আন্তর্জাতিক কৃষি ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: প্রতিকূল আবহাওয়া বিরাজ করছে এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া, ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি রয়েছে ।

এর প্রভাব পড়েছে এসব দেশের কৃষি খাতে। লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল গ্রেইন কাউন্সিলের (আইজিসি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রতিকূল আবহাওয়ার জের ধরে ২০১৮-১৯ মৌসুমে বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদন প্রত্যাশার তুলনায় কমতে পারে।

মূলত ২০১৮-১৯ মৌসুমে প্রত্যাশা অনুযায়ী চাল, সয়াবিন ও ভুট্টা উৎপাদন হলেও বড় ধরনের মন্দাভাব দেখা যাবে গম উৎপাদনে। এর জের ধরে বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদন কমতে পারে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর ওয়ার্ল্ড গ্রেইন ডটকম ও এগ্রিমানি।

আইজিসির সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে বৈশ্বিক খাদ্যশস্য উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ২০৫ কোটি ৯০ লাখ টনে, যা প্রতিষ্ঠানটির আগের প্রাক্কলনের তুলনায় ১ কোটি ৮০ লাখ টন কম।

দেড় মাস আগে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, ২০১৮-১৯ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী মোট ২০৭ কোটি ৭০ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের প্রাক্কলন করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৭-১৮ মৌসুম শেষে খাদ্যশস্যের মোট বৈশ্বিক উৎপাদন ২০৯ কোটি ১০ লাখ টন হতে পারে বলে মনে করছে আইজিসি। সে হিসাবে, এক মৌসুমের ব্যবধানে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক উৎপাদন কমতে পারে ৩ কোটি ২০ লাখ টন।

২০১৮-১৯ মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহারেও মন্দাভাবের পূর্বাভাস দিয়েছে আইজিসি। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী খাদ্যশস্যের সম্মিলিত ব্যবহার দাঁড়াতে পারে ২১২ কোটি ৮০ লাখ টনে।

আগের প্রতিবেদনে এ মৌসুমে খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার ২১৩ কোটি ১০ লাখ টন প্রাক্কলন করা হয়েছিল। সে হিসাবে, খাদ্যশস্যের বৈশ্বিক ব্যবহার কমছে ৩০ লাখ টন। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যশস্যের চাহিদা ও সরবরাহে বিদ্যমান ঘাটতি কমে আসতে পারে বলে জানিয়েছে আইজিসি।

গম: আইজিসির সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে গমের বৈশ্বিক উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ৭২ কোটি ১০ লাখ টন। প্রতিষ্ঠাটির আগের প্রাক্কলনে এর পরিমাণ ছিল ৭৩ কোটি ৭০ লাখ টন।

সে হিসাবে, বৈরী আবহাওয়ার জের ধরে ২০১৮-১৯ মৌসুমে গমের বৈশ্বিক উৎপাদন প্রাক্কলন ১ কোটি ৪০ লাখ টন কমিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি ২০১৭-১৮ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী ৭৫ কোটি ৮০ লাখ টন গম উৎপাদন হতে পারে। একই সময় কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক ব্যবহার দাঁড়াতে পারে ৭৩ কোটি ৬০ লাখ টন।

চাল: ২০১৮-১৯ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী ৪৯ কোটি ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইজিসি, যা প্রতিষ্ঠানটির আগের প্রাক্কলনের সমান। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি ২০১৮-১৯ মৌসুম শেষে খাদ্যপণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ৪৮ কোটি ৮০ লাখ টন।

সে হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে চালের বৈশ্বিক উৎপাদন বাড়তে পারে ৩০ লাখ টন। ২০১৮-১৯ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী চালের ব্যবহার চলতি মৌসুমের তুলনায় ৫০ লাখ টন বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টনে। ফলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ার জের ধরে আগামী দিনগুলোয় চালের বাজার চাঙ্গা থাকতে পারে।

ভুট্টা: সব মিলিয়ে ১০৪ কোটি ৪০ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদনের মধ্য দিয়ে ২০১৭-১৮ মৌসুম শেষ হবে বলে মনে করছে আইজিসি। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মৌসুমে কৃষিপণ্যটির উৎপাদন ৮০ লাখ টন বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১০৫ কোটি ২০ লাখ টনে।

আগের প্রতিবেদনে ২০১৮-১৯ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী একই পরিমাণ ভুট্টা উৎপাদনের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। এ সময় কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক   ব্যবহার দাঁড়াতে পারে ১০৯ কোটি ৮০ লাখ টনে, যা আইজিসির আগের প্রাক্কলনের তুলনায় ২০ লাখ টন বেশি।

সয়াবিন: দেড় মাস আগের প্রতিবেদনে সয়াবিনের বৈশ্বিক উৎপাদন ৩৫ কোটি ৮০ লাখ টন প্রাক্কলন করেছিল আইজিসি। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এর পরিমাণ ১০ লাখ টন বাড়িয়ে ৩৫ কোটি ৯০ লাখ টন নির্ধারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৭-১৮ মৌসুম শেষে কৃষিপণ্যটির বৈশ্বিক উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ৩৩ কোটি ৮০ লাখ টনে। এদিকে ২০১৮-১৯ মৌসুমে বিশ্বব্যাপী ৩৫ কোটি ৬০ লাখ টন সয়াবিন ব্যবহার হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইজিসি, যা প্রতিষ্ঠানটির আগের প্রাক্কলনের তুলনায় ২০ লাখ টন কম। সূত্র: বণিক বার্তা।