মো. আব্দুল বাতেন, রাজশাহী  প্রতিনিধি, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কিছু এলাকায় বোরো ধানের সাময়িক সমস্যার সমাধান হয়েছে। এতে কৃষকের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। এখন ধান গাছ সবুজ হওয়ার পাশাপাশি বৃদ্ধিও পাচ্ছে।

কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আগাছানাশক ব্যবহারে হঠাৎ করেই অল্প বিস্তর সমস্যা দেখা দেয় এ অঞ্চলের কিছু বোরো ধানের জমিতে। তবে সব শঙ্কা কেটে যাওয়ায় এখন হাসি ফিরেছে এসব ধান চাষিদের মাঝে।

এগ্রিকেয়ার২৪.কম এর পক্ষ থেকে মঙ্গল (১৩ মার্চ) ও বুধবার (১৪ মার্চ) বোরো ধানের সমস্যায় পরা এলাকাগুলো সরেজমিনে ঘুরে ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র ও তথ্য পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের নামকরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসিআই ফরমুলেশান’স লিমিটেড (ক্রপ কেয়ার অ্যান্ড পাবলিক হেলথ) এর আগাছা নাশক জাম্প পণ্যটি ব্যবহারের পর প্রায় শতাধিক বিঘা জমির ধানগাছগুলো কম বাড়তে থাকে। সেই সাথে ধান গাছের রঙ সবুজ হচ্ছিল না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অবহিত হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেন।

এর ফলশ্রুতিতে তারাতারি সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়। এমন সমস্যায় এসিআই ফরমুলেশান’স লিমিটেড এর কর্মকর্তাদের কাছে পাওয়ার পাশাপাশি সার্বক্ষণিক সেবা ও বিনামূল্যে উপকরণ পাওয়ায় কৃষকের মাঝেও সন্তষ্টি দেখা গেলো।

এ বিষয়ে এসিআই ফরমুলেশান’স লিমিটেড এর বিজনেস ম্যানেজার বিএম সাইফুল্লাহ এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, কৃষকের স্বার্থে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি যুগ যুগ ধরে কাজ করছে। সুতারাং কৃষকের ক্ষতি যেন না হয় এ বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি এবং দেখে থাকি। এটিও কিন্ত একটা উদাহরণ হয়ে গেলো, হঠাৎ করে হালকা সমস্যা দেখা দেয়ার পর আমাদের ঐকান্তিক পরিচর্যা ও পদক্ষেপে কৃষকের সমস্যার সমাধান হয়েছে।

এসিআই ফরমুলেশান’স লিমিটেড এর মার্কেটিং ম্যানেজার মো. আবদুর রহমান এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, দেশের সব অঞ্চলেই এ পণ্যটি ব্যবহার হয়েছে এবং সবাই ভালো ফল পেয়েছেন। অধিকাংশই খুব প্রশংসা করেছেন। শুধু গোদাগাড়ি উপজেলার অল্প কিছু জমিতে এমন হয়েছে। তবে আমরা তা খোঁজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই। উপকরণ, তথ্যসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে এসব সমস্যা কাটানো হয়েছে।

গোদাগাড়ি উপজেলার গোগ্রাম, হুজরাপুর, বিড়ইলসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এসময় আজিজুর, জাহিদুরসহ একাধিক কৃষক এগ্রিকেয়ার২৪.কম বলেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগেও ধানের গাছ গুলোর অবস্থা খুব বেশি ভালো ছিলো না। এসিআই প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ও পরামর্শে আমাদের ধানগাছগুলো প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

জাম্প নামক বালাই নাশক ব্যবহার করার পর হঠাৎ করেই এমন সমস্যা দেখা দেয়। ধানগাছগুলো খুব বেশি বাড়ছিলো না। এছাড়া কেমন যেন দূর্বল মনে হচ্ছিল। সবুজ রঙও হচ্ছিল না। তবে এখন এসব সমস্যা আর নাই।

এ সমস্যার সম্মুখিন হওয়া একাধিক কৃষক জানান, ধান গাছের যে সমস্যা দেখা দিয়েছিলো সেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে। এসিআই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তাদের (কৃষকদের) সমস্যার কথা শুনে তাৎক্ষণিক পাশে এসে দাঁড়ানোর কারণেই দ্রুত আমরা সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। নইলে বড় ধরণের সমস্যায় পরতে হতো।

