে বদল হয়েছে এই পোল্ট্রির ব্যবসায়। এমনটাই জানালেন সংশ্লিষ্টরা। উদ্যোক্তারা জানালেন, পোল্ট্রির নীরব বিপ্লবের কথা।

প্রাণীসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে পোল্ট্রি মুরগির সংখ্যা ছিল ২০ কোটি ৬৮ লাখ। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ৪৩ লাখে। আর ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে ডিম উৎপাদন ছিল ৫৩৬ কোটি ৯৬ লাখ টি। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে একহাজার ১৯১ কোটিতে।

প্রাণী সম্পদ অধিদফতর সংশ্লিষ্টরা বলেন, পোল্ট্রিতে আমরা দিনের পর দিন উন্নতি করে যাচ্ছি। সরকারি নানা পদক্ষেপ আর বাণিজ্যিক উদ্যোগ এই সফলতা এনে দিয়েছে। এতে একদিকে যেমন পুষ্টির ঘাটতি মিটছে অন্যদিকে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে।

বাংলাদেশ পোল্টি শিল্প সমন্বয় কমিটির (বিপিআইসিসি) আহ্বায়ক মসিউর রহমান জানান, কারিগরি দিক দিয়েও আমরা অনেক এগিয়েছি। বলা যেতে পেরে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। এই সফলতা একদিনে আসে নি। একটা নীরব বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের পোল্ট্রি খাত।

তিনি বলেন, তবে গুরুত্ব অনুযায়ী কিন্তু এখনো এই খাত সেইভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে না বা হয় নি। এছাড়া বিনিয়োগের পরিবেশ আরও গতিশীল করতে হবে। ঠিকমতো মূল্যায়নও জরুরি। কেননা আস্থা না থাকলে বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিবেন।

দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে খুব শিগগিরই রফতানিতে যাবে এই খাত এমনটাই ধারণা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মকর্তাদের। ইতিমধ্যে বিষয়টি বিভিন্নভাবে উপস্থাপনও করেছেন পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এই পোল্ট্রি খাতকে দেশের বৃহৎ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গার্মেন্টসের পরের ধাপ হিসেবে উল্লেখ করে জানান, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় এক শতাংশ আসে পোল্ট্রি শিল্প থেকে। এ খাতে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ জড়িত।

প্রাণীসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, সারাদেশে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার ছোট-বড় পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এর সঙ্গে আছে ব্রিডার ফার্ম, হ্যাচারি, মুরগির খাবার তৈরির কারখানা। পোল্ট্রি শিল্পকে ঘিরে গড়ে উঠছে শিল্প, কাঁচামাল ও ওষুধ প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠান। জাতীয় অর্থনীতিতে পোল্ট্রি শিল্পের অবদান দিনের পর দিন বৃদ্ধিই পাচ্ছে।

একাধিক খামারি ও ব্যবসায়ী জানান, বাজার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হলে এ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়বে। তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা আরও উন্নত করার তাগিদও দেন সংশ্লিষ্টরা।