জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কারো পৌষমাস কারো সর্বনাশ! দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঘের বৃষ্টি শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে গতকাল সকাল সাতটা পর্যন্ত পাঁচ উপজেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৯ মিলিমিটার।

অবশ্য কৃষি বিভাগ বলছে, বৃষ্টির কারণে আমের মুকুল ধুয়ে গেছে। এতে আমের উপকারই হয়েছে ফলে খুশি আম চাষিরা। অপরদিকে বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্ষতির শঙ্কা আছে রবি শস্যে। ডাল, সরিষা, মসুর, আলু ও টমেটোতে সমস্যা হতে পারে। পচে যেতে পারে আলু।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে সালমা এগ্রিকেয়ার২৪.কমকে জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে আমে সেচ দিতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমনিতেও কিছুটা বিপাকে এখানকার আমচাষিরা। আমের হপার পোকা দমনে ও ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধে স্প্রে করতে হয়। আপাতত বৃষ্টির কারণে আমের মুকুলের ক্ষতি হবে না বরং ভালো হয়েছে। তবে, আলুর গাছ তুলে রাখা আলুর সমস্যা হতে পারে। আলুর গায়ে মাটি লেপটে যেতে পারে। বৃষ্টি বৃদ্ধি হলে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

পড়তে পারেন: হটাৎ শিলাবৃষ্টি, ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা পুঠিয়ায়

ফল গবেষণা কেন্দ্রের এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেছেন, এই বৃষ্টিতে আমের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। বরং বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী না হলে সদ্য মুকুল ফুটতে থাকা আমগাছের জন্যই তা ভালো হবে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মাঘ মাসে অসময়ের এই বৃষ্টি ঝরতে পারে আরও দুই দিন। এ তথ্যই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে খেতে রবি শস্য চাষ করা কৃষকদের কপালে। তবে কৃষকদেরই কেউ কেউ বলছেন, এই বৃষ্টি যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে আমচাষিদের কাছে। উপকার হবে গম, ভুট্টা, বোরো বীজতলারও।

পড়তে পারেন: আলুর পাতা মোড়ানো রোগের লক্ষণ ও সমাধান

রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক ও নওগাঁর মান্দা উপজেলার শাহ কৃষিতথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর শাহ কৃষির জন্য নিয়মিত আবহাওয়ার খবর বিশ্লেষণ করে থাকেন। তিনি বলেন, এই বৃষ্টি বোরো চাষিদের কাজে লাগবে। তাদের সেচ খরচটা কমিয়ে দিল। এই বৃষ্টিতে শর্ষে ছাড়া আর কোনো ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী না হলে আমেরও কোনো ক্ষতি হবে না। একই কথা বলেন রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলিম উদ্দিনও।

কুড়িগ্রামে বেশ কিছুদিন ধরেই আলুখেতে ছত্রাকের আক্রমণ দেখা দেয়। কৃষকেরা বলছেন, বৃষ্টির কারণে খেতে ছত্রাকের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি এলাকার কৃষক আফতাব উদ্দিন বলেন, গত কয়েক দিনের টানা শৈত্যপ্রবাহের কারণে আলুখেতে মড়ক লেগেছে। বৃষ্টির কারণে তিনি মড়ক বাড়ার চিন্তায় আছেন।

পড়তে পারেন: মিষ্টি আলুর নতুন জাত ‘অরেঞ্জ স্টার’ চাষ হবে দেশেই

গতকাল ভোর থেকে বৃষ্টির পাশাপাশি প্রচণ্ড বাতাসে জয়পুরহাটে আলুক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বেশির ভাগ আলুক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। কয়েক দিন পরেই ক্ষেত থেকে এই আলু তোলার কথা। কৃষি বিভাগ বলছে, বৃষ্টি থেমে গেলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না।

জেলার ৪৫টি ইটখোলার প্রায় পাঁচ কোটি কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে দুপুর থেকে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হয়। বিকেল নাগাদ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে ঠাণ্ডা বেড়েছে। বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে থাকা সয়াবিন, বাদাম, হেলন ডালসহ শীতকালীন মৌসুমি সবজির বীজতলার ক্ষতি হতে পারে।

কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, বৃষ্টি ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া আলুতে ছত্রাকের আক্রমণের জন্য উপযোগী পরিবেশ। এ কারণে বৃষ্টি থেমে গেলে চাষিদের একসঙ্গে একাধিক ওষুধ স্প্রে করে ছত্রাকের আক্রমণ ঠেকাতে হবে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