উপজেলার বিড়ইল গ্রামের ধানচাষি মো. সাইফুল ইসলাম এগ্রিকেয়ার২৪.কম কে বলেন, ধান লাগানোর ৯ দিন পর জাম্প নামের আগাছা নাশক ব্যবহার করি জমিতে। এরপর ধান গাছের অবস্থা কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। অনেকটা হলদে রঙ ধারণ করে এবং ধানের গোছবৃদ্ধি নেয়া বন্ধ ছিলো।

এরপর বিষয়টি এসিআই প্রতিষ্ঠানের উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা জানলে আমাদের  জমিতে এসে পরিদর্শন করেন। এসময়ে প্রতিজনকে বিঘাপ্রতি ১ কেজি করে সালফক্স ও ফ্লোরা দিয়ে জমিতে প্রয়োগ করে পানি দিতে বলেন। এসব উপকরণ ও পদ্ধতি অবলম্বন করে ধানগাছগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় প্রায় ফিরে এসেছে।

গোগ্রামের কৃষক ইসরাইল হক মুন্টু বলেন, ১২ বিঘা জমি বর্গা ও ধারদেনা করে চাষ করছি। যে সমস্যায় পরেছিলাম তা কিছুদিনের মধ্য ভালো হয়ে যাবে, এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এখন ভালো লাগছে। শুরুতেই খুবই হতাশায় পরে গিয়েছিলাম।

বোরো ধান চাষি মো. ফারুক জানান, আগের চাইতে জমির ধান গাছের গোড়ায় থোক বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ধানের যে লালচে ভাব ছিলো তা দূর হয়ে সবুজ হচ্ছে। এখন জমিতে এসে ভালো লাগছে। প্রথমের দিকে মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। স্থানীয় কীটনাশক ডিলার ওবাইদুলও বলেন, এখন ধান গাছের অবস্থা আগের চাইতে ভাল আছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কৃষকদের সমস্যায় পরা ধান গাছগুলো ভালো অবস্থার দিকে যাচ্ছে। শিগশিগরই এ সমস্যা সম্পূর্ণ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।

এসিআই ফরমুলেশান’স লিমিটেড এর রাজশাহী অফিসের টেরিটরি এক্র্যিকিউটিভ অফিসার মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, সমস্যায় পরা কৃষকদের পাশে আমরা সব সময়ই আছি। প্রতিদিন মাঠ মনিটরিং করা হচ্ছে। ধানগাছ গুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে।

এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের দাবি, ধান গাছে ‘জাম্প’ ব্যবহারেই ক্ষতি হয়েছে তা একচেটিয়া ভাবে বলা যাবে না। এ পণ্যটি শুধু গোদাগাড়ীতে নয় সারা দেশেই ব্যবহার হচ্ছে। অন্য কোন জায়গাতে এমন অভিযোগ পাওয়া যায় নি। কীটনাশক ব্যবহারে হয়তো সঠিক মাত্রা ব্যবহার না করার ফলে এমনটি হয়েছে, যা কৃষকরা বলছে না।

এদিকে সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের জমি গুলোতে ডিপটিউবয়েলের পানির সমস্যার কারণে পর্যাপ্ত পানির অভাব বোঝা গেছে। পানির অভাব থাকার কারণে ফলনে প্রভাব পরতে বলেও অনেকেই জানান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতেও একবার অন্য এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পণ্য ব্যবহারে এমন ঘটনা ঘটেছিলো এ এলাকাতেই। অনেকেই দুষছেন মাটির রহস্যকে। কেউ কেউ বলছেন জমির সঠিক মাপ না থাকায় পরিমাণ মতো ব্যবহারে হেরফের হয়েছে।

কেননা এখানকার অধিকাংশ চাষিই বর্গা করে আবাদ করেন। ফলে তাদের জমির মাপটা অনেক সময়ে ঠিক থাকে না। এছাড়া আগাছানাশক ব্যবহারের পর জমিতে পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারণেও এমনটি হতে পারে।