নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের অধিকাংশ দেশের বাজারে চলে এসেছে। তবে দাম ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে সরকার আমদানির সিদ্ধান্ত নিলেও তা কোন কাজে আসেনি। উল্টোদিকে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। ফলে ফের পেঁয়াজের সেঞ্চুরি।

১৪ থেকে ১৭ টাকা কেজির আমদানি করা পেঁয়াজ বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়! খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বলছেন, বাংলাদেশের বাজারব্যবস্থায় সরকারের কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। ফলে আমদানির পরও চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে এ রন্ধন শিল্পের প্রধান অনুসঙ্গ।

সোমবার (২৩ অক্টোবর ২০২৩) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজারসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে দেশীয় জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। সেইসাথে দেশীর তুলনায় ভারত থেকে আমদানি করা নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১৫ টাকা কমে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। আমদানির পরও কেন দাম বাড়তি আছে! এমন প্রশ্নের সদুত্তর কারো কাছেই মিলছেনা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও সরবরাহ ঠিক থাকলে খুববেশি আমদানির প্রয়োজন পড়বে না। এছাড়া ভরা মৌসুম শেষে এপ্রিল মে মাসের দিকে কিছুটা ঘাটতি পড়লে আড়াই থেকে ৩ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাধ্য হয়েই আমদানি করতে হয়। দেশে পেঁয়াজের বর্তমান বার্ষিক চাহিদা যথাক্রমে ২৫-২৭ লাখ মেট্রিক টন। পেঁয়াজের উৎপাদন প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন। সবমিলিয়ে আমদানির হিসেব মেলাতে পারলেও দামের হিসেব কিছুতেই মিলছে না।

কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী হাসান আলী বলেন, পেঁয়াজের দাম এমনিতেই বেশি। আমরা কিনতে পারিনি তাহলে কম দামে কিভাবে বিক্রি করব। পেঁয়াজের দাম সরকার বেঁধে দিলেও সেই দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ একশ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। ভারতের বড় পেঁয়াজ ৯০ টাকা। যেগুলো ছাল উঠে গেছে সেগুলোর একটু দাম কম।

জানা গেছে, আমদানির অনুমতির পর তিনটি বন্দর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে দেড় হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ দেশে ঢুকে। তিন স্থলবন্দরের কাস্টমস স্টেশনের তথ্যে দেখা যায়, প্রতি চালানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১৩ থেকে ১৬ সেন্টে। ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৮ টাকা ১৭ পয়সা ধরে মানভেদে আমদানিমূল্য দাঁড়ায় ১৪ থেকে ১৭ টাকা ৩০ পয়সা। গড়ে দাম পড়ে কেজি প্রতি প্রায় সাড়ে ১৫ টাকা। প্রতি কেজিতে করভার গড়ে সাড়ে ৩ টাকা। এ হিসাবে শুল্ক-করসহ পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ পড়ে প্রায় ১৯ টাকা। আর একই পেঁয়াজ খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে একই পেঁয়াজ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের পেঁয়াজ আমদানির সর্বশেষ ৮ জুনের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ৫ লাখ ৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কাস্টমসের তথ্য বলছে, আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর গত চার দিনে ভারত থেকে ২০ হাজার ৫৭৫ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে।

চাকতাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল গণমাধ্যমকে বলেন, খাতুনগঞ্জে পাইকারিতে ৯০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতির পর থেকে পেঁয়াজের দাম কমেছে। কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। তবে, দেশের অন্যকোনস্থানে কি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে তা আমার জানা নাই।

সম্প্রতি শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বাজেটসংক্রান্ত এক কর্মশালায় বলেছেন, আমি দেখেছি, বাজার করতে গিয়ে অনেকে কাঁদছেন। কারণ, বাজারের যে অবস্থা, তাঁদের পকেটে সে টাকা নেই। এটার একমাত্র কারণ সিন্ডিকেট।’ সিন্ডিকেট নিয়ে কথাবার্তা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, কিন্তু ধরা যাচ্ছিল না।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, মন্ত্রীদের মধ্যেও সিন্ডিকেট আছে। তিনি সিন্ডিকেটধারী মন্ত্রীদের নাম জানালে দেশবাসী উপকৃত হতো এবং বাজারেও উথালপাতাল অবস্থার অবসান হতো।

দেশে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে দাম এত বেশি। আমাদের প্রধান লক্ষ্য কৃষকদের ইন্টারেস্ট। দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ আছে। কৃষকের ঘরেও যথেষ্ট মজুত আছে। পেঁয়াজের দাম এত বেশি হওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।এটা হচ্ছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে। তারা দাম বাড়াচ্ছে।

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ/২০২৩