ফসল ডেস্ক, এগ্রিকেয়ার২৪.কম: কৃষিতে তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগায় বেড়েছে উৎপাদন। পরিবর্তন হয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। জমিতে জৈব সারের পরিবর্তে বেড়েছে রাসায়নিক সারের প্রয়োগ। প্রতিটি ফসলেই কমবেশি ব্যবহার হচ্ছে সার। আসুন জেনে নিই বোরো ধান চাষে বিঘাপ্রতি সার প্রয়োগ মাত্রা।

আমাদের চাষি ভাইয়েরা অনলাইনেও জানতে পারেন জমিতে সার প্রয়োগ মাত্রা। www.frs-bd.com লিখে সার্চ দিয়ে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। তাহলে যে কেউ তার জমিতে নির্দিষ্ট ফসলে কাঙ্খিত সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি জানতে পারবেন।

এছাড়া সরকারি কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ নম্বরে বা কৃষক বন্ধু সেবার ৩৩৩১ নম্বরে কল করে, ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার, ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত ফিয়াক সেন্টার কিংবা প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্রে যোগাযোগ করে হাতের কাছে সরাসরি সহযোগিতা পাওয়া যাবে।

আমাদের দেশে সাধারণভাবে ১৫০ দিনের নিচে স্বল্প মেয়াদি জাত যেমন- ব্রি ধান২৮, ব্রি ধান৪৫, ব্রি ধান৭৪, ব্রি ধান৮১, ব্রি ধান ৮৪, ব্রি ধান৮৬, ব্রি ধান৮৮ ব্রি হাইব্রিড ধান৩, ব্রি হাইব্রিড ধান৫ বা বিনা ধান-১০ এবং বিনা ধান-১৮ চাষ করা হয়।

বোরো ধান চাষে বিঘাপ্রতি সার প্রয়োগ মাত্রা:

এসব ধানের ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি অর্থাৎ প্রতি ৩৩ শতকে সারের মাত্রা ইউরিয়া ৩৫ কেজি, টিএসপি বা ডিএপি ১২ কেজি, এমওপি ২০ কেজি, জিপসাম বা গন্ধক ১৫ কেজি, দস্তা (মনোহাইড্রেট) ১.৫ কেজি। ১৫০ দিনের বেশি দীর্ঘমেয়াদি জাত যেমন- ব্রি ধান২৯, ব্রি ধান৫০, ব্রি ধান৫৮ বা ব্রি ধান৬৯, ব্রি ধান৮৯ এর ক্ষেত্রে বিঘাপ্রতি অর্থাৎ প্রতি ৩৩ শতকে সারের মাত্রা ইউরিয়া ৪০ কেজি, টিএসপি বা ডিএপি ১৩ কেজি, এমওপি ২২ কেজি, জিপসাম ১৫ কেজি, দস্তা ১.৫ কেজি। হাওর অঞ্চলের জাতের ক্ষেত্রে প্রতি ৩৩ শতকে সারের মাত্রা ইউরিয়া ২৭ কেজি, টিএসপি বা ডিএপি ১২ কেজি, এমওপি ২২ কেজি, জিপসাম ৮ কেজি, দস্তা ১.৫ কেজি। তবে টিএসপির বদলে ডিএপি সার ব্যবহার করলে বিঘাপ্রতি ৫ কেজি ইউরিয়া সার কম প্রয়োগ করতে হবে।

আরোও পড়ুন: জেনে নিন কোন সারের কী কাজ ও অভাবজনিত লক্ষণ

টিএসপি বা ডিএপি, এমওপি, জিপসাম ও দস্তা সারের পুরোটাই শেষ চাষের সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।

সতর্ক থাকতে হবে দস্তা ও টিএসপি একসাথে না মিশিয়ে পৃথকভাবে প্রয়োগ করতে হবে।

ইউরিয়া সারকে সমান তিন ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করতে হবে।

স্বল্পমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে ১ম কিস্তি চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর, ২য় কিস্তি চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর এবং শেষ কিস্তি কাইচথোড় আসার ৫-৭ দিন আগে।

দীর্ঘমেয়াদি জাতের ক্ষেত্রে ১ম কিস্তি শেষ চাষের সময়, ২য় কিস্তি চারা রোপণের ২০-২৫ দিন পর অর্থাৎ গোছায় কুশি দেখা দিলে এবং শেষ কিস্তি কাইচথোড় আসার ৫-৭ দিন আগে।

সার প্রয়োগ ও পদ্ধতি নিয়ে আরও কিছু পরামর্শ মেনে চলতে হবে:

১. জমিতে পর্যাপ্ত জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। জৈব সারের সাথে রাসায়নিক সার সমন্বয় করে ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় ও ভালো ফলন হয়।

২. জমিতে বছরে একবার হলেও বিঘাপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ কেজি জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।

৩. আমন মৌসুমে যে জমিতে জৈব সার ব্যবহার করা হবে সে জমিতে বোরো মৌসুমে ইউরিয়া সার নির্ধারিত মাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ কম ব্যবহার করতে হবে।

৪. টিএসটি ও এমওপি সার অর্ধেক মাত্রায় ব্যবহার করলেও আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে।

৫. এছাড়া ধান কাটার সময় গাছের গোড়া থেকে ১০-১২ ইঞ্চি ওপরে কেটে নাড়া মাটিতে মিশিয়ে দিলে পটাশ সারের পরিমাণ তিন ভাগের এক ভাগ কম লাগে।

৬. দস্তা বা জিঙ্ক সালফেট সার ফসলচক্রের কোন একটিতে ব্যবহার করলে তা পরবর্তী দুই ফসলের জন্য ব্যবহার না করলেও চলবে। বেলে মাটিতে চার কিস্তিতে ইউরিয়া সার ব্যবহার করাই ভালো।

৭. জমিতে ছিপছিপে পানি থাকা অবস্থায় ইউরিয়া সার সমভাবে ছিটানোর পর হাতড়িয়ে বা নিড়ানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারলে ভালো ফলন আশা করা যায়। তীব্র শীতে ইউরিয়া সার ব্যবহার করা যাবে না। ইউরিয়া সারের অপচয়রোধে এবং ইউরিয়া সারের কার্যকারিতা বাড়াতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করা যেতে পারে। এজন্য এক মৌসুমে প্রতি চারটি গোছার জন্য ২.৭ গ্রাম ওজনের একটি মেগাগুটি প্রয়োগ করতে হবে।

বোরো ধান চাষে বিঘাপ্রতি সার প্রয়োগ মাত্রা শিরোনামে সংবাদের লেখাটি লিখেছেন কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম পিএইচডি ফেলো, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর ও অতিরিক্ত উপপচিালক (এলআর), কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।

 

এগ্রিকেয়ার/এমএইচ