Exif_JPEG_420

ফিরোজ আলম তানজু, দিনাজপুর প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: দেশের সর্ব উত্তরের জেলা দিনাজপুরের অধিকাংশ মানুষ কৃষি নির্ভরশীল। গত বছর বন্যার কারনে ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এ জেলার কৃষি নির্ভর মানুষদের ব্যাপক লোকসান গুনতে হয়।

বন্যার লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চলতি বোরো চাষাবাদ শুরু করলেও সেই স্বপ্ন ভাঙতে বসেছে গত কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টি ও ফসলি ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমনে।

কদিন আগেই ধান গাছের কচি ডগার বুক ছেদ করে বের হয়ে আসা ধানের শীষ গুলো পরিপূর্ণ যৌবন হয়ে আসছে। ধানের শীষের যৌবনকালে জেলার চিরিরবন্দর, খানসামা, সদর, বিরলসহ বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমিতে আক্রমন করেছে ব্লাস্ট রোগ। ব্লাস্ট রোগের আক্রমনে ধানের শীষের ভেতরে আসা সদ্য দানা ও সবুজ পাতা।

ব্লাস্ট রোগ হতে ফসলি ক্ষেতকে রক্ষা করতে প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করেও ব্যর্থ হচ্ছে কৃষক। এই রোগ থেকে ফসলি জমি রক্ষা করতে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। বর্তমান ফসলি জমির এই পরিস্থিতে সবচেয়ে বিপদের সম্মুখিন এখন বর্গা চাষীরা। ধার-মহাজন করে চাষাবাদ করে বকেয়া পরিশোধ নিয়ে চিন্তিত তারা।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে নিয়মিত সঠিক পরামর্শে পরিচর্যা করলে এই রোগ নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব। অপরদিকে গত কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টিতে ধানের শীষে আসা সদ্য কচি দানাসহ হেলে-ভেঙ্গে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছ।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে দিনাজপুর জেলার ১৩ উপজেলার মোট ১ লাখ ৭৩ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে চাষাবাদ শুরু করে কৃষক। যা পরবর্তীতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়। এবার প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ দশমিক ৭৫ থেকে ৫ মেট্রিক টন ধান।

যা মোট জমির উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় প্রায় ৬ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন ধান। এদিকে আবহাওয়া জনিত কারনে ও ব্লাস্ট রোগ থেকে ফসলি জমি রক্ষার্থে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সকল প্রকার ছুটি বাতিল করে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সকল প্রকার সহযোগীতা করে যাচ্ছে। তবে দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়া ও ব্লাস্ট রোগের আক্রমনে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষকরা।

জেলার বিরল উপজেলার পলাশবাড়ী এলাকার বর্গা চাষী মো. জোবায়দুর রহমান জানান, প্রতি বারের ন্যায় এবারও সে অন্যের ৭ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে চাষ করছে। গত কয়েকদিনের ঝড়-বৃষ্টিতে তার অনেকাংশ জমির ধান শীষসহ গাছ ভেঙ্গে ও হেলে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগের আক্রমন।

রোগ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করতে হচ্ছে। রোগ থেকে বাঁচাতে পরিচর্যার কাজে ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত খরচা। মহাজনদের কাছ থেকে ধারের টাকা দিয়ে চাষাবাদ করেছেন। ধান উৎপাদনে খরচ না উঠলে মহাজনদের ধারের টাকা পরিশোধ করবে কি করে এখন সার্বক্ষনিক এই চিন্তায় করেন তিনি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. তৌহিদুল ইকবাল এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে জানান, ব্লাস্ট একটি ছত্রাক জনিত রোগ। এই রোগটি বৈরী আবহাওয়ায় দ্রুত এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়ায়। চিন্তার কোন কারন নেই সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব।

তবে দ্রুত পরিচর্যা করে রোগাক্রান্ত পাশের জমিকে এই রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের যাবতীয় সহযোগীতা করা হচ্ছে। সুষ্ঠ ভাবে ফসল ঘরে তোলার লক্ষ্যে সকল প্রকার ছুটি বাতিল করে কৃষকের পাশেই আছে কৃষি কর্মকর্তারা।